×

মুক্তচিন্তা

জ্ঞান-অজ্ঞতার দ্বন্দ্বে অগ্রগমন ব্যাহত হচ্ছে

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২২, ১২:৩৮ এএম

জ্ঞান-অজ্ঞতার দ্বন্দ্বে অগ্রগমন ব্যাহত হচ্ছে
জ্ঞান-অজ্ঞতার দ্বন্দ্বে অগ্রগমন ব্যাহত হচ্ছে

ইংরেজ দার্শনিক, আইনজ্ঞ, রাজনীতিবিদ ও পরীক্ষামূলক বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার পথপ্রদর্শক ফ্রান্সিস বেকন ১৬২০ সালে ‘নিউ ইনস্ট্রমেন্ট’ শিরোনামে এক বৈজ্ঞানিক ইশতেহারে দাবি করেন ‘জ্ঞানই শক্তি’। তিনি বিশ্বাস করতেন কুসংস্কার ও আত্মগরিমার প্রতিবন্ধকতা থেকে মনকে মুক্ত করতে পারলে মানুষ তার জ্ঞানের দ্বারা প্রকৃতির ওপর পূর্ণ কর্তৃত্ব স্থাপন করতে সমর্থ হবে। আধুনিক বিজ্ঞান গবেষণার শুরুতে প্রথম আবিষ্কার লাটিন ‘ইগনার মাস’ বা আমরা জানি না থেকে যাত্রা শুরু। বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের এক অনন্য ঐতিহ্য। যদিও এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পথগুলোর ব্যাপারে সমষ্টিগত অজ্ঞতাকে স্বীকার করে নেয়। অজ্ঞতা স্বীকার করার মধ্য দিয়েই আধুনিক বিজ্ঞানকে করে তুলেছে পূর্ববর্তী যে কোনো জ্ঞানের ঐতিহ্যের তুলনায় আরো বেশি শক্তিশালী, নমনীয় ও কৌতূহলী। ফলে মহাজগৎ কীভাবে কাজ করে, তা বোঝা ও নব নব আবিষ্কারের সক্ষমতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। জ্ঞানই শক্তি এই আলোকবর্তিকতার পথ ধরে এগোচ্ছে সভ্যতা। যে রূপ বিকশিত হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব সিন্ধু, মেসোপটেমিয়া, মিসরীয়, মিনোয়ান, চৈনিক, নুবিয়া, মায়া, হিতিতেস, ওলমেক, শাভিন, ইনকা, রোমান, গ্রিস, আসিরিয়ান সভ্যতা। সভ্যতার ইতিহাসে মানবজাতি অন্যায়কে পরাভূত করে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করেছে, তেমনি অসত্যকে পরাভূত করে সত্য, অকল্যাণকে পরাভূত করে কল্যাণময় সমাজ প্রতিষ্ঠা করেছে। এ প্রক্রিয়ায় মূর্খতা ও অজ্ঞতাকে পরাভূত করেই জ্ঞানকে জয়ী হতে হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহাভারতের একটি বিবৃতির অবতারণা করা যেতে পারে। মহাভারতে উল্লেখ রয়েছে- বড় ভাই তার ছোট ভাইকে নির্দেশ করেছিলেন ফসলের ক্ষেতে বাঁধ দিতে। না হলে সব জল তার জমিতে ঢুকে যাচ্ছে। ছোট ভাই বাঁধ দিতে অস্বীকার করলে রেগে গিয়ে বড় ভাই ছোট ভাইকে মেরে তার মৃতদেহ টেনে নিয়ে পানি প্রবেশের মুখ আটকে দেয়। এ ঘটনা বাসুদেব কৃষ্ণকে মুমূর্ষু করেছিল। এই নিষ্ঠুরতা কোনোভাবেই তিনি মেনে নিতে পারছিলেন না। বুঝতে পেরেছিলেন মানুষের মাঝে অজ্ঞতা কোন পর্যায়ে পৌঁছলে বড় ভাই এ রকম নৃশংস হতে পারে ছোট ভাইয়ের প্রতি। তিনি স্থির করলেন এই স্থানে রক্তপাত ঘটিয়ে অজ্ঞতাকে নিঃশেষ করে দেবেন। ন্যায় এবং জ্ঞানের