×

মুক্তচিন্তা

আসন্ন সংকটে আমাদের করণীয়

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২২, ১২:২৫ এএম

গভীর উৎকণ্ঠা, উদ্বেগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি। ধেয়ে আসছে অর্থনৈতিক, জীবনযাত্রার খাদ্য সংকট। আমাদের কপালেও চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ গোটা বিশ্বের অর্থনীতি এবং দৈনন্দিন জীবনযাপনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বিশ্বব্যাপী মন্দার আক্রমণের শিকার আমরাও হতে পারি। বিশ্ব অর্থনীতি তাই আমাদের সেই অগ্রীম বার্তাও দিয়ে রেখেছে। এই সতর্কবার্তাকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করার মধ্য দিয়ে আমাদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করতে হবে এবং জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকার এবং রাষ্ট্র উভয়কেই জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা প্রয়োজন। আমাদের যে পরিমাণ সম্পদ, মেধা, শ্রমশক্তি আছে যদি আমরা সেগুলোর উপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারি তবে ২০২৩ সালে আসন্ন অর্থনৈতিক এবং খাদ্য সংকট মোকাবিলা করা খুব কঠিন কাজ হবে না। যেই দেশে এক সময় টাকায় আট মণ চাল পাওয়া যেত সেই দেশে খাদ্যের খুব সংকট কিংবা দুর্ভিক্ষ হতে পারে না। আসন্ন সংকট মোকাবিলায় প্রথমেই আমাদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা, অধিক প্রয়োজনীয়তাকে চিহ্নিত করা এবং এ ক্ষেত্রে দেশের বুদ্ধিজীবী, অর্থনীতিবিদ, কৃষিবিদ, শিক্ষাবিদ ও দেশবরণ্যে জাতীয় নেতাদের নিয়ে একটি সংলাপ ও আলোচনা নিয়ে করণীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যেতে পারে। আলোচনা এবং সংলাপ থেকে চুম্বক বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে পারলে আমরা খুব সহজেই দৃঢ়তার সঙ্গে সংকটগুলো মোকাবিলা করতে পারব বলে বিশ্বাস করি। রাষ্ট্রকে সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করতে হবে। আজকের স্কুল-কলেজ পড়–য়া ছাত্রছাত্রীরাই তারুণ্য শক্তি। এই তারুণ্য শক্তিকে কাজে লাগানোর কৌশল ও উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। দেশটা ভালো থাকলে আমরা ভালো থাকব। তাই দেশ গড়ার দায়িত্বটাও আমাদের ঘাড়েই নিতে হবে। আমাদের দেশের কর্তাব্যক্তিদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ও সচেতনতা না আসলে এই সমস্যার আশু সমাধান সম্ভব নয়। জাতীয় চেতনাকে, মানবিক মূল্যবোধ ও দেশপ্রেমকে জাগিয়ে তুলতে হবে দেশের চলমান উন্নয়নকে গতিশীল রাখতে এবং আগামী ২০২৩ খ্রিস্টাব্দের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক এবং খাদ্য সংকটকে মোকাবিলা করতে গ্রামীণ অর্থনীতিকে আরো সচল ও গতিশীল করে তুলতে হবে। চলমান সংকটকে দক্ষতা ও পরিকল্পনামাফিক মোকাবিলা করতে পারলেই ২০২৩ সালের আসন্ন সংকট মোকাবিলা করা সহজ হবে। মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে হবে। আসন্ন ও চলমান সংকট মোকাবিলায় ঘুষ-দুর্নীতি যে কোনো মূল্যে বন্ধ করা, টাকা পাচার রোধ করা, পাচারকৃত টাকা ফেরত আনার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা, খেলাপি ঋণের পরিমাণ আর বৃদ্ধি না করা, খেলাপি ঋণ উদ্ধারে শতভাগ আন্তরিক হওয়া, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কঠোর হওয়া, ব্যবসায়ীদের ওপর রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা, কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের উপযুক্ত মূল্য নির্ধারণ করা বিষয়গুলোকে বেশি গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন বলে সাধারণ মানুষ মনে করেন। সরকারি, রাষ্ট্রীয় এবং প্রশাসনিক খাতে ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করার পাশাপাশি ব্যয় সংকোচন নীতি কার্যকর করা। দেশ ভালো থাকলে আমরা ভালো থাকব আর দেশ সংকটে পড়লে আমরা সাধারণ মানুষ গভীর সংকটে পড়ব। দেশকে যারা সংকটের দিকে নিয়ে যাওয়ার নীল ষড়যন্ত্র করছে তাদের বিষয়ে সজাগ ও সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। দেশটাকে ভালোবাসতে হবে নিজের সন্তানের মতো করে। সন্তানের অসুস্থতা কিংবা কোনো দুর্ঘটনা কিংবা কোনো দুঃসংবাদে যেমন উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, অস্থির হয়ে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করি, নিজেকে উজাড় করে দিই সন্তানের মঙ্গলে। ঠিক তেমনি দেশের জন্য ভাবতে না পারলে, কিছু করতে না পারলে আসন্ন ও চলমান সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না। আমাদের উন্নয়ন উন্নতির প্রধান প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে ঘুষ-দুর্নীতি, ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট দৌরাত্ম্য, অন্ধ বিশ্বাস, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজগুলো শেষ না করা। আজকাল ঘুষ-দুর্নীতিকে অনেকে অধিকার বলে মনে করেন। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত না করা চলমান এবং আসন্ন সংকটের একটি অন্যতম প্রধান কারণ। নতুন করে ঋণ নয় বরং আমাদের নিজেদের পুঁজি উদ্ধারে তৎপর হওয়া জরুরি। দেশজ উৎপাদনের প্রতি মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। সময় হাতছাড়া করার খেসারত শুধু কোনো একজনকে নয়, তার পরিবার, সমাজ এবং জাতিকে দিতে হবে- এই বোধটুকু তাদের মধ্যে জাগিয়ে তোলা জরুরি।

সুধীর বরণ মাঝি : শিক্ষক, হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয়, চাঁদপুর। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App