×

জাতীয়

যুবলীগের গৌরবময় সংগ্রামের ৫০ বছর

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২২, ০৮:৫৫ এএম

গৌরবময় সংগ্রামের পঞ্চাশ বছর পূর্ণ করল আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার চার মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে যুবসমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে শিক্ষা, বেকারত্ব দূরীকরণ, দারিদ্র্য বিমোচন, আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতি, কর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করতে কাজ করছে জাতির পিতার নির্দেশে শেখ ফজলুল হক মণির হাতেগড়া এই সংগঠনটি। সদ্য স্বাধীন দেশ গড়ার পাশাপাশি গণতন্ত্র রক্ষা এবং গণআন্দোলনে যুবলীগের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। কিন্তু গত কয়েক বছরে সংগঠনটির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, অস্ত্রবাজি, ক্যাসিনোকাণ্ড ও মাদকপাচারের মতো বেআইনি ঘটনায় বিব্রত সরকার ও দল। ক্ষুব্ধ দলীয় হাইকমাণ্ডের নির্দেশে সরকার ও দলে চালানো শুদ্ধি অভিযানের জালে আটকা পড়ে বড় বড় রুই-কাতলা। চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলের সামনে এখন আগামী দিনের রাজনীতিতে সময়োপযোগী সক্ষমতা ও সাংগঠনিক শক্তি অর্জনের চ্যালেঞ্জ। ক্লিন ইমেজ ও আদর্শ ধরে রেখে যুবলীগকে শেখ হাসিনার ভ্যানগার্ড হিসেবে গড়ে তোলায় নজর তাদের। সংশ্লিষ্টদের মতে- চাঁদাবাজি, টেণ্ডারবাজি, অস্ত্রবাজি থেকে বেরিয়ে এসে সুশৃঙ্খল সংগঠন হিসেবে তৈরি করতে পারলে যুবসমাজের কাছে আদর্শিক সংগঠনে পরিণত হবে যুবলীগ।

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার কাজে যুবসমাজকে সম্পৃক্ত করতে শেখ মণির বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর যাত্রা শুরু করে যুবলীগ। পঁচাত্তরে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড এবং সস্ত্রীক শেখ মণি হত্যাকান্ডের পর ১৯৭৮ সালে ২য় কংগ্রেসে আবার সংগঠিত হয় যুবলীগ। জিয়া সরকার থেকে শুরু করে স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সাহসী ভূমিকা পালন করে সংগঠনটি। যার জ¦লন্ত উদাহরণ যুবলীগকর্মী শহীদ নূর হোসেনের আত্মাহুতি। নিজের জীবন দিয়ে যিনি গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার পথ দেখিয়েছেন। ১৯৯১ সালে বিএনপির আমলে দ্রব্যমূল্য, কৃষকের অধিকার, শ্রমিকের মর্যাদা প্রতিষ্ঠাসহ অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সোচ্চার ছিল যুবলীগ। ২০০১-২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের হত্যা, গুম, বাড়ি লুট, শিক্ষক হত্যা, সিরিজ বোমা হামলা, ২১ আগস্টে বোমা হামলা, দুর্নীতিতে পর পর ৫ বার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার প্রতিবাদে রাজপথে প্রতিবাদমুখর ছিল সংগঠনটি। সোচ্চার ছিল ২০০৭-২০০৮ সালের সেনাশাসনের বিরুদ্ধে। শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারের পর রাজপথে নেমেছিল যুবলীগ। গত ৫০ বছরে প্রবীণ রাজনীতিবিদ আমির হোসেন আমু, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজমের মতো নেতারা এগিয়ে নিয়েছেন সংগঠনকে। চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, যুবলীগের দীর্ঘ ৫০ বছরের পথপরিক্রমায় সংকট-সংগ্রামে সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। সরকারের উন্নয়নের ধারা, গণতন্ত্রের ধারা রক্ষায় অতন্দ্র প্রহরীর মতো রাজপথে রয়েছে যুবলীগ। যুবলীগ বিশ্বাস করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হেরে গেলে, হেরে যাবে বাংলাদেশ। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যুবলীগ ভ্যানগার্ডের দায়িত্ব পালন করতে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।

বিতর্কে বিব্রত সরকার: ধর্মান্ধ রাজনীতির বিরুদ্ধে এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নির্মাণে শেখ হাসিনার হয়ে কাজ করছে যুবলীগ। তবে যে স্বপ্ন নিয়ে যুবলীগ প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু, সেই স্বপ্ন থেকে সংগঠনটি অনেক দূরে- সংগঠনের কিছু নেতাকর্মীর বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে এমন মত সংশ্লিষ্টদের। ক্যাসিনোকাণ্ডে ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, খালেদ মাহমুদ ভূইয়া, জিকে শামীমকে গ্রেপ্তারের পর সারাদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। অবৈধ অর্থ পাচার, জাল টাকা সরবরাহ, মাদক ব্যবসা ও অনৈতিক কাজে জড়িত থাকায় যুবলীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার গ্রেপ্তার এবং গেন্ডারিয়ার এনু রুপনের অর্থ পাচারের ঘটনা সবার মুখে মুখে। অপকর্মের দায় নিয়ে যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে সরে যেতে হয়। এইসব ঘটনায় যুবলীগের ভাবমূর্তি ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ভোরের কাগজকে বলেন, পঁচাত্তর পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে কাজ করেছে যুবলীগ। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। আজো তার নির্দেশেই অতন্দ্র প্রহরীর ন্যায় জনগণের পাশে রয়েছে যুবলীগ।

করোনায় জনগণকে ত্রাণ দেয়া, হাসপাতালে নেয়া, মৃতদের সৎকার করা, ধান কেটে দেয়ার মতো জনহিতকর কাজ করেছে যুবলীগের কর্মীরা। তিনি বলেন, দুয়েকজনের জন্য সংগঠনের ইতিহাস-ঐতিহ্য ম্লান হয়ে যায় না। দোষীদের বিরুদ্ধে জিরো অবস্থানে হাইকমান্ড। কাউকে ছাড় দেয়া হচ্ছে না।

বৈশ্বিক দুর্যোগে সহযোগিতার খোলা বাতায়ন: বৈশ্বিক করোনাভাইরাসে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত জনসচেতনতায় মাঠে ছিল যুবলীগ। হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান ও মাস্ক বিতরণ, লকডাউনে পথচারী, ভাসমান মানুষের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণসহ ২৪ ঘণ্টা নাগরিক সেবা দিয়েছে সংগঠনটি। মুজিববর্ষের কর্মসূচির অংশ হিসেবে ‘গাছ লাগাই, জীবন বাঁচাই’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে সারাদেশে ফলদ, বনজ এবং ওষধি- এই তিনরকম বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করে যুবলীগ। করোনার সময় যখন ধান কাটার জন্য শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছিল না, ঠিক তখনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সারাদেশে যুবলীগের নেতাকর্মীরা স্বেচ্ছায় কৃষকের পাকা ধান কেটে বাড়ি পৌঁছে দেয়া- এমনকি ধান মাড়াই করে গোলায় ভরে দিয়েছে। করোনায় মৃত ব্যক্তির সৎকার করেছেন যুবলীগের নেতাকর্মীরা। পরে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুবলীগের কর্মকাণ্ড তুলে ধরে বলেন, যুবলীগ এই সংকটে দেশের বিভিন্ন জায়গায় লাশ দাফনে কাজ করেছে। যুবলীগের পক্ষ থেকে ৪২ লাখ পরিবারে খাদ্যসামগ্রী দেয়া হয়েছে। কৃষকদের দুই হাজার পাঁচশত হেক্টর জমির ধান কেটে দিয়েছে। মুজিববর্ষে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। করোনায় সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করেছে।

আজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুবলীগের মহাসমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হবে বলে আশা প্রকাশ করে যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, সকাল ১১টা থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সমাবেশের প্রথম পর্যায় শুরু হবে। দ্বিতীয় পর্যায় বেলা আড়াইটা থেকে। যুবলীগ ছাড়াও সহযোগী বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা সমাবেশে যোগ দেবেন। ১০ লাখ লোকের সমাগম হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App