×

সম্পাদকীয়

এই সিন্ডিকেট ভাঙুন

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০২২, ০১:৫৩ এএম

গতকাল ভোরের কাগজে প্রকাশিত একটি সংবাদে প্রকাশ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীদের জন্য সরকার থেকে সরবরাহ ওষুধসহ বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি, সুতা, গজ বাইরে পাচার করে দিচ্ছে একটি সিন্ডিকেট। হাসপাতাল থেকে লাখ লাখ টাকার ওষুধ বাইরে পাচার করে দিচ্ছে এই সিন্ডিকেট চক্রটি। সিন্ডিকেটের সদস্যরা হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারী। সিন্ডিকেটের গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যায়। কিন্তু মাঝেমধ্যে ধরা পড়ে চুনোপুঁটিরা। যারা ধরা পড়ে তাদের বিরুদ্ধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে, কিন্তু তদন্তের আলোর মুখ আর দেখে না। হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। এমনিতেই মেয়াদোত্তীর্ণ, নকল-ভেজাল ওষুধের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে জনস্বাস্থ্য। আর ওষুধ পাচারের ঘটনাও নতুন নয়। বিষয়টি উদ্বেগজনক। দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোয় ওষুধ ও খাবার চুরি, অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসা, রোগীর দালালি, অবৈধ ঠিকাদারিসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না। মূলত বিভিন্ন ব্যক্তি, দল ও সংগঠনের ছত্রছায়ায় সংঘটিত অনিয়ম ও অরাজকতার সঙ্গে হাসপাতালের লোকজন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান জড়িত থাকে। অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হলে দেশের কোনো হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এ ধরনের ঘটনা ঘটত না। মানসম্পন্ন ওষুধ যেমন মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে, তেমনি মানহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ স্বাস্থ্যহানি এমনকি জীবননাশের কারণও হতে পারে। কাজেই ওষুধের মান সংরক্ষণ অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অন্য খাদ্যপণ্যের মতো ওষুধের গুণমান ভোক্তাদের নিজেদের পক্ষে যাচাই করা সম্ভব হয় না। এ কাজটির জন্য অপরিহার্য হলো প্রাতিষ্ঠানিক তদারকি। উদ্বেগজনক ব্যাপার হলো- মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রোধে আমাদের দেশে প্রাতিষ্ঠানিক তৎপরতা অপর্যাপ্ত। মাঝেমধ্যে আমরা অভিযান দেখি। এসব তৎপরতা বাজারে কোনো প্রভাব ফেলতে পারছে না। এ খাতে দুর্নীতি, আইন প্রয়োগের শৈথিল্য, প্রশাসনের নজরদারির অভাব, দুর্বল বিচার ব্যবস্থা, প্রযুক্তিগত অসমর্থতা, দক্ষ-প্রশিক্ষিত জনবলের অভাব ভেজাল ওষুধ বাজারজাত রোধ করতে না পারার প্রধান কারণ। অন্যদিকে আইনে এ সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তি কম হওয়াও বড় কারণ। ওষুধের বাজার ভেজালমুক্ত করা খুবই জরুরি। এর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিশেষভাবে তৎপর হওয়া দরকার। ওষুধের কারখানা ও বাজার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা জোরদার করা, আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা, প্রয়োজনে আইন কঠোর করার উদ্যোগ নিতে হবে। ওষুধ প্রশাসনের তৎপরতায় দুর্নীতি, শিথিলতা রাখা যাবে না। মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও দরিদ্র মানুষের অসুখে-বিসুখে দেশের সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোই ভরসা। এসব প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসক-নার্সসহ অন্যদের আচার-ব্যবহার ও সেবা প্রদানে যেমন যথেষ্ট আন্তরিকতা থাকা প্রয়োজন, তেমনি চিকিৎসা-সহায়ক উপকরণ এবং সাজসরঞ্জামের প্রাপ্যতাও নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি হাসপাতালের ওষুধ বাইরে বিক্রি, নকল-মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ উৎপাদক-বিক্রেতাদের সিন্ডিকেট ভাঙতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার সরকারের। এই চক্র যত ক্ষমতাবানই হোক তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App