×

জাতীয়

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও তাঁর স্নেহধন্য স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২২, ১২:০০ এএম

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও তাঁর স্নেহধন্য স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর স্নেহধন্য স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী

কালের পরিক্রমায় আবার ফিরে এসেছে ১১ নভেম্বর। সর্বজন শ্রদ্ধেয় স্পিকার বিশ্ববরেণ্য কূটনীতিবিদ ও অকুতোভয় ব্যক্তিত্ব মরহুম হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর ৯৪তম জন্মজয়ন্তী। ১৯২৮ সালের এই দিনে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী রশীদ পরিবারে তার জন্ম হয়। হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী স্মৃতি পরিষদের নির্বাহী কমিটি জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী (মুজিববর্ষ)-এর কর্মসূচির সাথে সম্পর্ক রেখে দিবসটি যথাযথ মর্যাদার সাথে উদযাপন করেছে।

‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী’- এ প্রতিপাদ্য নিয়ে সকল কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়েছে। সিলেটে মরহুম স্পিকারের কবর জিয়ারত ও ফাতেহা শরীফ পাঠ এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত উপস্থিতি নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। দিবসটিকে স্মরণীয় করে রাখতে একটি ডিজিটাল প্রকাশনা বের করা হচ্ছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর খুবই ঘনিষ্ঠ ও আত্মিক সম্পর্ক ছিল। সরকারি চাকুরিজীবীদের মধ্যে জাতির পিতার প্রিয়পাত্রদের অন্যতম ছিলেন হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী। জাতির পিতা তাকে সস্নেহে হুমায়ুন বলে ডাকতেন। তবে আনুষ্ঠানিক পরিবেশে ‘চৌধুরী সাহেব’ বলে সম্বোধন করতেন।

একটি রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য হিসেবে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতি সচেতন ছিলেন। তাঁর পিতা মরহুম আব্দুর রশীদ চৌধুরী অবিভক্ত ভারতের লোকসভার সদস্য ছিলেন। দেশবিভাগের পর তার মাতা বেগম সিরাজুন্নেছা চৌধুরী পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তুখোড় মেধাবী হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী প্রতিযোগিতামূলক সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৫৩ সালে পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালে জাতির পিতার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে নয়াদিল্লিস্থ পাকিস্তান দূতাবাস ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন এবং সাফল্যের সাথে বাংলাদেশ মিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সরকারি কর্মচারিদের দুই বছরের জ্যেষ্ঠতা প্রদান করেন। সে হিসেবে মরহুম হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ১৯৫১ ব্যাচের ফরেন সার্ভিসের অফিসার হিসেবে জ্যেষ্ঠতা পান। পরবর্তীকালে তিনি বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ১৯৮৬ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৪১তম অধিবেশনে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে সাধারণ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী সর্বসম্মতিক্রমে সপ্তম জাতীয় সংসদের স্পিকার হিসেবে নির্বাচিত হন।

কূটনৈতিক জীবনের শুরুতে জাতির পিতার সান্নিধ্য:

মরহুম হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী তাঁর কূটনৈতিক জীবনে জাতির পিতার ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে আসার সুযোগ লাভ করেন। ইতালির রাজধানী রোমে সেকেন্ড সেক্রেটারি হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৭ সালে সরকারি কাজে ইতালি সফরে যান। তাঁর সাথে ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা জহির উদ্দিন। তারা দুজন তখন পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য। সেসময় পাকিস্তান সরকার উচ্চমূল্যে ইতালি থেকে চাল কেনার জন্য চুক্তি করতে যাচ্ছিল। শ্রীলঙ্কা ইতালি থেকে অপেক্ষাকৃত কমদামে চাল কিনছে বলে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুকে অবহিত করেন। দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু পার্লামেন্টে হৈচৈ করলে পাকিস্তান সরকার চুক্তি বাতিল করতে বাধ্য হয়।

রোম শহরে অবস্থানকালে তারা নিয়মিতভাবে ফোন করে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর বাসায় যেতেন। এমনকি একদিন তার বাসায় গিয়ে বঙ্গবন্ধু ও জহির উদ্দিন নিজ হাতে রান্না করে খাওয়া-দাওয়া করেন এবং হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর নববিবাহিত পত্নী বেগম মাহজাবীন চৌধুরীর সাথে ঠাট্টাচ্ছলে বলেন, পরেরবার এসে বেগম চৌধুরীর হাতে রান্না করা ছোট মাছ খাবেন!

