×

স্বাস্থ্য

১৫ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি ডায়াবেটিস প্রতিরোধ নীতিমালা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০২২, ০৯:১৯ এএম

১৫ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি ডায়াবেটিস প্রতিরোধ নীতিমালা

ছবি: সংগৃহীত

দেশে ১ কোটি ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। যাদের প্রায় অর্ধেকই নারী। আর ডায়াবেটিস আছে এমন অর্ধেকেরও বেশি মানুষ জানেনই না, তাদের ডায়াবেটিস আছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ১শ জনের মধ্যে ২৬ জন নারীই গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন, যাদের ৬৫ শতাংশই পরবর্তীকালে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন।

আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের (আইডিএফ ডায়াবেটিস এটলাস ২০২১, ১০ম সংস্করণ) তথ্য এমনটাই বলছে।

ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বাড়লেও এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিতে অনেকটাই পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। জাতীয় স্বার্থে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ নীতিমালা প্রণয়নে সংশ্লিষ্টরা বহুবার তাগাদা দিলেও এক যুগেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও তা আজো চূড়ান্ত হয়নি। আইনটি চূড়ান্ত করার কার্যকর কোনো উদ্যোগও নেই।

২০০৬ সালে ইউএন রেজুলেশন ৬১/২২৫ শীর্ষক ঘোষণাপত্রে জাতিসংঘের প্রতিটি সদস্যরাষ্ট্রকে ডায়াবেটিস বিষয়ে জাতীয় নীতিমালা প্রণয়নের তাগিদ দেয়া হয়। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির (বাডাস) পক্ষ থেকে একটি খসড়া নীতিমালা সরকারের কাছে দেয়া হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস ঘোষণার পেছনে বাডাসের বিশাল ভূমিকা রয়েছে। সদস্যরাষ্ট্রগুলোর দায়িত্ব হচ্ছে এ বিষয়টিকে উদ্বুদ্ধ করা। উপযুক্ত নীতিমালা তৈরি করা। বাংলাদেশ নিজে যেহেতু প্রস্তাবক; সেহেতু এদেশের দায়িত্ব অনেক বেশি। সরকার যাতে তাড়াতাড়ি এই নীতিমালা প্রণয়ন করতে পারে- সেজন্য উপযাজক হয়ে বাডাস একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করে।

খসড়াটি এমনভাবে করা হয়, যাতে সরকার দ্রুত সেই নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে পারে। এর জন্য সরকারকে কোনো অর্থ ব্যয় করতে হবে না। কিন্তু এরপরও সেই নীতিমালা আজও আলোর মুখ দেখেনি। এ নীতি প্রণয়নের প্রস্তাব সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে বলে উল্লেখ করলেও এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতির খবর জানা যায়নি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে।

নীতিমালা প্রসঙ্গে বাডাসের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান ভোরের কাগজকে বলেন, ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলিতে বাংলাদেশ একটি ডায়াবেটিস প্রতিরোধ নীতিমালা করার অঙ্গীকার করেছিল। নীতিমালাটি সরকারকে দেয়া হয়েছে- তাও এক যুগের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। কিন্তু কোনো অগ্রগতি নেই। ওভাবেই পড়ে আছে। এই নীতিমালা অনুমোদনের ক্ষেত্রে অদৃশ্য কোনো শক্তি হয়তো বাধা দিচ্ছে।

ব্যবসায়ী শক্তি তো চাইবেই মানুষ ফাস্টফুড খাক। এটি তাদের ব্যবসা। তামাকের ব্যবসা যারা করে তাদের মূল উদ্দেশ্য মানুষের মঙ্গল নয়- তাদের ব্যবসা। যারা ব্যবসাকে প্রাধান্য দেবে তারা তো বাধা হয়ে দাঁড়াবেই। তবে আমি বলব, নীতিমালটি দ্রুত অনুমোদন করা না হলে অঙ্গীকারটি কাগুজে বলে মনে হতে পারে। এই নীতিমালা প্রণীত হলে স্কুল-কলেজসহ প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে ডায়াবেটিস প্রতিরোধী কার্যক্রম জোরালো হবে। আশা করছি সরকার বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখবে। এবং দ্রুতই নীতিমালাটি মন্ত্রিসভায় উঠবে।

অধ্যাপক ডা. আজাদ খান জানান, নীতিমালায় যেসব উদ্যোগ নেয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে সেগুলো হলো- শিশু-কিশোরদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে পাঠ্যপুস্তকে সচেতনতামূলক রচনা বা নিবন্ধ অন্তর্ভুক্ত করা, ফাস্টফুড ও কোমল পানীয়ের গায়ে যাতে খাদ্যমান উল্লেখ থাকে, শহরের রাস্তাগুলো হাঁটার উপযোগী রাখা, এলাকাভিত্তিক ওয়াকিং ক্লাব, সুইমিং ক্লাব, জগিং ক্লাব বা স্পোর্টস ক্লাব গড়ে তোলার ব্যাপারে উৎসাহিত করা, গণমাধ্যমে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান ও স্লোগান প্রচারের ব্যবস্থা করা, হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে রোগীদের স্বাস্থ্যশিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা রাখা প্রভৃতি।

জানা যায়, এই নীতিমালাটি প্রণয়নের দায়িত্ব স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় নাকি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের, তা নিয়ে রশি টানাটানির মধ্যে ঝুলে আছে নীতিমালাটি। এই প্রেক্ষাপটে ‘আগামীতে নিজেকে সুরক্ষায় ডায়াবেটিসকে জানুন’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ ১৪ নভেম্বর পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা বাণী দিয়েছেন।

বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি দেশব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ও দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

দিবসটি উপলক্ষে সোমবার দুপুরে রাজধানীর ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল (বারডেম হাসপাতাল) অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ডায়াবেটিস ৭০ শতাংশই প্রতিরোধযোগ্য, ফলে এখনই যদি এ রোগের প্রতিরোধ না করা হয়, তাহলে এই সংখ্যা ২০৪৫ সাল নাগাদ প্রায় ৭৮ কোটিতে পৌঁছানোর আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায়, যাদের ডায়াবেটিস আছে, তাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়ে সচেতন করা এবং যাদের এখনো ডায়াবেটিস হয়নি তাদের ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সচেতন করার ক্ষেত্রেই জোর দেন চিকিৎসকরা।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান, সমিতির মহাসচিব মো. সাইফ উদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App