বিজয় ঘটাবেন। প্রস্ফুটিত হবে বিদ্যা, বিনয় আর মনুষত্বের। পাণ্ডবরা ছিলেন জ্ঞানের প্রতীক, অন্যদিকে জ্ঞাতী ভ্রাতা দুর্যোধন, দুঃশাসন বা কৌরবরা নৃশংসতা আর অজ্ঞতার মূর্ত প্রতীক। আঠারো দিনের এই যুদ্ধে রক্তের গঙ্গা বয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত নৈতিকতা আর জ্ঞানের বিজয় হয়েছিল। সমাজ রাষ্ট্র ও ব্যক্তি পর্যায়ে মূর্খতা, অজ্ঞতার সঙ্গে জ্ঞানের দ্ব›দ্ব আজো বিদ্যমান। পৃথিবীর ইতিহাস যুগে যুগে মাঝে মধ্যে জ্ঞান ও জ্ঞানীকে পথভ্রষ্ট করতে না পেরে মূর্খতা অজ্ঞতা হিংস্ররূপ ধারণ করেছে। এভাবে সভ্যতার অগ্রগমন ব্যাহত হয়েছে। সে বিষয়ের গভীরে যাওয়ার পূর্বে জ্ঞান কী, সেটি সম্পর্কে ধারণা নেয়া প্রয়োজন। সেপিয়েসের তথ্যমতে চিন্তা করা আর ভাবের আদান প্রদানের নতুন উপায়ের আবির্ভাব হয়েছিল ৭০ হাজার বছর পূর্বে, যাকে বুদ্ধিভিত্তিক বিপ্লব বলা যেতে পারে। ১২ হাজার বছর পূর্বে কৃষিবিপ্লবের যাত্রা শুরু হয়, যাকে জ্ঞানবৃক্ষের রূপান্তর হিসেবে অবহিত করা হয়েছে। যুগে যুগে জ্ঞান বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে সহজভাবে বলতে পারি- যে তত্ত্ব আমাদের নতুন কিছু করতে সক্ষম করে- তা-ই জ্ঞান। যদিও অনেকেই জ্ঞানকে সত্যতা যাচাই করার টুলস হিসেবে অবহিত করেন। কিন্তু সত্যতা যাচাই করা জ্ঞানের মূল কাজ নয়। বরং জ্ঞান আমাদের সর্বোতভাবে শক্তিশালী করে কি না, সেটাই প্রধান বিবেচ্য। মানবজাতি আদিম যুগ থেকেই প্রকৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে পর্যায়ক্রমে নিজেদের উন্নয়ন ঘটিয়েছে। প্রকৃতিতেই সৃষ্টি এবং প্রকৃতিতেই বেড়ে উঠেছে বিধায় অন্যান্য প্রাণিকূলের মতোই মানবপ্রজাতিও বেঁচে থাকার জন্য প্রকৃতি নির্ভরশীল ছিল। ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য গাছের ফলমূল, ক্ষুদ্র প্রাণী, পশুপাখি, পানি, মাছসহ জলজপ্রাণী আহরণ ও ভক্ষণই ছিল আদি মানুষের প্রধান কাজ। প্রকৃতিতে মানবপ্রজাতির অবস্থান এবং বুদ্ধিভিত্তিক কার্যক্রমের সূচনালগ্নে এক সময়ে সুস্থভাবে, সুস্থ পরিবেশ টিকে থাকার জন্য শুরু হয় প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই। বিশ্বের অসীম প্রকৃতির মাঝে মানুষের জীবনের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যে অভিজ্ঞতা অর্জন- সেটাই জ্ঞান। বলা যায় প্রকৃতিই জ্ঞানের উৎসস্থল। দার্শনিক প্লেটোর মতে, একটি ভালো সিদ্ধান্তের ভিত্তি হলো জ্ঞান, সংখ্যাবাচক বা পরিমাণগত কোনো কিছু নয়। বৈজ্ঞানিক স্টিফেন হকিং বলেছেন জ্ঞানের সবচেয়ে বড় শত্রæ অজ্ঞতা নয়, বরং তা হলো জ্ঞানের বিভ্রান্তি বা বিভ্রান্তিকর জ্ঞান। জর্জ বার্নাড শ’ মানবজাতিকে বিভ্রান্তিকর জ্ঞান থেকে সাবধান থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, এটা