×

খেলা

সোনালি সময়ে ইংল্যান্ড

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০২২, ১০:৫৮ এএম

সোনালি সময়ে ইংল্যান্ড

ছবি: সংগৃহীত

লন্ডনের বাকিংহাম প্যালেস প্রস্তুত হচ্ছে ট্রফি বরণে। এক যুগ পর এবার সে ফিরছে রাজার রাজত্বে।এর আগেও ২০১০ সালে টি২০ বিশ্বকাপ ট্রফি প্রথম গিয়েছিল রানীর বাড়ি।  ৩০ বছর আগে যে মেলবোর্নে ইংলিশদের হৃদয় ভেঙে শিরোপা জিতেছিলেন ইমরান খান, সেই মাঠেই যেন বদলা নিল গ্রাহাম গুচের উত্তরসূরিরা। এবার কাঁদল পাকিস্তানিরা। যে শিরোপা এক বছর আগে দুবাই থেকে মেলবোর্নে নিয়ে এসেছিল অস্ট্রেলিয়া। মেলবোর্ন থেকে টি২০ শিরোপা নিয়ে যাচ্ছেন ইংল্যান্ড।

ফাইনালে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে টি২০ বিশ্বকাপের শিরোপা পুনরুদ্ধার করে ইংল্যান্ড। ২০১০ সালে কলিংউডের নেতৃত্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। আইসিসির টুর্নামেন্টে যেটি ছিল ইংল্যান্ডের প্রথম শিরোপা। সেই থেকে বিশ্বকাপ মঞ্চে ইংল্যান্ডের উত্থান। অধরা ওয়ানডে বিশ্বকাপও জিতেছে ২০১৯ সালে। এ নিয়ে দুই সংস্করণেই চ্যাম্পিয়ন এখন ইংল্যান্ড। তাদের শোকেসে এখন তিন তিনটি বিশ্বকাপ শিরোপা (২০১০, ২০১৯ আর ২০২২)। সোনালি সময় কাটছে এখন ইংলিশ ক্রিকেটে।

মেলবোর্ন ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাটলাররা ফাইনাল ম্যাচ শুরুর আগে গেয়েছিলেন- 'গড সেভ দ্য কিং'। ঈশ্বর খুশি, বেন স্টোকস আর স্যাম কারেনের হাত দিয়েই যেন ইংল্যান্ডের রাজার জন্য উপহার দিলেন এই বিশ্বকাপ ট্রফিটি!

বিশ্বকাপ শুরুর আগেই ক্রিকেটের পণ্ডিতদের ভবিষ্যদ্বাণীতে ইংল্যান্ড ছিল চ্যাম্পিয়নের তালিকার শীর্ষে। ২৯ দিনের অভিযান শেষে তা সত্যিও হলো। বিশ্ব গণমাধ্যমে শিরোনাম হলো টি২০ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে পাকিস্তানের বিপক্ষে সুন্দর ক্রিকেট খেলে শিরোপা জেতে তারা!

ফাইনাল ম্যাচে ইংল্যান্ড ১৩৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করে ম্যাচ জেতে ৬ বল হাতে রেখে। ১৯তম ওভারের শেষ বলটি মিড উইকেটে ঠেলে দিয়ে উইনিং রান নিতে দৌড়ে প্রান্ত বদল করেন বেন স্টোকস ও লিভিংস্টোন। স্টোকস মাঝ উইকেটে পৌঁছেই ডানা মেলেন। নন স্ট্রাইক ব্যাটসম্যান লিভিংস্টোন পপিং ক্রিজে ব্যাট ছুঁইয়ে উল্টো দৌড়ে গিয়ে স্টোককে বুকে জড়ান। ডাগআউট থেকে ভোঁ দৌড়ে ইংলিশ ক্রিকেটাররা ততক্ষণে মাঠের ভেতরে। রংহীন রং ছিটানো বিজয় উদযাপনের শুরু তখন থেকেই। মার্জিত এবং রোমাঞ্চের ছড়াছড়ি ছিল তাতে। মেলবোর্নের বিশাল জায়ান্ট স্ট্ক্রিনে লেখা হয় অভিবাদন চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড।

