×

মুক্তচিন্তা

দেশি সংস্কৃতি রক্ষা করতে হবে

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০২২, ০১:৫২ এএম

বিনোদন বলতে আমরা বুঝি আনন্দ কিংবা মনোরঞ্জন। আর এই বিনোদনের একটি সংস্কৃতি আছে। আছে এক ঐতিহ্য। কিন্তু বর্তমান সময়ের বিনোদন এমন এক পর্যায়ে এসেছে, যা আমাদের সংস্কৃতিকে ভূলুণ্ঠিত করে তুলছে। বলতে গেলে আজ আমরা আমাদের বিনোদনের রুচিটাই পাল্টে ফেলেছি। আমাদের বিনোদন এখন মোবাইলনির্ভর হয়ে উঠেছে। আরো সহজভাবে বলতে গেলে, ফেসবুক-ইউটিউবনির্ভর। আমরা এখন অনলাইনে বিনোদন নিই এবং দিই। আজকাল টেলিভিশনও দেখে না আমাদের তরুণরা। কারণ টেলিভিশনে আমাদের সংস্কৃতি নিয়ে বিনোদনের অনুষ্ঠান হয়। যা আমাদের ভালো লাগে না। আমাদের ভালো লাগে ইউটিউব, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম। আমরা ফেসবুকে নোংরা এবং অসামাজিক বিষয় থেকে এখন বিনোদন নিচ্ছি। ফেসবুকে এখন যে পরিমাণ অসামাজিক ভিডিও-ছবি শেয়ার হয় তা রীতিমতো অসভ্যতার পর্যায়ে পড়ে। আমাদের তরুণ প্রজন্ম এখন সেসব দিকেই ঝুঁকছে। আমরা যেসব বিষয় থেকে বিনোদন নিচ্ছি তা থেকে আমাদের ভালো কিছু শেখার না থাকলে মন্দ অনেক কিছুই শেখার আছে। এখন ফেসবুকে, ইউটিউবে হাতের মুঠোয় পাশ্চাত্যের গান, সিনেমা, সিরিজ দেখা যাচ্ছে। আমরা আমাদের পছন্দের গান শেয়ার করলেও সেসব গানই শেয়ার করি। বাংলা গান, বাংলা সিনেমা, বাংলা কোনো কিছুই আমাদের ভালো লাগে না। আমরা আজ এসব বিষয়ের জন্য ভুলে যাচ্ছি আমাদের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য। শুধু তা-ই নয়, আমরা অফলাইনের বিনোদন এখন হারিয়ে ফেলছি। মঞ্চ নাটক দেখা, লোকগান শোনা, নজরুল সংগীত, রবীন্দ্র সংগীতসহ অনেক কিছুই আমরা এখন মুছে ফেলছি আমাদের জীবন থেকে। আমরা হয়তো জানি না আমাদের সংস্কৃতির মূল রূপটি আছে লোকগানে। কিন্তু অবাক করা বিষয় হচ্ছে আমাদের কাছে এখন দেশীয় সংস্কৃতির চেয়ে বিদেশি সংস্কৃতি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এখনকার তরুণদের নজরুল সংগীত, রবীন্দ্র সংগীত, লোকগান সম্পর্কে কিছু বলতে বললে কিছুই বলতে পারবে না। আমাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে চাইলেও সঠিক সংস্কৃতি নিয়ে বলতে পারবে এমন তরুণ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। অথচ আমাদের তরুণরা যদি এভাবে আমাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে না জানে তাহলে পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের সংস্কৃতি খুঁজে পাবে কিনা তাও সন্দেহ। সেই সঙ্গে সংস্কৃতির নামে অপসংস্কৃতির চর্চা হবে। আজকাল আমাদের ডিভাইসগুলোতে হিন্দি এবং ইংরেজি সিনেমার রাজত্ব চলছে। ভিন্ন সংস্কৃতির কন্টেন্ট দেখা ও শোনা নিয়ে আমার তেমন আপত্তি নেই। আপত্তি তখনই যখন নিজ দেশের ভালো কাজকে আমরা উৎসাহ না দিয়ে ভিন্ন সংস্কৃতির কাজগুলো নিয়ে মেতে থাকি। বুকে হাত দিয়ে আমরা ক’জন বলতে পারব যে আমরা টেলিভিশন দেখলেও বাংলাদেশি চ্যানেল দেখি! মূলত আমরা ভারতীয় চ্যানেল ছাড়া কিছুই দেখি না। এটা লজ্জার হলেও সত্য। আমাদের রুচির এখন পরিবর্তন হয়ে গেছে। আর এই রুচি পরিবর্তন করতে হবে আমাদের নিজেদেরই। নয়তো অদূর ভবিষ্যতে আমরা হারিয়ে ফেলব আমাদের সংস্কৃতি এবং আমাদের নিজস্ব বিনোদন। অপসংস্কৃতিই হয়ে উঠবে আমাদের বিনোদন। আমরা শুধু বিনোদিত হলে তো হবে না, আমাদের বুঝতে হবে এই বিনোদন থেকে আমরা কী শিখতে পারব। বিনোদন মানে শুধু আনন্দ নয়, বিনোদন মানে আনন্দের মাঝে জ্ঞান আহরণ করা। আমরা যদি ভালো কিছু থেকে বিনোদন নিতে পারি তবে কেন আমরা নোংরা বিষয় থেকে বিনোদন নিতে যাব? তাই আমাদের সংস্কৃতি ঠিক রেখে বিনোদন নিতে হবে সবার। সংস্কৃতির অপচর্চা করে বিনোদন নেয়া কখনোই ভালো কাজ নয়। আমার দেশের সংস্কৃতি আমার জন্য গর্ব। এই সংস্কৃতি আমাদের লালন করতে হবে। এই কথাটি মাথায় রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রেখে আমাদের বিনোদন নিতে হবে। এজন্য প্রয়োজন আমাদের সচেতনতা। সম্মিলিত সচেতনতাই পারে আমাদের সংস্কৃতি এবং বিনোদনকে টিকিয়ে রাখতে। তাই আসুন আমরা আমাদের সংস্কৃতি রক্ষা করি এবং সুস্থ বিনোদনে অভ্যস্ত হয়ে উঠি। আজহার মাহমুদ খুলশী, চট্টগ্রাম। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App