×

জাতীয়

ডেটলাইন ১০ ডিসেম্বর

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২২, ০৮:৫১ এএম

ডেটলাইন ১০ ডিসেম্বর

ছবি: ভোরের কাগজ

যা বললেন নেতারা > বড় গণজমায়েতই টার্গেট

ঢাকায় ডিসেম্বরের ১০ তারিখে বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে উত্তাপ ছড়াচ্ছে রাজনীতিতে। জনমনেও কৌতূহলের শেষ নেই। ‘সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যোগ দেবেন। এর পরদিন ১১ ডিসেম্বর তারেক রহমান দেশে ফিরবেন’- এমন কথাও বলছেন দলটির মধ্যম সারির নেতারা। তবে এসব অর্বাচীন বক্তব্য উড়িয়ে দিয়ে সিনিয়র নেতারা বলছেন, ডেডলাইন দিয়ে আন্দোলন হয় না। তাদের টার্গেট, সেদিন ঢাকায় বড় গণজমায়েত নিশ্চিত করা। জণগণের আস্থা অর্জনে থাকবে একগুচ্ছ প্রতিশ্রæতি ও আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি।

‘১০ ডিসেম্বর’ কার্ডটি খেলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমান উল্লাহ আমান। গত ৮ অক্টোবর দলীয় এক কর্মসূচিতে তিনি বলেন, ‘আগামী ১০ ডিসেম্বরের পর বাংলাদেশ চলবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের কথায়। এর বাইরে দেশ চলবে না কারো কথায়।’ এরপর থেকেই বিষয়টি নিয়ে রাজনীতিতে তুমুল আলোচনা শুরু হয়। ক্ষমতাসীন দলের এমপি মন্ত্রীরা ১০ ডিসেম্বর বিএনপিকে প্রতিহত করার হুঙ্কার দিচ্ছেন। তবে বিএনপি নেতাদের দাবি- আমানউল্লাহ আমানের বক্তব্যে ভয় পেয়েছে সরকার।

দলটির নীতিনির্ধারকরা জানান, ১০ ডিসেম্বর নিয়ে আলোচনা যাই থাকুক; ঢাকায় একটি শান্তিপূর্ণ সফল সমাবেশই টার্গেট বিএনপির। যেখানে মূল লক্ষ্য থাকবে- এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় গণজমায়েত করা। বিভাগীয় সমাবেশগুলোর মধ্য দিয়ে তৃণমূলে নেতাকর্মীদের মধ্যে যে ‘আন্দোলন স্পৃহা’ তৈরি হচ্ছে, সেটিকে কাজে লাগিয়েই চূড়ান্ত গন্তব্যে পৌঁছতে রাজপথে থাকবে দলটি। নেতারা জানান, ১০ ডিসেম্বর কোনো ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের চিন্তা নেই তাদের। তবে সমাবেশে বাধা এলে কঠোরভাবে প্রতিরোধ করা হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নিছক রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়ানোর প্রয়োজনেই হয়তো বিএনপির কিছু নেতা কড়া বক্তব্য দিচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত ১০ ডিসেম্বর কিছুই হবে না। কারণ ডিসেম্বর মাসটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর মাস, মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাস। এই বাস্তবতাতেই ডিসেম্বরে একটি মহাসমাবেশ করে বিএনপি অনেক বড় কিছু করে ফেলবে, এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। তবে রাজনীতিতে এখন যে কথার যুদ্ধ, সেই যুদ্ধ ডিসেম্বরে রাজপথে দৃশ্যমান হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. হারুন-অর-রশিদ ভোরের কাগজকে বলেন, বিএনপি নেতা আমানের বক্তব্য একটি কাণ্ডজ্ঞানহীন উক্তি। এ ধরনের বক্তব্য উসকানিমূলক, যা ২০১৪ ও ২০১৫ সালের মতো সহিংস কর্মকাণ্ডে ফিরে যাওয়ার ইঙ্গিতবাহী। কোনো রাজনৈতিক নেতার কাছ থেকে এমন বালখিল্য বক্তব্য অপ্রত্যাশিত। তিনি বলেন, বিএনপি নেতাদের মধ্যে অনেকেই বিগত দিনে এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করেছেন। কিন্তু তা বাস্তবে আলো দেখেনি। আশা করব ১০ ডিসেম্বর বিএনপি ঢাকায় একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করবে।

যা বলছেন বিএনপির নীতি-নির্ধারকরা : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভোরের কাগজকে বলেন, কোনো তারিখ ধরে আমরা মাঠে নামিনি। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। ১০ ডিসেম্বর নিয়ে আমানউল্লাহ আমানের বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এসব কথা আমি কিংবা আমাদের দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কোনো নেতা ঘোষণা করেননি। তাই এসব বিষয়ে গুরুত্ব দেয়ার কিছু নেই। ওইদিন কী হবে, সে সিদ্ধান্ত আমরা স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নেব।

[caption id="attachment_382033" align="aligncenter" width="700"] ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

