কপ২৭ সম্মেলন শুরু : জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিশ্বনেতাদের আন্তরিকতা জরুরি
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২২, ১২:২৪ এএম
গত কয়েক মাসে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত আবহাওয়া বিপর্যয় বন্যা ও ভূমিধসে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে, লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে। পাকিস্তান এবং নাইজেরিয়ায় ব্যাপক বন্যা, আফ্রিকা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলে তীব্র খরা, ক্যারিবীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় এবং তিন মহাদেশজুড়ে নজিরবিহীন তাপপ্রবাহ বিশ্বকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। আমেরিকান জিওফিজিক্যাল ইউনিয়ন নামক গবেষণা সংস্থা বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনে ২০৫০ সাল নাগাদ বাস্তুচ্যুত হবেন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার ১ কোটি ৩৩ লাখ মানুষ। প্রতি বছর গ্রাম ছেড়ে শহরবাসী হচ্ছেন ৪ লাখ। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২ হাজার। এদের শতকরা ৭০ ভাগ জলবায়ু উদ্বাস্তু। এমন পরিস্থিতিতে মিসরের শার্ম আল শেখ নগরীতে গত রবিবার থেকে কপ২৭ শীর্ষ সম্মেলন শুরু হয়েছে। ১৩ দিন এ সম্মেলন চলবে। যুদ্ধ ও অর্থনৈতিক অস্থিরতায় বিপর্যস্ত বিশ্বে ক্রমবর্ধমান ভয়াবহ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বিশ্বের প্রায় ২০০টি দেশ এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছে। ২৬তম জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে (কপ২৭) জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে সোচ্চার ‘ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম-সিভিএফ’-এর সভাপতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিশ্বনেতাদের সামনে ৪টি দাবি তুলে ধরেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবগুলো খুবই সময়োপযোগী ছিল। বিশ্বনেতাদের প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবের প্রতি মনোযোগী হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ১ বছর পর প্রাপ্তি কিছু নেই। এরপরও আমরা নতুন করে আশায় থাকি। কপ২৭ শীর্ষ সম্মেলনে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে প্যারিস চুক্তি, গøাসগো সম্মেলনে যেসব চুক্তি হয়েছে সেগুলোর সফল বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাওয়া। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের যেসব দেশ সবচেয়ে অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে, বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে প্রকৃতিতে যে ঋতুবৈচিত্র্য তা লোপ পাচ্ছে। এক ঋতুর সঙ্গে আরেক ঋতুর যে পার্থক্য তা মুছে যাচ্ছে। আর্দ্রতা কমে আসার পাশাপাশি তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের মাত্রা বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের দেশে অসময়ে অনাবৃষ্টি, বৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়সহ অতি গরম আবহাওয়া তৈরি হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের অনেক এলাকা প্লাবিত হতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে আমাদের উপকূলীয় এলাকা এবং সবচেয়ে বড় সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারসহ অন্যান্য এলাকা। ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মানুষের পরিবেশবিরোধী নানারকম ক্রিয়াকলাপের ব্যাপক বৃদ্ধি এবং কয়লা, পেট্রোলিয়াম ইত্যাদি জীবাশ্ম জ্বালানির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার, বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড, ক্লোরোফ্লুরো কার্বন, মিথেন, ওজোন, নাইট্রাস অক্সাইড ইত্যাদি ‘গ্রিনহাউস’ গ্যাসের উপস্থিতি বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে বায়ুমণ্ডলের নিচের স্তরে উষ্ণতা বেড়ে গিয়ে তা প্রভাবিত করছে পৃথিবীর জলবায়ুকে। বিশেষ করে তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের এই পরিবর্তনগুলো পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে নানারকমের স্বাস্থ্য সমস্যা ডেকে আনছে। সংকট সমাধানে দীর্ঘমেয়াদি ও সুপরিকল্পিত কৌশল প্রণয়নের তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বাংলাদেশের কী করা উচিত, বিশ্বের কী করা উচিত। এ বাস্তবতায় জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশগত চ্যালেঞ্জগুলো বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নকে সহায়তার জন্য প্রণীত হয়েছে বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০। এটি অত্যন্ত তথ্যবহুল ও বিজ্ঞানভিত্তিক একটি পরিকল্পনা, যা বাস্তবায়নের মাধ্যমেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।