×

সাহিত্য

মাহবুব উল আলম চৌধুরীর জন্মবার্ষিকী পালিত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০২২, ০৭:২৪ পিএম

মাহবুব উল আলম চৌধুরীর জন্মবার্ষিকী পালিত

সোমবার মাহবুব উল আলম চৌধুরীর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত একক বক্তৃতা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রাবন্ধিক-গবেষক অধ্যাপক মোরশেদ শফিউল হাসানসহ অতিথিরা। ছবি : ভোরের কাগজ।

দাঙ্গাবিরোধী সংখ্যা প্রকাশ করে প্রজ্বলিত করেন চেতনার অনির্বাণ শিখা

অমর একুশের প্রথম কবিতা কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’র রচয়িতা কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরী। তার কবিতাটি বাঙালি জাতিকে অগ্নি শিখার মত প্রজ্জ্বলিত করেছিলো। পাকিস্তানি শাসকদের ফাঁসির দাবি করা মোটেও সহজ কথা নয়। একটি মাত্র কবিতা শাসক গোষ্ঠীকে এতটা তীব্রভাবে চিনিয়ে দিয়েছিলো যা শত শত পৃষ্ঠা গবেষণা দিয়েও সম্ভব হয়নি। এটা আকস্মিকভাবে হয়নি, এই অমর কবিতার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে মাহবুব উল আলম চৌধুরীর চেতনার মধ্যে।

সাংস্কৃতিক চেতনায় উদ্ধুদ্ধ মাহবুব উল আলম চৌধুরী ছোটকাল থেকেই রাজনীতি সচেতন ছিলেন। তিনি বিপ্লবী কবি সুকান্ত, সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতার দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। চট্টগ্রামের ছাত্র আন্দোলন, রাজনৈতিক উদ্যোগও সাংস্কৃতিক কর্মধারার সাথে খুব ঘনিষ্ঠ ভাবে সংশ্লিষ্ট ছিলেন কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরী। ১৯৫২ সালে তিনি ছিলেন চট্টগ্রাম প্রাদেশিক ভাষা আন্দোলন কমিটির সদস্য। মুক্তবুদ্ধি, মুক্তিযুদ্ধ, অসাম্প্রদায়িকতা, ধর্মনিরপেক্ষতা এসবই তাকে প্রতিবাদী করেছে।

এই বিশিষ্ট কবি, সাংবাদিক ও ভাষাসংগ্রামীর ৯৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার (৭ নভেম্বর) সকালে একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে বাংলা একাডেমি একক বক্তৃতানুষ্ঠানের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে মাহবুব উল আলম চৌধুরী ও তার সীমান্ত পত্রিকা শীর্ষক একক বক্তৃতা প্রদান করেন প্রাবন্ধিক-গবেষক অধ্যাপক মোরশেদ শফিউল হাসান। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির সচিব এ. এইচ. এম. লোকমান।

একক বক্তা মোরশেদ শফিউল হাসান বলেন, মাহবুব উল আলম চৌধুরী সম্পাদিত সীমান্ত পত্রিকাটি আমাদের সাময়িকপত্রের ইতিহাসে অবিস্মরণীয়। ভারতভাগ ও পাকিস্তান সৃষ্টির মাত্র তিনমাসের মাথায় ১৯৪৭ সালের নভেম্বর মাসে পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী জেলা চট্টগ্রাম থেকে সীমান্ত পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ এই পাঁচ বছরই ছিল সীমান্ত-এর আয়ুষ্কাল। সম্পাদক মাহবুব উল আলম চৌধুরীর ধারণা- মতে এই সংক্ষিপ্ত সময়কালে সীমান্ত-এর আটচল্লিশটির মতো সংখ্যা বেরিয়েছিল। বৈরী পরিস্থিতিতে এবং সাম্প্রদায়িক উন্মত্ততার কালে সীমান্ত পত্রিকার দাঙ্গাবিরোধী সংখ্যা প্রকাশ করে মাহবুব উল আলম চৌধুরী প্রজ্বলিত করেছেন চেতনার অনির্বাণ শিখা।

তিনি বলেন, প্রথম জীবনে যে অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক চেতনা, সংগ্রামী মানবতা ও শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থের সঙ্গে একাত্মতাবোধ তাকে প্রাণিত করেছিল, আমৃত্যু তিনি তাকে ধারণ ও বহন করেছেন; পরবর্তী জীবনে তার কাব্যচর্চা, সাংবাদিকতা, স্মৃতিচারণমূলক রচনা ইত্যাদিতে যার প্রতিফলন ঘটেছে।

মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, মাহবুব উল আলম চৌধুরী একাধারে কবি, সাংবাদিক, ভাষাসংগ্রামী এবং সাংস্কৃতিক সংগঠক। ভাষা আন্দোলনের অমর কবিতার লেখক হিসেবে আমাদের ইতিহাসে তিনি অমর হয়ে থাকবেন। এছাড়াও সারাজীবন কবিতায় ও সক্রিয়তায় তিনি শুদ্ধতা, সদাচার ও মানবমঙ্গলের গান গেয়েছেন। তিনি বলেন, মাহবুব উল আলম চৌধুরী সম্পাদিত সীমান্ত পত্রিকার সবগুলো সংখ্যা সন্ধান করে বাংলা একাডেমি সংগ্রহ আকারে প্রকাশ করতে আগ্রহী যার মধ্য দিয়ে সংস্কৃতি ও অসাম্প্রদায়িকতার জন্য বাঙালির সংগ্রামের প্রামাণ্যরূপ খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে।

এ. এইচ. এম. লোকমান বলেন, আমাদের প্রগতিশীল শিল্পসাহিত্য ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অবিকল্প নাম ছিলেন মাহবুব উল আলম চৌধুরী। ভাষা আন্দোলনের প্রথম কবিতার এই কবির প্রতি জাতি হিসেবে আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App