ভয়ংকর। জ্ঞান উৎপাদন পুনরুৎপাদনের বাহন হলো শিক্ষা। প্রকৃত শিক্ষা বিস্তার ব্যতীত জ্ঞান ও জ্ঞানের যথার্থ বিস্তার সম্ভব নয়। সে কারণেই রাষ্ট্রকে শিক্ষার সামগ্রিক দায়িত্ব নিতে হবে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন ‘শিক্ষার বিষয়টি বাজার অর্থনীতির বাইরে নিতে হবে। শিক্ষা বাজারের বিদ্যাবস্তু পণ্যায়িত হতে পারে না।’ অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. আবুল বারকাতের মতে- আমাদের দেশে দুর্বৃত্তায়নের ফাঁদে পড়ে শিক্ষা এখন পণ্যায়ন হয়েছে সীমাহীন। প্রাকস্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষা এখন বাজারের ক্রয় বিক্রয়ের পণ্য। তাই উচ্চশিক্ষার ডিগ্রিপ্রাপ্তরা এক ধরনের জ্ঞানখাটো আত্মকেন্দ্রিক ব্যক্তি। শিক্ষার ক্ষেত্রে জ্ঞানতৃষ্ণা মেটানোর বিষয়টি এখন গৌণ। জ্ঞানার্জন ও শিক্ষা আর আদৌ সমার্থক নয়। বিপ্লব পূর্ব রাশিয়ার শিক্ষানীতি নিয়ে উপন্যাসিক লেভ টলস্টয় বলেছিলেন, জনগণের অজ্ঞতাই হলো সরকারের শক্তির ভিত্তি এবং সরকার তা জানে। সরকার জানে- অজ্ঞতার মধ্যে অন্ধ অনুসরণ আছে, প্রশ্নের মাধ্যমে যাচাই বা বিশ্লেষণ নেই। যুক্তির জোর এখানে চরমভাবে উপেক্ষিত। আর যেখানে যুক্তি নেই, সেখানে চিন্তার মুক্তি নেই। চিন্তাকে মুক্তি না দিলে চিন্তাশীলতা বিকশিত হবে না। অন্ধ দাসত্বের জ্ঞান মানুষকে শৃঙ্খলিত রাখে। প্রতিবাদী হতে শিখায় না। সঙ্গতই সরকার সব সময়ই জনসাধারণকে আলোকিতকরণ প্রক্রিয়ায় বাধাগ্রস্ত করে নিজের ভিত্তি মজবুত করতে চায়। শিক্ষার পণ্যায়নের বিরূপ প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে ১৩০ বছর পূর্বে কবিগুরু বলেছিলেন, ‘শিক্ষক দোকানদার, বিদ্যাদান তাহার ব্যবসা। তিনি খরিদ্দারের সন্ধানে ফেরেন। ব্যবসাদারের কাছ থেকে লোক বস্তু কিনতে পারে, কিন্তু তাহার পণ্য তালিকার মধ্যে স্নেহ, শ্রদ্ধা, নিষ্ঠা প্রভৃতি হৃদয়ের সামগ্রী থাকিবে এমন কোনো প্রত্যাশা করিতে পারে না। এই প্রত্যাশা অনুসারেই শিক্ষক বেতন গ্রহণ করেন ও বিদ্যাবস্তু বিক্রয় করেন। এখানে ছাত্রের সঙ্গে শিক্ষক ও জ্ঞান অনুশীলনের সমস্ত সম্পর্ক শেষ।’ তাই জ্ঞানের বাহন হিসেবে চলমান শিক্ষা ব্যবস্থা বা পদ্ধতি জ্ঞানচর্চা ও বিস্তারের কতটুকু সহায়ক তা যুগ চিন্তক এবং ঐতিহাসিকগণই বিচার করবেন। সময়ের প্রক্রিয়ায় জীবনমান ও প্রকৃতির বহুমাত্রিক আচরণের মধ্য দিয়ে জ্ঞানের বহুমাত্রিকতা যোগ হয়েছে। জ্ঞানের শাখা প্রশাখার নানা মাত্রিক কৌশল আজ বিশ্বসমাজকে নিয়ন্ত্রণ করলেও সমাজবিজ্ঞানীরা জ্ঞান আহরণের দুটি মাধ্যমকে চিহ্নিত করেছেন। এর একটি হলো এক্সপ্লিসিট নলেজ (ঊীঢ়রষরপরঃ কহড়ষিবফমব), যাকে বাংলা স্পষ্ট জ্ঞাপন হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। অর্থাৎ যে জ্ঞান বইপত্রে পরিষ্কারভাবে বর্ণিত, সুব্যক্ত, স্পষ্টভাষিত সেটি এক্সপ্লিসিট নলেজ; যা পড়াশোনার মাধ্যমে অর্জন করা যায় এবং সহজেই হস্তান্তর বা স্থানান্তর করা যায় বা একজন অন্যজনকে দান করতে পারেন। দ্বিতীয়টি ঞধপরঃ কহড়ষিবফমব। এটি স্বচ্ছ জ্ঞান, যা মানুষের মনে অনুবিদ্ধ বা খচিত। এটি জীবনের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে অর্জিত। স্বচ্ছ জ্ঞান অন্তর্গত বিধায় অন্তদৃষ্টিতে অনুধাবন বা বুঝতে হয়। যা প্রকাশ বা ট্রান্সফার করা কষ্টকর। মহাকালের বিশ্বপরিক্রমায় বিটকিন ও শেলীর মতে বিশ্বে ৮০ ভাগই থেসিট নলেজ বা স্বচ্ছ জ্ঞাননির্ভর। যা ডকুমেন্টেন্ড নয় বিধায় মানুষের মনের মধ্যে অনুবিদ্ধ। বিশ্বব্যাপী প্রায় মানুষই এক্সপ্লিসিট নলেজ বা স্পষ্ট বা সুব্যক্তকরণ জ্ঞান আয়ত্ত করে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে। এক্সপ্লিসিট নলেজের সঙ্গে যখন জীবনবোধ জ্ঞানের সংযুক্ত হয়, তখন জ্ঞানের ইতিহাসে নতুনমাত্রা যোগ হয়। কিন্তু উচ্চতর এক্সপ্লিসিট নলেজধারী ব্যক্তি অহংবোধের কারণে থেসিট নলেজকে তেমন গুরুত্ব দেয় না। কাজেই এই দুই নলেজের মাঝে এক ধরনের দ্ব›দ্ব সৃষ্টি হয়। কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাস বদলে দেয়ার ক্ষেত্রে অপ্রাতিষ্ঠানিক বা থেসিট নলেজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। পৃথিবীর উন্নত বা উন্নয়নশীল দেশের গতানুগতিক দেশ পরিচালনা এবং উন্নয়ন কার্যক্রমের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে প্রতীয়মান হবে- উন্নত বা ধনী দেশগুলোর মধ্যে যেসব দেশ থেসিট জ্ঞানভিত্তিক ব্যক্তি বা রাষ্ট্রনায়ক দ্বারা বাধাহীন বা স্বল্প পরিসরের বাধা অতিক্রম করতে পেরেছে, সেসব দেশ বা জাতি গোষ্ঠী উন্নত সমৃদ্ধ দেশে উন্নীত হয়েছে। ক্ষুদ্র জাতি রাষ্ট্র সিঙ্গাপুরের জনক লি কুয়ান ইউ এক্সপ্লিসিট নলেজে নির্ভরশীল না হয়ে জীবন অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে থেসিট নলেজ দ্বারা জাতি রাষ্ট্র গঠনে মনোযোগী হওয়ায় কোনো ধরনের প্রাকৃতিক সম্পদ না থাকা সত্ত্বেও স্বল্প সময়ে দেশটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হয়েছে। মালয়েশিয়ার প্রাজ্ঞ রাষ্ট্রনায়ক মাহাথির মোহাম্মদের উন্নয়ন দর্শনেও এর ব্যতিক্রম ছিল না। তিনি গতানুগতিক এক্সপ্লিসিট নলেজের বাইরে এসে থেসিট নলেজভিত্তিক উন্নয়ন দর্শনকে কাজে লাগানোর মধ্য দিয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যে মালয়েশিয়াকে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন। অন্যদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত জাপানের উন্নয়নেও রাষ্ট্রনায়ক হিরোহিত একই