ইন্দোনেশিয়ার বালিতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে বৈঠকের পর বিশ্ব এখন একটু সহজে নিশ্বাস নিতে পারে বলে মনে করেন সিএনএনের স্টিফেন কলিনসন। তিনি এক বিশ্লেষণে এ কথা বলেন।

এর আগে সোমবার (১৪ নভেম্বর) বিকেলে বাইডেন ও শি জিনপিং বৈঠক করেন। বৈঠকে দুই নেতা যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে চলমান বিরোধ কমিয়ে আনতে একমত হন। বাইডেন-শি জিনপিংয়ের মধ্যে তিন ঘণ্টা বৈঠক হয়। বৈঠকের দুটি ফল গুরুত্বপূর্ণ।

সিএনএনের বিশ্লেষণে বলা হয়, বৈঠকের মধ্য দিয়ে বাইডেন ও শি জিনপিং আপাতত দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের উত্তপ্ত অবস্থাকে শীতল করেছেন। তবে একবিংশ শতাব্দীর এই দুই পরাশক্তি এখনো সংঘাতের পথে রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভাষ্যমতে, রাশিয়া অবশ্যই ইউক্রেনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে না-এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন একটি যৌথ অবস্থান নিয়েছে।

দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হলো, জলবায়ু ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে প্রত্যাশিত আলোচনা পুনরায় শুরু করা। বিষয়টি মিসরে চলমান বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের জন্য একটি উৎসাহব্যঞ্জক খবর।

বাইডেন বৈঠকে জোর দিয়ে শি জিনপিংকে বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক কার্যকলাপ রোধে বেইজিংয়ের একটি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। উত্তর কোরিয়ার এই কার্যকলাপ আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য ক্ষতিকর।

এর আগে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী দুই নেতা সাম্প্রতিক মাসগুলোয় এই সমস্যাগুলো নিয়ে একসঙ্গে বসেননি, আলোচনা করেননি। যার পরিপ্রেক্ষিতে ওয়াশিংটন ও বেইজিং যখন পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে, তখন পুরো বিশ্ব কীভাবে ভোগান্তির মুখে পড়ে, তা স্পষ্ট হয়ে যায়।

বাইডেন-শি জিনপিংয়ের বৈঠকের পর উভয় পক্ষ থেকে প্রকাশ্য বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। এই বিবৃতি একটি মৌলিক দিককে নির্দেশ করে। আর তা হলো, উভয় দেশ তাদের মধ্যকার বিরোধের গুরুতর প্রকৃতিকে স্বীকার করে নিয়েছে। এই বিরোধ যাতে সংঘাতে রূপ না নেয়, সে জন্য উভয় দেশ একসঙ্গে কাজ করতে একমত হয়েছে।

এখন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন আরও নিয়মিত আলাপ-আলোচনা পুনরায় শুরুর পথে হাঁটতে যাচ্ছে, যার অংশ হিসেবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন আগামী বছর চীন সফর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

এর আগে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি গত আগস্ট মাসে তাইওয়ান সফর করেন। পেলোসির এই সফর চীনকে ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ করে। তারা তাইওয়ান ঘিরে বড় ধরনের সামরিক মহড়া চালায়। পেলোসির সফরের পর যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের শীর্ষ কর্মকর্তা পর্যায়ের সফর স্থগিত হয়ে যায়।

বৈশ্বিক সংকটকালে উভয় পক্ষের নেতাদের মধ্যে যোগাযোগ চালু থাকাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাইডেন ও শি জিনপিংয়ের মধ্যে যেকোনো ধরনের বোঝাপড়া, পারস্পরিক বিশ্বাস উদ্ভূত সংকটে একটা সমাধান আনতে পারে বলে মনে করেন স্টিফেন কলিনসন।

বাইডেন বহু বছর ধরে শি জিনপিংকে চেনেন। তাই তার সঙ্গে সির যোগাযোগের চ্যানেল চালু থাকা এখন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, শি জিনপিং এখন চীনা রাষ্ট্রের সমার্থক হয়ে উঠেছেন। তিনি চীনের সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী। তার চিন্তাধারা চীনের সরকারি মতাদর্শ হয়ে উঠেছে।

ইউক্রেন ইস্যুতে পশ্চিমাদের সঙ্গে রাশিয়ার অচলাবস্থা যে এতটা বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে গেছে, তার একটি কারণ হলো নেতাদের মধ্যে এ ধরনের যোগাযোগের অভাব।

যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ক নিয়ে কয়েক দশক ধরে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে লিওন প্যানেটার। তিনি মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন। হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ হিসেবে কাজ করেছেন। ছিলেন সিআইএর প্রধানও। বাইডেন-শি জিনপিং বৈঠক শেষে দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে তিনি সতর্ক আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

প্যানেটা সিএনএনের জন কিংকে বলেছেন, দুই দেশের সম্পর্ককে আরও কূটনৈতিক মাধ্যমে ফেরানোর ক্ষেত্রে এই বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ। একে অপরের সঙ্গে বিবাদে জড়ানোর পরিবর্তে সমস্যা মোকাবিলায় সংলাপ শুরুর জন্য এই বৈঠক খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।