×

সারাদেশ

নদী রক্ষায় কর্ণফুলি ড্রাইডক নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২২, ১০:৪৬ পিএম

নদী রক্ষায় কর্ণফুলি ড্রাইডক নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এক পর্যালোচনা সভায় নদী কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী। ছবি: ভোরের কাগজ

নদী রক্ষায় কর্ণফুলি ড্রাইডক নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ
নদী রক্ষায় কর্ণফুলি ড্রাইডক নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ
নদী রক্ষায় কর্ণফুলি ড্রাইডক নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ

কর্ণফুলি নদীতে মাঝিদের ব্যস্ততা। ছবি: ভোরের কাগজ

নদী রক্ষায় কর্ণফুলি ড্রাইডক নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ

কর্ণফুলি।

 সব অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা নদী কমিশনের
কর্ণফুলী নদীর তীরে নির্মাণাধীন কর্ণফুলী ড্রাইডক লিমিটেডসহ আশপাশের সকল স্থাপনার নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী। এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে সাতদিনের মধ্যে নদী রক্ষা কমিশনে প্রতিবেদন জমা দিতে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বুধবার (৯ নভেম্বর) চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ‘চট্টগ্রাম জেলার কর্ণফুলী নদীসহ অন্যান্য নদ-নদী, খাল-বিল, জলাশয় ও জলাধার এর দখল ও দূষণ’ সংক্রান্ত এক পর্যালোচনা সভা শেষে নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান এ নির্দেশনা দেন। [caption id="attachment_381568" align="aligncenter" width="700"] চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এক পর্যালোচনা সভায় নদী কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী। ছবি: ভোরের কাগজ[/caption] তিনি বলেন, কর্ণফুলী ড্রাইডকের বিষয়ে একটি বিশেষজ্ঞ টিম করা হবে। সেই টিম নির্ধারণ করবে সেখানে কী হয়েছে এবং কীভাবে নদী উদ্ধার করা হবে। ততদিন কাজ বন্ধ থাকবে। নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, কর্ণফুলী নদী শুধু চট্টগ্রামের জন্য নয় সারাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ নদী বাংলাদেশের লাইফ লাইন। এই নদী দিয়ে দেশের ৯৫ শতাংশ আমদানি-রফতানি পরিচালিত হয়। কর্ণফুলী নদীর প্রবাহ বা নাব্যতা যদি কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, মঙ্গলবার সকালে আনোয়ারার বদলপুরা এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির পাশে কর্ণফুলী ড্রাইডকসহ আরও কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। আমরা সরেজমিনে ঘুরে ও বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখেছি এই প্রতিষ্ঠানগুলো পুরোপুরি নদী দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে। দখল যে হয়েছে সেগুলো অবমুক্ত করতে হবে। তিনি বলেন, কর্ণফুলী ড্রাইডকের প্রায় সব অংশই নদীর মধ্যে অবস্থিত। এই ফিশারিঘাট (চাক্তাই ভেড়া মার্কেটের বিপরীতে জাতীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠিত নতুন ফিশারি ঘাট), এখানে যে বরফকল সবই নদীর ভেতর ছিল। এটা খুব দুর্ভাগ্যজনক। এখানে অনেক সরকারি সংস্থা আছে। সিটি কর্পোরেশন, সিডিএ, বন্দর, জেলা প্রশাসনের চোখের সামনে একটা নদী কী করে দখল করে ফেলল। এটা মেনে নেওয়া যায় না। প্রসঙ্গত চট্টগ্রামের আনোয়ারার বদলাপুর মৌজায় বন্দর কর্তৃপক্ষ ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে ইজারা নেওয়া এবং ব্যক্তি মালিকানা থেকে কেনা ৩০ একর জমিতে বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে তোলা হচ্ছে কর্ণফুলী ড্রাইডক। কর্ণফুলী নদী রক্ষায় বিভিন্ন সংগঠনের কর্মসূচি : এদিকে হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী কর্ণফুলী নদী তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দাবিতে অনশন ধর্মঘট পালন করছে চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন। বুধবার (৯ নভেম্বর) ভোর ৬টা থেকে টানা ৮ ঘণ্টা নদীর মাঝখানে অনশন করেছে দুই শতাধিক সাম্পান মাঝি। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদীর তীরে টিকে থাকা আড়াই শতাধিক বনজ ও ওষুধি গাছ সংরক্ষণ করার দাবি জানান তারা। নইলে আদালতের আদেশ অবমাননার অভিযোগ এনে আদালতে যাওয়ারও কথা জানান তারা। নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান বলেন, ২ হাজার ১৮১ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সুনির্দিষ্ট আদেশ থাকা সত্ত্বেও তা সাড়ে তিন বছরেও কেন উচ্ছেদ করা হচ্ছে না। আমরা কি ধরে নেব সরকারের চেয়ে জেলা প্রশাসনের চেয়ে দখলদারগণ শক্তিশালী? এতে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের উপদেষ্টা মেরিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নোমান আহমদ সিদ্দিকি, পরিবেশ সংগঠন গ্রিন ফিঙ্গার্সের কো ফাউন্ডার আবু সুফিয়ান রাশেদ, রিতু ফারাবি, কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি জাফর আহমদ, সহ-সভাপতি লোকমান দয়াল প্রমুখ। [caption id="attachment_381573" align="aligncenter" width="1600"] কর্ণফুলি।[/caption] এছাড়া কর্ণফুলী নদী রক্ষায় অবিলম্বে ৮ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের কাছে লিখিত প্রস্তাব দিয়েছে পরিবেশবাদী সংগঠন পিপল’স ভয়েস। মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরীর কাছে এসব প্রস্তাব জানান সংগঠনের সভাপতি শরীফ চৌহান, সাংবাদিক মিঠুন চৌধুরীসহ সংগঠনের নেতারা। পিপল’স ভয়েস যেসব প্রস্তাব দিয়েছে, তার মধ্যে আছে- কর্ণফুলীর মোহনা থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মতে নদীর জমি দখলমুক্ত করা, আদালতের নির্দেশে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন প্রণীত অবৈধ স্থাপনার তালিকা জনসমক্ষে প্রকাশ এবং তালিকা অনুসারে উচ্ছেদ কার্যক্রম নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে শেষ করা, নদীর তলদেশ ভরাট হওয়া বন্ধে নিয়মিত ড্রেজিং ও সংযুক্ত খালসমূহে পানি প্রবাহ অবাধ করতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ। নদীর দূষণ ঠেকাতে দুপাড়ে অবস্থিত শিল্প কারখানাগুলোতে বাধ্যতামূলক ইটিপি স্থাপন এবং ইটিপি কার্যকর আছে কি না তা নিশ্চিত করতে পরিবেশ অধিপ্তরের নিয়মিত পরিদর্শনের দাবি জানানোর পাশাপাশি প্রস্তাব করা হয় পয়োবর্জ্য দূষণ ঠেকাতে মহানগরীর খালগুলোর মুখে পরিশোধনে প্ল্যান্ট স্থাপন এবং নদীতে চলাচলকারী লাইটারসহ ছোট নৌযানের জ্বালানি ও বর্জ্য নদীতে ফেলা বন্ধ করতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের। সার্বিকভাবে কর্ণফুলী নদীকে দখলমুক্ত রাখতে উদ্ধার হওয়া নদীর জমি পুনর্দখল ঠেকাতে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নদীর জমিতে দেওয়া অবৈধ লিজ বাতিল করার দাবি জানানো হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App