ঢাকার সমাবেশকে বিএনপির টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে দেখছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেছেন, আমাদের পরিকল্পনায় ধ্বংসাত্মক কিছুই নেই। ক্ষমতাসীনরা অহেতুক ভয় পাচ্ছেন। আমরা সবচেয়ে বেশি গণজমায়েতের মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণ একটা সমাবেশ করতে প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে বাধা এলে কীভাবে প্রতিরোধ করতে হয় সেটাও আমরা জানি। বাকিটা সময়ই বলে দেবে রাজনীতির গতিপথ কী হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ডেডলাইন দিয়ে আন্দোলন হয় না, আমরা একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মধ্য দিয়ে জনস্রোত চাই। এই জনস্রোত কোথা দিয়ে কাকে ধ্বংস করবে, কী করে যাবে, কোন পথে চলবে এবং কোন বাধা অতিক্রম করবে জানি না। এটার একটা নিজস্ব গতিপথ আছে। ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ঢাকা শহরে বড় একটা সমাবেশ হবে, সরকারকে রেডকার্ড দেখানো হবে, বাধা দিলে আন্দোলন আরো বেগবান হবে।

যা করবে বিএনপি: সূত্র জানায়, মূলত ১০ ডিসেম্বর ঢাকা অচল করে নয়, বরং গণজমায়েতের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে দলটি এমন বার্তা দিতে চায়, পরিস্থিতি বাধ্য করলে বিএনপি ঢাকা দখল করে পুরো দেশ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। একইসঙ্গে সরকারের পতনের লক্ষ্যে আগামী এক বছর ধাপে ধাপে কী ধরনের কর্মসূচি দেয়া হবে তার সারসংক্ষেপ তুলে ধরবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমে বিক্ষোভ, মিছিল, পথসভা, লংমার্চসহ হরতাল অবরোধের মতো কর্মসূচি আসতে পারে।

কর্মসূচিতে সরকারকে পদত্যাগের আল্টিমেটাম দেয়া হবে। মিত্রদের সঙ্গে হাতে হাত ধরে সূচনা হতে পারে যুগপৎ আন্দোলনের। এছাড়া বিএনপি জনগণকে প্রতিশ্রুতি দিতে চায়, ক্ষমতায় এলে পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থাকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে কীভাবে পরিবর্তন করবে তারা। এর একটি খুচরো রূপরেখাও তুলে ধরা হবে সমাবেশে। পাশাপাশি ক্ষমতায় গেলে জনকল্যাণে কী কী কাজ করা হবে তার ফিরিস্তি জাতির সামনে তুলে ধরবে বিএনপি। এছাড়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হলে ‘সর্বদলীয় জাতীয় সরকার’ গঠনের প্রতিশ্রুতি দেবে দলটি। একইসঙ্গে আগামী দিনে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় নেতাকর্মীদের প্রস্তত থাকার আহ্বান জানাবেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা।

চলছে প্রস্তুতির ঘটা: বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশগুলোর মধ্যে মূল ফোকাস দেয়া হচ্ছে ১০ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে। ঢাকায় ওইদিন সর্ববৃহৎ শোডাউন দেয়ার প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শুরু করেছে দলটি। ঢাকার সমাবেশ একা করছে না বিএনপি। ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা সব দলের নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে মহাসমাবেশ করবে দলটি। সমাবেশে যোগ দিতে জোট ও মিত্রদের বলা হয়েছে। ক্ষমতাসীন সরকারের পক্ষ থেকে নানান প্রতিবন্ধকতা আসবে ধরে নিয়েই সারাদেশ থেকে সমাবেশের ১০ দিন আগে থেকেই ঢাকায় এসে অবস্থান করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে ঢাকায় এসে গ্রেপ্তার এড়িয়ে আত্মীয়ের বাসা ও হোটেলে সতর্ক অবস্থায় থাকা, যাদের থাকার জায়গা নেই, তাদের নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে রাখার জন্য বলা হয়েছে। প্রয়োজনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কী উপায়ে কর্মীদের ঢাকায় আনা হবে সেই বিষয়ে জেলা নেতাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

ঢাকার বিভাগীয় সমাবেশ সফল করতে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমানকে। আর মহাসমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। সম্প্রতি তিনি ঢাকার নেতাদের নিয়ে একটি প্রস্তুতি কমিটি করেছেন। একইসঙ্গে ঢাকার ১১টি ইউনিট ও আশপাশের এলাকায় জোনভিত্তিক কর্মীসভা চলছে। সূত্র জানায়, সমাবেশ সুশৃঙ্খল করতে পাঁচশজনের একটি স্বেচ্ছাসেবক টিম কাজ করবে। নজরদারি করতে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সিসি ক্যামেরা ও ড্রোনও ব্যবহার করা হবে।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের তিনটি সমাবেশ হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে ১০ ডিসেম্বর ঢাকার মহাসমাবেশে আমরা কয়েক লাখ মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করব। তিনি বলেন, ১০ ডিসেম্বর সমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ। কিন্তু সরকার যদি সেই সমাবেশে বাধা দেয়, তাহলে বাধবে লড়াই। এই মহাসমাবেশ থেকে সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যেতে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App