জাতির পিতার প্রতি আনুগত্য ও মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ:

১৯৬৩-১৯৬৬ সালে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক প্রশাসন হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের উত্থাপিত ইস্যুসমূহ বিশেষ করে বাঙালিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ও স্বার্থসংরক্ষণের ব্যাপারে সক্রিয় ছিলেন। এ সময় হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী খেয়াল করেন যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অধস্তন প্রশাসনিক পদে কর্মরত বাঙালিদের সংখ্যা পশ্চিম পাকিস্তানিদের তুলনায় নেহায়েত নগণ্য। তাই তিনি বিভিন্ন শূন্যপদে বাঙালিদের নিয়োগ দেয়া শুরু করেন। তার সম্পর্কে গল্প প্রচলিত ছিল যে, তিনি সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানী ইসলামাবাদের বিভিন্ন মার্কেটে গিয়ে বাঙালিদের খুঁজে তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি করবেন কিনা জানতে চাইতেন এবং আগ্রহীদের অফিসে এনে নিয়োগপত্র দিয়ে দিতেন। বিষয়টি তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিবের গোচরে এলে তিনি হুমায়ুন রশীদকে ডেকে পাঠান এবং জিজ্ঞেস করেন, হুমায়ুন তুমি নাকি প্রচুর বাঙালিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি দিচ্ছ? স্পষ্টভাষী হুমায়ুন রশীদের সাফ জবাব, জ্বী স্যার। আপনারা কথায় কথায় দুই অঞ্চলের মধ্যে সমতার উল্লেখ করেন। আমি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সেই সমতা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। পররাষ্ট্র সচিব হতবাক।

হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ১৯৭১ সালে নয়াদিল্লিতে পাকিস্তান দূতাবাসে কর্মরত ছিলেন। এ সময় জাতির পিতার নির্দেশে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বঙ্গবন্ধুর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এ প্রসঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর (২০১৯) মরহুমের জন্মজয়ন্তীতে প্রদত্ত বাণীতে উল্লেখ করেন:

 “আমাদের মহান স্বাধীনতার ইতিহাসে বীর মুক্তিযোদ্ধা হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম। তিনি জীবনের মায়া তুচ্ছ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে বাঙালির পক্ষে কূটনৈতিক যুদ্ধের মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর নয়াদিল্লীস্থ পাকিস্তানি দূতাবাসে কর্মরত অবস্থায় পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করেন। এ সময় দূতাবাসে কর্মরত বাঙালিদের জীবন রক্ষায় হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। বিদেশী গণমাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং বন্দী নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির জোরালো আহ্বান জানান।

যুদ্ধজয়ের পর বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশের স্বীকৃতি আদায়ে কূটনীতিক তৎপরতা শুরু করেন। তাঁর বিচক্ষণতায় ৩৪টি দেশ স্বল্প সময়ে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে।”

নয়াদিল্লীতে বাংলাদেশ মিশনের প্রধান হিসেবে তিনি প্রবাসী মুজিবনগর সরকার এবং ভারতীয় সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখতেন। তিনি প্রায়ই মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গন পরিদর্শনে যেতেন এবং জাতির পিতার পক্ষ থেকে একদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহ দিতেন, অন্যদিকে যুদ্ধের পরিস্থিতি সম্পর্কে কূটনৈতিক কোরের সহকর্মীদের আপডেট করতেন।

সে সময় তিনি খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে চলমান একটি ষড়যন্ত্র সম্পর্কে প্রবাসী মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদকে অবহিত করেন। হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর সন্দেহ ছিল পররাষ্ট্র সার্ভিসের কুচক্রী কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম চাষী ও অন্যরা খন্দকার মোশতাককে নিয়ে পাকিস্তানের সাথে কনফেডারেশনের ষড়যন্ত্র করতে পারে। তার ধারণা সত্য হবার প্রমাণ পেলে তিনি তা প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনেন। যার ফলে সরকার তাৎক্ষণিকভাবে মোশতাক গংদের ষড়যন্ত্র বানচাল করতে সক্ষম হন।

মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত জয়লাভের পর হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে ভারতীয় পার্লামেন্টের যৌথ অধিবেশনে বক্তৃতা প্রদানের বিরল সম্মান অর্জন করেন। তিনি অধিবেশনকক্ষে পৌঁছার পর উভয় কক্ষের সদস্যদের তুমুল করতালির মধ্যে লোকসভার স্পিকার ও প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী তাঁকে সকলের সামনে পরিচয় করিয়ে দেন।

