×

মুক্তচিন্তা

নূর হোসেনের আত্মদান প্রেরণা জোগায়

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২২, ১২:২৮ এএম

নূর হোসেনের আত্মদান প্রেরণা জোগায়

২৫ বছরের এক যুবক জামা খুলে বুকে সাদা রঙে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’, আর পিঠে ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ লিখে আন্দোলনে অংশ নেয়। ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর দুপুরে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে উত্তাল গণআন্দোলনে মিছিলে ছিল সে। সেই মিছিলে পুলিশের গুলিতে তার মৃত্যু হয় বলে তৎকালীন নানা গণমাধ্যমে উঠে আসে। অল্প লেখাপড়ার পরই সে রাজমিস্ত্রির জোগানদারের কাজে লেগেছিল। বাবা ঢাকা শহরে অটোরিকশা চালিয়ে সংসার নির্বাহ করতেন। নূর হোসেনের এমন আত্মদান এরশাদবিরোধী আন্দোলনে প্রবল গতি সঞ্চার করেছিল। জেনারেল এরশাদের প্রায় ৯ বছরের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে একাধিকবার ঢেউয়ের মতো ওঠা-পড়া আন্দোলনে অনেক ছাত্র-তরুণ ও নাম জানা-অজানা মানুষ শহীদ হয়েছেন। এর আগেও এরশাদবিরোধী আন্দোলনে শহীদ হন সেলিম-দেলোয়ারসহ নাম না জানা অনেকে। নূর হোসেন ও পরে ১৯৯০ সালে এরশাদ সমর্থক সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন ডা. শামসুল আলম খান মিলন। ১৯৯০-এর ৬ ডিসেম্বর এরশাদের পতন ঘটে। কোনো শহীদেরই মর্যাদা খাটো করে দেখা যায় না। যুদ্ধক্ষেত্রে ন্যায়যুদ্ধে আত্মদানকারী সেনাপতিদের নাম-পরিচয় স্পষ্টই থাকে। সৈনিকদের অনেককে অজ্ঞাতনামা বলে স্মরণ করতে হয়। নিরস্ত্র জনতার গণআন্দোলনের ঘটনাপ্রবাহে বিশিষ্ট ক্ষণ ও পরিবেশ, ব্যক্তিগত ভূমিকা, আত্মদানের স্পৃহা ও পটভূমি প্রভৃতি কারণে ইতিহাসে শহীদদের স্থান ও স্মরণের স্থায়িত্ব নির্ধারিত হয়ে যায়। ১৯৮০-এর দশকের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নূর হোসেন মেহনতি মানুষের একজন সচেতন অংশগ্রহণকারী। যুবলীগের বা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সৈনিক হয়ে বন্ধুদের নিয়ে এসেছিল জনতার মিছিলে। দেশের অনেক গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের তিনটি জোটের যুগপৎ কর্মসূচিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন হয়েছিল তখন সামরিক শাসনের মধ্যে দল গঠন করে নানা ছলচাতুরীতে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা এরশাদের অতিমাত্রায় দুর্নীতিগ্রস্ত স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রসহ কয়েক দফা গণদাবি নিয়ে। সেই এরশাদের সামরিক আইন প্রত্যাহারের দাবিতে আগেই জোটগুলোর আন্দোলন শুরু হয় এবং ১৯৮৭-এর ১০ নভেম্বর ছিল এরশাদের পদত্যাগের দাবিতে অবরোধ ও সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি। সরকারই লোকসমাগম বন্ধের জন্য গণপরিবহন আটকে এমন ব্যবস্থা করে যে, হরতালের মতো অবস্থা তৈরি হয়। নূর হোসেন নিজের গায়ে স্বপ্নের কথা সেøাগানে লিখে মিছিলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আগের রাতে ঘর ছেড়ে মতিঝিলের একটি নির্মাণাধীন দালানে এক বন্ধুকে নিয়ে রাতযাপন করে। ওই বন্ধুই তার গায়ে রং লেপে লিখে দেয়। বাবা-মা খুঁজতে এলে চাদর গায়ে ঢেকে রেখে নূর হোসেন মিছে কথা বলে ওদের ফিরিয়েছিল। এটাই ছিল মূল ইতিহাস। শিক্ষায় উন্নতি, যোগাযোগের অবকাঠামো, নারীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই বিতরণ, সামাজিকভাবে সুবিধাবঞ্চিত, অসহায়, বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সুরক্ষার সোশ্যাল সেফটি নেট সাপোর্ট প্রদান, তালাকপাপ্ত নারীদের সহযোগিতা, অটিজম- বর্তমান সরকারের প্রধান উদ্যোগগুলো বাংলাদেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের জাতীয় বীর হিসেবে মর্যাদা প্রদান, আশ্রয়ণ প্রকল্প, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, নারীর ক্ষমতায়ন এবং বিভিন্ন সেক্টরের সামগ্রিক উন্নয়ন তার সরকারেরই অবদান। আমাদের একটি ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। এটিই বর্তমান নতুন প্রজন্মের প্রত্যাশা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই এ দেশের মানুষের কাণ্ডারি হয়ে কাজ করছেন। নূর হোসেনের স্বপ্ন বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিয়ে তিনি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

হীরেন পণ্ডিত : লেখক ও গবেষক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App