পাকিস্তানি বাবর আজম, রিজওয়ানদের খোলস ছেড়ে বের হতে দেননি মুহূর্তের জন্য। ফাইনালের চাপে ভেঙে পড়ে দলটির ব্যাটিং লাইনআপ। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে। সেমিফাইনাল ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঝোড়ো ইনিংস খেলা বাবর-রিজওয়ানদের দেখা গেল না। মোহাম্মদ হারিসেরও ক্যামিও ইনিংস খেলা হয়নি। যে কারণে ফাইনালের মতো হাইভোল্টেজ ম্যাচটি হয়ে গেল লো স্কোরিং। পাকিস্তানের ওপেনিং জুটি ভাঙে পঞ্চম ওভারের দ্বিতীয় বলে। ১৪ বলে ১৫ রান নিয়ে সাজঘরে ফেরেন রিজওয়ান।

পাকিস্তানের পাওয়ার প্লে শেষ হয় এক উইকেটে ৩৯ রানে। হারিস উইকেটে এসে থিতু হওয়ার সময়টুকুও পাননি। ১২ বলে ৮ রান করে আদিল রশিদের শিকার হন তিনি। অধিনায়ক বাবর আজমকে ৩২ রানে ফিরিয়ে রশিদ পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ের কোমর ভেঙে দেন। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়ায় রানরেট বাড়াতে পারছিল না পাকিস্তান। স্যাম কুরান, আদিল রশিদ, বেন স্টোকস, ক্রিস জর্ডানদের সমন্বিত বোলিং আক্রমণে ৮ উইকেটে ১৩৮ রান করতে পারে পাকিস্তান। বোলিং লাইনআপ ভালো হওয়ায় ছোট পুঁজি নিয়েও লড়াই জমিয়ে তোলে পাকিস্তান।

শাহিন শাহ আফ্রিদি ওপেনিং ওভারেই ব্রেকথ্রো দেন অ্যালেক্স হেলসকে সাজঘরে পাঠিয়ে। ১৭ বলে ২৬ রানে থাকা বাটলারকে ফেরান হারিস রৌফ। ইংল্যান্ড ৪৫ রানে তিন উইকেট হারিয়ে ফেলায় পাকিস্তান শিবিরে উত্তাপ ফেরে কিছুটা। পাওয়ার প্লেতে তিন উইকেট হারিয়ে ৪৯ রান ছিল ইংলিশদের। বিপর্যস্ত ব্যাটিং মেরামত করার কাজে হাত দেন বেন স্কোকস। ইটের পর ইট সাজিয়ে ইমরাত গড়ার মতো বেন গড়ে তোলেন ইনিংস। ম্যাচ শেষ করেন ৫০ ছোঁয়া ইনিংস খেলে। ৪৯ বলে ৫২ রানে অপরাজিত তিনি।

মিডলঅর্ডার এ ব্যাটারের ব্যাট থেকেই এসেছে উইনিং রান। ইংল্যান্ডের স্বর্ণালি সময়ের ক্রিকেটার বেন। চার বছরে দুটি বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেলেন তিনি। ওয়ানডের মতো টি২০ বিশ্বকাপের ফাইনালেও পাদপ্রদীপের সব আলো কেড়ে নিলেন বেন। ম্যাচসেরার পুরস্কার না পেলেও শিরোপা জয়ের নায়ক তিনি। ফাইনালের সেরা ক্রিকেটার পেসার স্যাম কুরান। দুর্দান্ত বোলিং করে টুর্নামেন্টেরও সেরা তিনি।

ফাইনালের আগের সংবাদ সম্মেলনে জশ বাটলার বলেছিলন, সেমির ছন্দ ধরে রেখে ফাইনাল জিততে চান। সে পরিকল্পনামতোই খেলে টুর্নামেন্টের সফল সমাপ্তি টানলেন তারা। পাকিস্তানকে ৩০ বছর আগের পুনরাবৃত্তি করতে না দিয়ে মেলবোর্ন থেকে টি২০ শিরোপা নিয়ে যাচ্ছেন দেশে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App