জার্মানির বনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত- জাতির পিতার দিক-নির্দেশনায় অর্থনৈতিক সহযোগিতার সুদৃঢ় ভিত্তি স্থাপন:

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীকে তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দান করেন। একই সাথে তাঁকে সুইজারল্যান্ড ও অষ্ট্রিয়ায় রাষ্ট্রদূতের সমবর্তী দায়িত্ব দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে সরাসরি দিক-নির্দেশনা নিয়ে তিনি বন শহরে গমন করেন এবং পশ্চিম জার্মানিতে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রদূত হিসেবে পরিচয়পত্র পেশ করেন। সে সময় পশ্চিম জার্মানির চ্যান্সেলার ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন রাষ্ট্রনায়ক মি. উইলি ব্রান্ট। জাতির পিতার নির্দেশনার আলোকে তিনি জার্মানির সাথে অর্থনৈতিক সহযোগিতার ভিত্তি স্থাপনে উদ্যোগী হন। সেজন্য তিনি সেখানকার গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ স্থাপন করেন। তিনি নিয়মিতভাবে পার্লামেন্টে যাতায়াত শুরু করেন।

তার কূটনীতিক পারদর্শিতা দিয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে বিশেষ করে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী মি. হেলমুট স্মিথের সাথে কার্যকর সমঝোতায় উপনীত হতে সক্ষম হন। এ ধারাবাহিকতায় জার্মান প্রতিনিধিদল ঢাকায় সংলাপের জন্য আসে এবং একটি সফল আলোচনার পর ঢাকাতে অবস্থানকালেই তারা যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনের জন্য ৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থনৈতিক সাহায্য দেবার ঘোষণা প্রদান করে। বাংলাদেশের পক্ষে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী সাহায্য চুক্তি স্বাক্ষর করেন। কোনো দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগীর সাথে এটাই প্রথম চুক্তি যা অন্যান্য দেশের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরকালে মডেল হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

জার্মানিতে অবস্থানকালে জাতির পিতার সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা:

জার্মানিতে অবস্থানকালে তিনি জাতির পিতার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লন্ডনে চিকিৎসা শেষে ডাক্তারের পরামর্শে বিশ্রামের জন্য জেনেভা গমন করেন। হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশের সমবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে তখন সুইস সরকারের সাথে সমন্বয়পূর্বক জাতির পিতাকে অভ্যর্থনা জ্ঞাপন, জেনেভায় অবস্থানকালে তাঁর নিরাপত্তার সুষ্ঠু ব্যবস্থা নিশ্চিত করেন। সে সময় তিনি পারিবারিকভাবেও বঙ্গবন্ধুর সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখার সুযোগ পান। প্রায়শই তিনি তাঁর পত্নী বেগম মাহজাবীন চৌধুরীসহ বঙ্গবন্ধুকে দেখতে যেতেন। পরবর্তী জীবনে হুমায়ুন রশীদ এসব স্মৃতিচারণ করতেন।

তিনি স্পিকার থাকাকালীন আইপিইউ-এর আমন্ত্রণে মিলেনিয়াম সামিটের প্রস্তুতিমূলক সভায় যোগদানের জন্য ২০০০ সালের জানুয়ারি মাসে জেনেভায় যান। সভা শেষে তিনি আমাদেরকে নিয়ে ১৯৭২ সালে জাতির পিতা যে হোটেলে থেকে ছিলেন সেই ‘লা রিজার্ভ’ হোটেল দেখাতে নিয়ে যান এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিভিন্ন স্মৃতিচারণ করেন। তিনি বলেন, একদিন সাক্ষাৎ করতে গেলে আরও কয়েকজন অভ্যাগতের উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু তাঁকে প্রশ্ন করেন: চৌধুরী সাহেব, আপনি তো ভারতে থাকাকালে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীকে সফলভাবে দেশ পরিচালনা করতে দেখেছেন। বলুন তো, মিসেস গান্ধীর সাফল্যের ম্যাজিক কি? জবাবে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী বলেছিলেন: বঙ্গবন্ধু, মিসেস গান্ধী বিভিন্ন বিষয়ে তাঁকে পরামর্শ প্রদানের জন্য একদল অত্যন্ত সুযোগ্য উপদেষ্টা নিয়োগ করেছেন। তারাই তাঁকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এবং সঠিক সময়ে সঠিক পরামর্শ দিয়ে সময়োচিত সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে থাকেন। বঙ্গবন্ধু তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেন বলে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী অনুমান করেন। তিনি আরও বলেন, আশু রোগমুক্তির জন্য বিশ্রামে থাকার সময়ও বঙ্গবন্ধু সারাক্ষণ দেশ নিয়ে ভাবতেন। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠন, জাতিসংঘের সদস্য হওয়া, পাকিস্তানে আটক বাঙালিদের প্রত্যাবাসন, উন্নত বিশ্বের দেশগুলো থেকে সহযোগিতা অর্জন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে তিনি গভীরভাবে চিন্তা করতেন। দেশে ফেরার আগে তিনি ইউরোপে নিযুক্ত সকল রাষ্ট্রদূতদের বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন। জেনেভায় থাকাকালে তিনি জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার, আন্তর্জাতিক রেডক্রসের প্রধান এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বদের সাথে সাক্ষাৎ দেন।