দর্শন প্রয়োগ করেছেন এবং জাপানকে অর্থনৈতিকভাবে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছেন। দারিদ্র্যপীড়িত জনবহুল দেশ চীনের উন্নয়নেও মাও সেতুং নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি নির্ভর সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার দর্শনের মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক পরাশক্তিধর দেশে পরিণত করেছেন। প্রসঙ্গত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, জাপান বা চীন প্রতিটি দেশে যখন রাষ্ট্রনায়করা থেসিট নলেজের ভিত্তিতে উন্নয়ন দর্শন বা নীতি বাস্তবায়নে উদ্যোগী হয়েছেন, তখনই সেসব দেশের এক্সপ্লিসিট নলেজধারী অর্থাৎ গতানুগতিক জ্ঞানে উচ্চশিক্ষিত সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের দ্বারা অনেক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। কিন্তু সমাজ বাস্তবতার নির্ভর সুদূরপ্রসারি উন্নয়ন দর্শনের সামনে সেই প্রতিবন্ধকতা টিকতে পারেনি। এই টিকতে না পারার মধ্য দিয়ে প্রতিক্রিয়াশীল এক্সপ্লিসিট নলেজধারীরা অনেক ক্ষেত্রে জীবনহরণের কৌশল বেছে নিয়ে থাকেন। সভ্যতার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে স্পষ্টতই লক্ষ্য করা যায় এক্সপ্লিসিট নলেজধারী দ্বারা থেসিট নলেজধারীগণ বাধাগ্রস্ত হয়েছে এবং কোথাও কোথাও জীবন উৎসর্গ করতে হয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এক্সপ্লিসিট নলেজধারীদের উপস্থিতিতে যখন বিদ্যমান অনাচার, হানাহানি, সামাজিক পারিবারিক বিশৃঙ্খলা উত্তরণ সম্ভব হয়নি, তখন বিভিন্ন ধর্মীয় মহামানবের আগমন ঘটেছে এবং তারা স্বকীয় জ্ঞানের দীক্ষায় সমাজ রাষ্ট্রে পরিবারে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে গুরুদায়িত্ব পালন করেছিলেন। যাদের অধিকাংশেরই এক্সপ্লিসিট বা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। এ ক্ষেত্রেও এই থেসিট নলেজ বা স্বকীয় শিক্ষায় শিক্ষিত মহামানবদের অগ্রগমন প্রতিহতে এক্সপ্লিসিট নলেজধারীরা দ্ব›দ্ব সংঘাতের আশ্রয় নিয়েছে। সামগ্রিক বিশ্লেষণে এটিই স্পষ্ট যুগে যুগে জ্ঞানের সঙ্গে অজ্ঞতার দ্ব›দ্ব চলমান, যা উন্নয়ন অগ্রগমনের পথে অন্তরায়। সমাজ রাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন উচ্চাভিলাষী কর্তা ও রাজনীতিকদের সবাই যদি স্ব স্ব পেশায় আত্মনিবেদিত থাকেন, তাহলে সব দ্ব›দ্ব পরিহার করা সম্ভব। নচেৎ জ্ঞানের সঙ্গে অজ্ঞতার দ্ব›দ্ব জাতির অগ্রগমনের পথকে থামিয়ে দেবে। অবশ্যই সেটি কারো কাম্য হতে পারে না।

এ কে এম এ হামিদ : উন্নয়ন গবেষক ও সভাপতি, ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি)।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App