×

জাতীয়

‘অভিন্ন প্ল্যাটফর্ম’ গড়তে তৎপর ইসলামী দলগুলো

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২২, ০৯:০৬ এএম

‘অভিন্ন প্ল্যাটফর্ম’ গড়তে তৎপর ইসলামী দলগুলো

ফাইল ছবি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ছোট-বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মেরুকরণ দিন দিন দৃশ্যমান হচ্ছে। ছোট দলগুলোর মধ্যে জোট গড়া নিয়ে আগ্রহ, উদ্যোগ আর দৌড়ঝাঁপ চলছে। বৈরিতা ভুলে কাছাকাছি আসার উদ্যোগ নিয়েছেন দলগুলোর নেতারা। একইভাবে অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে সমমনা ইসলামী দলগুলো একটি অভিন্ন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে তৎপর হয়েছে। এ উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া। এ জন্য সমমনা ইসলামী দলগুলো ইতোমধ্যে নিজেদের মধ্যে সংলাপ শুরু করেছে। মূলত, ইসলামী আন্দোলনের পক্ষ থেকে এই সংলাপের উদ্যোগ নেয়া হয়। এই উদ্যোগে সরকারেরও সায় রয়েছে। অন্যদিকে, ঘটনাক্রমের দিকে বিএনপিও সতর্ক দৃষ্টি রাখছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সমঝোতার ভিত্তিতে প্রার্থী দিতে ধর্মভিত্তিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে ‘নির্বাচনী সমঝোতা’ গড়ার চেষ্টা করছে। এ লক্ষ্যে তারা নির্বাচনকেন্দ্রিক সমঝোতার লক্ষ্যে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করেছে। অতীত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ইসলামী দলগুলোর নেতারা মনে করেন, ‘একলা চলো’ নীতির ফল ভালো হয়নি। তাই আগামীতে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইসলামী দলগুলো জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনকে প্রাধান্য দিলেও দলীয় কৌশল প্রণয়ন করছে এককভাবে। তারা বলছেন, ক্ষমতার রাজনীতিতে ইসলামী দলগুলোর তেমন গুরুত্ব না থাকলেও ভোটের মাঠে একটা প্রভাব আছে। সঙ্গত কারণেই দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন সময়ে ইসলামী দলগুলোর সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করেছে। তবে অতীতে কোনো জোটে গিয়ে ইসলামী দলগুলোর তেমন লাভ হয়নি। তাই এখন সময় এসেছে নিজেদের মধ্যে ঐক্য গড়ার। এই ঐক্যের মধ্য দিয়ে দেশে তৃতীয় একটি রাজনৈতিক শক্তির উত্থান হবে।

জানা যায়, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ইসলামপন্থী দলের সংখ্যা ১০। এর মধ্যে পাঁচটি দল একসময় বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে ছিল। মূলত এই দলগুলোকে নিয়েই একটি নির্বাচনী সমঝোতার চেষ্টা হচ্ছে। দলগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন। এর বাইরে আছে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। কওমি মাদ্রাসাগুলোর ছাত্র-শিক্ষার্থীদের মধ্যে মূলত এই কটি দলের প্রভাব রয়েছে। জানা গেছে, ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভোটের রাজনীতিতে বর্তমানে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। আগামী নির্বাচনে ইসলামী দলগুলোকে এক জায়গায় আনার প্রথম উদ্যোগটি আসে তাদের পক্ষ থেকে। এ লক্ষ্যে তারা ইতোমধ্যে খেলাফত আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, নেজামে ইসলাম পার্টি (একাংশ), মুসলিম লীগসহ (একাংশ) ছয়-সাতটি দলের সঙ্গে কথা বলেছে। এ উদ্যোগ চলমান আছে জানিয়ে দলটির মহাসচিব ইউনুস আহম্মেদ বলেন, যদি নির্বাচন করার পরিবেশ থাকে, তাহলে এবার আমরা সব ইসলামী দলকে নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে চাই। এ লক্ষ্যে আমরা সমমনা দলগুলোকে নিয়ে একটি জোট গড়ার চেষ্টা করছি।

বর্তমান সাংবিধানিক ব্যবস্থায় দলীয় সরকারের অধীনে সম্ভাব্য জোট দ্বাদশ নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের নির্বাচনের শতভাগ প্রস্তুতি থাকবে। তবে, নির্বাচনে যাব কিনা, সেটা পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। কি ধরনের পরিবেশ আশা করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার কিংবা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হবে নির্বাচনকালীন সময়ে এবং স্বচ্ছ একটি নির্বাচন কমিশন হবে। তাহলেই কেবল আমরা নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে বিবেচনা করতে পারি। এর বাইরে নির্বাচনে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের একজন শীর্ষ নেতা বলেন, আমাদের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ের কথাবার্তা চলছে। আমরা রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর গভীর নজর রাখছি। বিশেষ করে, আগামী নির্বাচন কীভাবে হবে তার দিকে সবাই তাকিয়ে আছে। সবকিছুই নির্ভর করছে রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর। সামনের দিনের পরিস্থিতিই আমাদের পথ বাতলে দেবে, আমরা কোন পথে যাব। তবে আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।

এ বিষয়ে ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, আমরা বড় দলের সঙ্গে জোট গড়ার চিন্তা বাদ দিয়ে নিজেদের মধ্যে একটা সমঝোতা গড়ে তুলতে চাই। এটা ইসলামের জন্য এবং দেশের মানুষের জন্য মঙ্গল হবে। অন্য কোনো জোট বা বিকল্প কিছু আমরা চিন্তা করছি না। মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাকের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিস দীর্ঘ সময় বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক ছিল। কিন্তু নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে গত বছরের ১ অক্টোবর জোট ছাড়ে দলটি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই দলের শীর্ষ এক নেতা বলেন, বড় কোনো দলের সঙ্গে আর জোটে যাব না। আমরা নিজেরা একটা সমঝোতা গড়ে জনগণের কাছে গেলে তারাও আমাদের ভালোভাবে নেবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কী হয় এবং নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে, তার উপর ভিত্তি করে সমঝোতা হবে। এখন সব দল যার যার মতো করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক আরো বাড়ানোর কৌশল নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App