পরবর্তীতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে যোগদানের জন্য বিদেশ সফরকালে বঙ্গবন্ধু দুইবার জার্মানিতে যাত্রা বিরতি করেন। এসময় হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী আবার তাঁর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে আসেন। তিনি স্মৃতিচারণ করতেন, একবার যাত্রাবিরতি ছিল গভীর রাতে এবং ফ্লাইট ছাড়ার কথা ভোরের দিকে। ভিভিআইপি লাউঞ্জে বঙ্গবন্ধু লক্ষ্য করলেন রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর চোখে অনিদ্রার চিহ্ন। বঙ্গবন্ধু তাঁকে পাশের সোফায় হেলান দিয়ে একটু ঘুমানোর চেষ্টা করতে বললেন। হুমায়ুন রশীদ হুকুম তামিল করলেন। কিছুক্ষণ পরে তিনি অনুভব করলেন বঙ্গবন্ধু তার মাথায় আলতোভাবে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। এত কোমল হাত তিনি আগে কখনও অনুভব করেননি। ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। আবার ঘুম ভাঙল বঙ্গবন্ধুর ডাকে ফ্লাইট ছাড়ার নিকট সময়ে।

জাতির পিতার সাথে আবার আলাপ হয় পঁচাত্তর সালের জুলাই মাসে। ঢাকা থেকে বঙ্গবন্ধু ফোন করে জানান: হুমায়ুন, আমার মেয়েরা জার্মানিতে আসছে। ড. ওয়াজেদ ওখানে ফেলোশিপ করছে। তারা তোমার অতিথি হবে। বঙ্গবন্ধু ১৯৫৭ সালে নিজের রোম সফরের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী মেয়েদের তাঁর বাড়িতে রাখবেন বলে বঙ্গবন্ধুকে আশ্বস্ত করেন। ১০ আগস্ট শেখ হাসিনা তার ছোটবোন শেখ রেহানা এবং সন্তান দুজনসহ হুমায়ুন রশীদের বাসায় পৌঁছেন। ১২ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ফোন করে মেয়েদের সাথে কথা বলেন এবং হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীকে আতিথেয়তার জন্য ধন্যবাদ দেন। এটাই ছিল জাতির পিতার সাথে শেষ ফোনালাপ।

পঁচাত্তরের ট্র্যাজেডি- অকুতোভয় মানবতাবাদী হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী:

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ষড়যন্ত্রকারীদের নীলনকশায় বিপথগামী সৈনিকদের হাতে সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হলে তাঁর দুই কন্যাকে পশ্চিম জার্মানিতে অপত্য স্নেহে আগলে রাখেন রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর প্রদত্ত তাঁর বাণীতে স্মরণ করেন:

“১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতার নির্মম হত্যাকান্ডের খবর পেয়ে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী আমাকে এবং আমার বোন শেখ রেহানাকে বেলজিয়াম থেকে পশ্চিম জার্মানিতে আনার ব্যবস্থা করেন। আমাদের চরম দুঃসময়ে তিনি এবং তাঁর সহধর্মিণী মেহজাবিন চৌধুরী পরম মমতায় আমাদের দুই বোনকে আগলে রাখেন। সেসময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে যোগাযোগ করে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী দিল্লীতে আমাদের রাজনৈতিক আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেন। অকুতোভয় কূটনীতিবিদকে সেজন্য ষড়যন্ত্রকারীদের রোষানলে পড়তে হয় এবং বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হন।”

জাতীয় সংসদে স্পিকারের রুলিং- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাংবিধানিকভাবে জাতির পিতা:

সপ্তম সংসদের (১৯৯৬-২০০১) অধিবেশন চলাকালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিরোধীদলের সদস্যরা জাতির পিতাকে নিয়ে অহেতুক বিতর্ক করতেন। হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী আক্ষেপ করতেন, যে নেতার জন্ম না হলে স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টি হতো না, বাংলাদেশে স্বাধীন সার্বভৌম সংসদ প্রতিষ্ঠিত হতো না, সেই মহান নেতাকে নিয়ে কোনো ধরনের অহেতুক বিতর্ক হোক তা কাম্য নয়। স্পিকার এ ধরনের বিতর্ককে অযৌক্তিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে বিবেচনা করতেন বিধায় তিনি আইনগতভাবে এ ধরনের পরিস্থিতি নিরসনের উদ্যোগ নেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সাংবিধানিকভাবে জাতির পিতা সে বিষয়ে একটি রুলিং প্রদানের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এজন্যে তিনি বাংলাদেশ সংবিধান পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করেন। তিনি পরিতাপের সাথে লক্ষ্য করেন যে, পঁচাত্তর পরবর্তী সরকারগুলো সকলের অগোচরে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জাতির পিতা সম্পর্কিত বিধানগুলো বাদ দিয়ে সংবিধানের নতুন সংস্করণ মুদ্রণ করেছে। এ ব্যাপারে তাঁকে তৎকালীন ডেপুটি স্পিকার (বতর্মান মহামান্য রাষ্ট্রপতি জনাব মোঃ আব্দুল হামিদ), চিফ হুইপ (জনাব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ্ এমপি), আইন মন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু এবং প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান এডভোকেট রহমত আলী এমপি এবং সংসদ সচিবালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলাপকালে পঁচাত্তর পরবর্তী সরকারসমূহের অপপ্রয়াসের বিষয় তুলে ধরতে এবং তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখেছি। তিনি আমাদের নির্দেশ দেন অবিলম্বে পঁচাত্তর ট্র্যাজেডিপূর্ব সংবিধানের সকল সংস্করণ সংগ্রহের যা তিনি তাঁর চেম্বারে বিশেষভাবে সংরক্ষণ করেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনার পর স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী সংসদের তৃতীয় অধিবেশনে ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭ তারিখের বৈঠকে তাঁর ঐতিহাসিক রুলিং প্রদান করেন:

“আমাদের সংসদে আমাদের সংবিধানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে এবং যে ধারা অনুযায়ী সেই মর্যাদা দেওয়া হয়েছে সেটা কোনো দিন বাতিল করা হয় নাই। অতএব, আমাদের জাতির পিতাকে কোনোভাবে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অবমাননা করলে সেটা সংবিধানের প্রতি অসম্মান দেখানো হয়। তাই আমি অনুরোধ করব আপনারা সবাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মরহুমের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন কথা-বার্তায়। তিনি আমাদের জাতির পিতা সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত। ... যে জাতি তার জাতির পিতাকে সম্মান দেখাতে পারে না সেই জাতির উন্নয়ন সাধন করা সম্ভব নয়। ... আমার মতে বাঙ্গালী জাতি যতদিন এই পৃথিবীতে থাকবে ততদিন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতির পিতা থাকবেন।”

হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী একটি ক্রান্তিলগ্নে জাতির পিতা সম্পর্কে একটি যথাযথ রুলিং প্রদান করাকে নিজের একটি নৈতিক ও সাংবিধানিক দায়িত্ব বলে বিবেচনা করেন। তার প্রদত্ত রুলিং এর মধ্যেই বিষয়টি প্রতিভাত হয়েছে:

“স্পিকার হিসেবে আমার পবিত্র দায়িত্ব রয়েছে সংবিধানকে সংরক্ষণ করা, সংবিধানকে রক্ষা করার শপথ আমি নিয়েছি। আমি সংবিধানকে রক্ষণ করেছি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাংবিধানিকভাবে জাতির পিতা হিসেবে অধিষ্ঠিত হয়েছেন।”

সংসদে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলের বৈঠকে সভাপতিত্ব- জাতির পিতার খুনিদের বিচারের পথ প্রশস্তকরণ:

