×

জাতীয়

ফারদিন হত্যা: চনপাড়া তদন্ত বৃত্ত থেকে সরে এল ডিবি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০২২, ০৯:০১ এএম

ফারদিন হত্যা: চনপাড়া তদন্ত বৃত্ত থেকে সরে এল ডিবি

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ হত্যা মামলা তদন্তে গতি আনতে পারিপার্শ্বিক অন্য বিষয়গুলোর দিকে আরো নজরদারি বাড়িয়েছে তদন্ত সংস্থা ডিবি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে চনপাড়া মাদক সংশ্লিষ্টতা কেন্দ্রিক তদন্ত বৃত্ত থেকে অনেকটা সরে এসেছে তারা। এখন রামপুরায় বান্ধবী বুশরাকে নামিয়ে দেয়ার পর এলেই কী ঘটেছে তার একটি ধারাক্রম মিলাতে কাজ করছে তারা। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা এর জন্য প্রায় ৫০০ সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করেছে। তবে এখনো তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। সিসিটিভি ফুটেজ ফরেনসিক এখনো চলমান রয়েছে। এদিকে, ফারদিন হত্যা মামলার অন্যতম অভিযুক্ত রিমান্ডে থাকা তার বান্ধবী বুশরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে এ ঘটনার সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা মেলেনি এখন,। দুজনের মধ্যে কোনো প্রেমের সম্পর্কও ছিল না। বুশরার অন্য বয়ফ্রেন্ড রয়েছে। পড়াশোনা আর বিতর্ক কেন্দ্রিক বিষয়কে ঘিরে তাদের দুজনের বেশি আলোচনা হতো।এছাড়াও সর্বশেষ ফারদিনের সঙ্গে চ্যাটে থাকা মমো নামের বান্ধবীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ডিবি। তবে জিজ্ঞাসাবাদে এ ঘটনার সঙ্গে তারও কোনো সম্পৃক্ততা পায়নি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। ফারদিন হত্যা মামলা তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মাদক ও চনপাড়া সংশ্লিষ্ট উল্লেখযোগ্য তেমন কিছু না মেলায় রামপুরায় বান্ধবীকে নামিয়ে দিয়ে জীবন্ত ফারদিন কীভাবে লাশ হলো তার ধারাক্রম মেলানো জরুরি। এর জন্যই তারা এখন কাজ করছেন। ফারদিনের বাবা নূর উদ্দিন রানা এ প্রতিবেদককে জানান, মামলার বিষয়ে কোনো তথ্য তদন্ত সংশ্লিষ্টরা এখন তাকে জানাননি। তবে মাদকে জড়িয়ে তার ছেলের বিষয়ে যা চাওর হয়েছে তা ভিত্তিহীন বলে এখন উঠে আসছে। তার দাবি- চনপাড়া কেন্দ্রিক তার ছেলের মাদকের বিষয়টি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা স্পষ্ট করতে পারেনি। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানিয়েছেন, এখনো এ ঘটনায় কংক্রিট কিছু পাওয়া যায়নি। তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এদিকে, ফারদিন হত্যা মামলার ছায়া তদন্ত করছে র‌্যাব। চনপাড়া বিষয়টি আলোচনায় আসায় সেখানে মাদক সংশ্লিষ্ট রায়হান, মনির, উজ্জল ও শাহজামাল নামে ৪ জনকে তারা আটক করেছে বলে জানা গেছে। তবে বিষয়টি অস্বীকার করে র‌্যাব লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন ভোরের কাগজকে বলেন, ফারদিন এলে কীভাবে মারা গেল বা তার মরদেহ নদীতে পাওয়া গেল তা এখনো জানা যায়নি। তবে মেধাবী এ শিক্ষার্থীর মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে আমরা ছায়া তদন্ত করছি। তদন্তের প্রয়োজনে অনেককে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি। এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি। একটি সূত্রে জানা গেছে, চনপাড়া মাদক ও অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত মাল্টা মনির, কাইল্লা রনি, পলাশ, সোহাগ, শাহীন ও ফেন্সি রুবেলের নাম উঠে আসায় তাদের বিষয়েও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নজরদারি বাড়িয়েছে। এদিকে সোমবার সকালে ফারদিন হত্যার বিচার ও সঠিক তদন্তের দাবিতে ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারে বুয়েট শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন করার কথা রয়েছে। প্রসঙ্গত, তিন দিন নিখোঁজ থাকার পর গত ৭ নভেম্বর বিকালে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিনের মরদেহ উদ্ধার করে নৌপুলিশ। মরদেহ ময়নাতদন্তের পর চিকিৎসকরা জানান, তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে, তাকে হত্যা করা হয়েছে। ৪ নভেম্বর রাতে নিখোঁজ হওয়ার আগে রামপুরায় বান্ধবি বুশরাকে বাসায় নামিয়ে দেন ফারদিন। এরপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। নারায়ণগঞ্জ সদর জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) শেখ ফরহাদ বলেছিলেন, ময়নাতদন্তে আমরা দেখতে পেয়েছি, তার মাথায় এবং বুকে আঘাতের চিহ্ন। তবে সেই আঘাত কোনো ধারাল অস্ত্রের নয়। আঘাতের চিহ্ন দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে এটি হত্যাকাণ্ড। পুলিশের চাহিদা ও অধিকতর তথ্যের জন্য তথ্য-উপাত্ত ও আলামত মহাখালী ভিসিআরে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে প্রতিবেদন পেলে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাবে তাকে কীভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় ৯ নভেম্বর রাতে ফারদিনের বাবা নূর উদ্দিন রানা তার বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরাকে এজাহারনামীয় ও আরো কয়েকজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করেন। মামলার অভিযোগে তিনি বলেন, বুশরার ইন্ধনে পরশকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া পরশ নিখোঁজ হওয়ার দিন বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত বুশরার সঙ্গে ছিল। এরপর ১০ নভেম্বর সকালে রাজধানীর রামপুরা এলাকার একটি বাসা থেকে আমাতুল্লাহ বুশরাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওইদিনই তাকে আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের আদালত তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এছাড়াও আদালত মামলাটি তদন্ত কার্যক্রম শেষ করে আগামী ১২ ডিসেম্বর প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App