×

জাতীয়

সিএমএসএমই পুনরুদ্ধারে ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কীম জরুরি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২২, ০৬:১৩ পিএম

সিএমএসএমই পুনরুদ্ধারে ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কীম জরুরি

শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি আয়োজিত সিএমএসএমইদের অর্থায়নে প্রতিবন্ধকতা এবং সম্ভবনা শীর্ষক কর্মশালায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্ণর আবু ফারাহ মো. নাসের। ছবি: ভোরের কাগজ।

ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কীমের আওতায়, বাংলাদেশ ব্যাংক ২০০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করলেও এখন পর্যন্ত সেখান থেকে বিতরণ হয়েছে মাত্র ১৯২ কোটি টাকা, যা অত্যন্ত হতাশাজনক বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্ণর আবু ফারাহ মো. নাসের।

শনিবার (১২ নভেম্বর) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত সিএমএসএমইদের অর্থায়নে প্রতিবন্ধকতা এবং সম্ভবনা শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেন। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

কর্মশালার উদ্বোধনী বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, উদ্যোক্তা উন্নয়ন, বড় শিল্পখাতকে সহযোগিতা প্রদান এবং সার্বিকভাবে অর্থনীতির চাকাকে সচল করতে এসএমই খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, যদিও আর্থিক এবং নীতি সহয়তার অভাবে এখাতের দক্ষতা ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

তিনি উল্লেখ করেন, আর্থিক খতিয়ান এবং প্রয়োজনীয় ব্যবসায়িক নথিপত্রের ব্যবস্থাপনার অভাবে দেশের সিএমএস খাতের উদ্যোক্তাবৃন্ধ প্রায়শ:ই ব্যাংকের ঋণ সহায়তা প্রাপ্তি হতে বঞ্চিত হয়ে থাকেন, এমতাবস্থায় তাদের প্রযুক্তিগত, কারিগরী ও আর্থিক সহায়তা একান্ত জরুরী। তিনি জানান, সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য দেশের সনামধন্য ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ প্রাপ্তির তথ্যসমূহের সন্নিবেশনের মাধ্যমে ঢাকা চেম্বার সিএমএসএমই ঋণ প্রাপ্তির পদ্ধতি শীর্ষক একটি বই প্রকাশ করেছে, যেটি এখাতের উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রাপ্তির প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবগত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্ণর আবু ফারাহ মো. নাসের বলেন, কোভিড মহামারী পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আরোপতি নানাবিধ অরোধের কারণে গোটা পৃথিবীর সাপ্লাইচেইন ব্যবস্থাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে, যার প্রভাব পড়েছে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে। তিনি জানান, ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কীমের আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংক ২০০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করলেও আজ পর্যন্ত সেখান থেকে বিতরণ হয়েছে মাত্র ১৯২ কোটি টাকা, যা অত্যন্ত হতাশাজনক, তবে ঋণ প্রাপ্তির এ হার বৃদ্ধিতে ব্যাংকগুলোকে আরো সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি এখাতের উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম আরো প্রতিষ্ঠানিকীকরণ করার উপর জোরারোপ করেন। ডেপুটি গভর্ণর আরো বলেন, ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বর্তমানে সেবা এবং উৎপাদনশীল খাতকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হচেছ, যার ফলে পণ্যের উৎপাদন হ্রাসের মাধ্যমে পণ্যের দাম কমে আসবে এবং বেশি হারে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, এসএমই খাতে অর্থায়ন বৃদ্ধিতে ব্যাংকসমূহের এজেন্ট ব্যাংকিং-এর চেয়ে উপ-শাখা কার্যক্রম আরো সম্প্রসারণে জোর দেওয়া হচ্ছে, যার ফলে ব্যাংকগুলোর প্রশাসনিক ব্যয় নির্বাহের পরিমাণ হ্রাস পাবে। এছাড়াও ঋণ প্রাপ্তির প্রচলিত ব্যবস্থার বাইরে অনলাইন মার্কেট প্লেস এবং ব্লক চেইন কার্যক্রমের উপর বেশি হারে মনোনিবেশের জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ১৯টি ক্লাস্টারকে নির্বাচন করে দিয়েছে এবং দেশের ব্যাংক এবং নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে উক্ত ক্লাস্টার ভুক্ত সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রদানে এগিয়ে আসার উপর জোরারোপ করেন। তিনি জানান, দেশের সিএমএসমএমই খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য একটি ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিকল্পনা করেছে।

কর্মশালায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক (এসএমইএসপিডি) মো. জাকের হোসেইন এবং এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক মো. নাজিম হাসান সাত্তার পৃথকভাবে দুটি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক মো. জাকের হোসেইন বলেন, বর্তমানে আমাদের জিডিপিতে সিএমএসএমই খাতের অবদান ২৫% এবং ২০২৪ ও ২০২৭ সালে এটি যথাক্রমে ৩২% ও ৪০% উন্নীতকরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তাই এখাতের উন্নয়নে সকলের অংশগ্রহণের কোন বিকল্প নেই। এখাতের কোন উদ্যোক্তা যদি প্রয়োজনীয় নথিপত্র সমেত ঋণ আবেদন করলে, ঋণ মঞ্জুরে ব্যাংকসমূহের পিছপা হওয়ার কোন সুযোগ নেই বলে, তিনি মত প্রকাশ করেন।

এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক মো. নাজিম হাসান সাত্তার বলেন, বিবিএস ইকোনোমিক সার্ভে ২০১৩ অনুযায়ী দেশে সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তার সংখ্যা ৭.৮ মিলিয়ন, যার মধ্যে প্রায় ৬০শতাংই ঋণ প্রাপ্তির সুবিধা হতে বঞ্চিত, এখাতের উদ্যোক্তাদের আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তি নিশ্চিতকল্পে ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রচলিত ধ্যাণ-ধারণার মানসিকতা পরিহার করতে হবে। এছাড়াও দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা এসএমই উদ্যোক্তাদের আর্থিক সক্ষমতা শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আহরণের মাত্রা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে, তিনি মত প্রকাশ করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App