জাতির পিতার হত্যাকান্ডের বিচার নিশ্চিত ও দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করার অঙ্গীকার দিয়ে ১৯৯৬ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে সিলেট-১ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী স্পিকার নির্বাচিত হন। জাতিকে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ড কলঙ্ক থেকে মুক্ত করার জন্য স্পিকার স্বয়ং অবিলম্বে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করা অত্যাবশ্যক বলে মতামত দেন। অনেকে এজন্য দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন। কিন্তু হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতাই অধ্যাদেশ বাতিলের জন্য পর্যাপ্ত বলে দৃঢ় অবস্থান নেন। অবশেষে তাঁর সভাপতিত্বে মহান জাতীয় সংসদে ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল হয়।

পার্লামেন্টারি কূটনীতির আওতায় জাতির পিতার রাজনৈতিক আদর্শের প্রচার:

একজন পেশাদার কূটনীতিক, সফল পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৪১তম অধিবেশন (১৯৮৬-১৯৮৭ সাল)-এর সভাপতি হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত ছিলেন হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী সিদ্ধান্তে তাঁকে ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদের স্পিকার নির্বাচিত করার বিষয়টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়। সে সময়ে পার্লামেন্টারি কূটনীতির নবজাগরণ চলছিল এবং দুটি সংস্থা যথা: ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ) এবং কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এসোসিয়েশন (সিপিএ)-এর আওতায় নিয়মিতভাবে আন্তর্জাতিক সংসদীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার পালাক্রমে দুটি ফোরামে সংসদীয় প্রতিনিধিদলসহ অংশগ্রহণ শুরু করেন। তাঁরা এসব ফোরামে জাতির পিতার রাজনৈতিক আদর্শ, তাঁর নেতৃত্বে স্বাধীনতা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা অর্জন, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠন, ১৯৭৫ সালের শোকাবহ আগস্টের নারকীয় হত্যাকান্ড এবং দীর্ঘ ২১ বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে সংসদীয় গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানের প্রয়াস সম্পর্কে বিশ্ব সম্প্রদায়কে অবহিত করেন।

এ সময় বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ও অন্যান্য পার্লামেন্টের মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ স্থাপিত এবং সংসদীয় প্রতিনিধিদল বিনিময় হয়। এসব প্রতিনিধিদলের সাথে সাক্ষাৎকালেও  স্পিকার জাতির পিতার আদর্শ, বিশেষ করে সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রতি তাঁর অবিচল আস্থা এবং নিপীড়িত জনগণের মুক্তির জন্য স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ও সাফল্য সম্পর্কে অবহিত করতেন।

ঢাকাস্থ বিদেশি রাষ্ট্রদূত এবং হাইকমিশনাররাও নিয়মিতভাবে স্পিকারের সাথে সাক্ষাৎ করতে আসতেন। স্পিকার তাদের কাছেও জাতির পিতার রাজনৈতিক আদর্শ ও স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পটভূমি তুলে ধরতেন। তাঁর অসাধারণ বাচনভঙ্গি ও বিশুদ্ধ ইংরেজিতে জাতির পিতার গৌরবগাঁথা কূটনীতিকরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনতে থাকতেন।

আলোচ্য নিবন্ধে অত্যন্ত সংক্ষিপ্তাকারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে মরহুম স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর ব্যক্তিগত হৃদ্যতা, জাতির পিতার আদর্শের প্রতি তাঁর দৃঢ় সমর্থন, জাতির পিতার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ, যুদ্ধ শেষে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য ৩৪টি দেশের স্বীকৃতি আদায় এবং জার্মানি, সুইজারল্যান্ড ও অষ্ট্রিয়ায় রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালনকালে বৈদেশিক সহযোগিতা প্রাপ্তির সুযোগ তৈরি করে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনে চলমান প্রয়াসকে সার্থক করে তুলেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট জাতির পিতার সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের পর তাঁর দুই কন্যাকে জার্মানিতে আশ্রয়দান ও তাঁদের নিরাপত্তা বিধান করেন হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী। পরবর্তী জীবনে জাতির পিতার আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য তিনি তাঁরই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং সর্বসম্মতিক্রমে স্পিকার পদে অধিষ্ঠিত হন। স্পিকার হিসেবে তিনি জাতির পিতার সাংবিধানিক মর্যাদা সমুন্নত করতে প্রয়াসী হন। তাঁর সভাপতিত্বে ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর মহান জাতীয় সংসদে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল হলে জাতির পিতার হত্যাকান্ডের বিচারের পথ প্রশস্ত এবং পরবর্তীতে খুনিদের বিচার নিশ্চিত হয়।

লেখক: সাবেক মুখ্য সচিব ও স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর সাবেক একান্ত সচিব। বতর্মানে সভাপতি, স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী স্মৃতি পরিষদ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App