×

মুক্তচিন্তা

বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির লাগাম টানুন

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২২, ০১:৩৬ এএম

দেশে বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত একটি আইন রয়েছে। কিন্তু এ আইনের প্রচার না থাকায় অধিকাংশ মানুষ এ ব্যাপারে অজ্ঞ। এর ফলে ঢাকাসহ অন্যান্য শহরে বাড়িওয়ালাদের দৌরাত্ম্য সহ্য করে ভাড়াটিয়ারা বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে। কোনো কারণ ছাড়াই বছর বছর ভাড়া বৃদ্ধি করা যেন রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। অনেক ভাড়া বাড়িতে প্রয়োজনীয় পানি ও গ্যাস পাওয়া যায় না। কিন্তু তাতে কী! ভাড়া বাড়ানোর ক্ষেত্রে তাদের কোনো ধরনের শিথিলতা নেই। মূলত বাড়ি ভাড়া আইনের প্রয়োগ, এ আইন বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও সঠিক নির্দেশনার অভাবে বাড়িওয়ালারা দিন দিন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে। অধিকাংশ মানুষ জানে না, কোথায় গেলে এ বিষয়ে সঠিক প্রতিকার পাওয়া যাবে। ফলে দেশে আইন থাকা সত্ত্বেও বাড়িওয়ালাদের অনৈতিক ভাড়া বৃদ্ধির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাচ্ছে না। শহরের প্রতিটি ওয়ার্ড বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে বাড়ি ভাড়া আইন তার এলাকার বাড়িওয়ালারা মেনে চলছে কি না তা তদারকির দায়িত্ব নিতে হবে। যৌক্তিক মাত্রায় বাড়ি ভাড়া নির্ধারণের পাশাপাশি আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা রাখতে হবে, যা অধিক জরুরি। কেননা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাজধানীতে নীরবে বাড়ছে এই বাসা ভাড়া, দেখার যেন কেউ নেই, যা সত্যি দুঃখজনক। বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে বেড়েছে ব্যয়, বাড়েনি মানুষের আয়। ঠিক এ সময়ে বাসা ভাড়া বাড়াচ্ছেন বাড়িওয়ালারা, যা সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। শুধু কি তাই, ক্রমেই বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। পাশাপাশি বেড়েছে সংসারের খরচও, ভাঙতে হচ্ছে সঞ্চয়। সব মিলিয়ে চরম হিমশিমে নগরীর মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ। ফলে কেউ ঝুঁকছেন সাবলেটে, কেউ যাচ্ছেন এক রুমের আধাপাকা বা টিনশেডের বাড়িতে। আবার কেউ যাচ্ছেন শহর ছেড়ে গ্রামে কিংবা ঢাকার আশপাশের নিম্ন ভাড়ার বাড়িগুলোতে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খরচের সঙ্গে সমন্বয় করতেই ভাড়াটিয়াদের কেউ ফ্ল্যাট শেয়ারে ঝুঁকছেন, কেউ পরিবার গ্রামে পাঠাচ্ছেন। দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিকতার কারণে খরচা বেড়ে যাওয়ায় এমনটা হচ্ছে নগরবাসীর। তাই এটি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি কমাতে সরকারকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। প্রকাশিত তথ্য মতে, ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) এক পরিসংখ্যান বলছে, গত ২৫ বছরে রাজধানীতে বাড়ি ভাড়া বেড়েছে ৪০০ শতাংশ। একই সময়ে নিত্যপণ্যের যে দাম বেড়েছে, সেই তুলনায় বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির হার দ্বিগুণ। সংগঠনটির অন্য এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ঢাকার ২৭ শতাংশ ভাড়াটিয়া আয়ের প্রায় ৩০ শতাংশ, ৫৭ শতাংশ ভাড়াটিয়ার প্রায় ৫০ শতাংশ ও ১২ শতাংশ ভাড়াটিয়া আয়ের প্রায় ৭৫ শতাংশ টাকা ব্যয় করেন বাসা ভাড়া পরিশোধে। এই অবস্থায় জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি। বাড়তি দামের প্রভাব স্বাভাবিকভাবেই পড়ছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায়। বাড়ি ভাড়া ও নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় অনেকে বাসা ছাড়ছেন। তাই প্রত্যেক মাসে এক-দুটি ফ্ল্যাট খালি থাকছেই। আবার দুই পরিবার মিলে বাসা নিচ্ছেন অনেকে। সাবলেট দিলে ভাড়াটিয়া পাওয়া যাচ্ছে সহজেই। তা না হলে প্রত্যেক মাসে ফ্ল্যাট খালি থাকছেই। তাই সাবলেট দিতে ও নিতে আগ্রহী ভাড়াটিয়া ও বাড়িওয়ালারা। বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে বাড়ির মালিকরা দফায় দফায় ভাড়া বাড়িয়েই চলেছেন। ভাড়াটিয়া পরিষদের সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য মতে, বাড়িওয়ালারা সৃজনশীল পদ্ধতিতে বাসা ভাড়া বাড়াচ্ছেন। যেমন জানুয়ারিতে একবার বাড়াবে আবার ৬ মাস গেলেই আবার বাসা ভাড়া বাড়াবে। তারা ভাড়াটিয়াদের মানুষই মনে করে না। মন চাইলেই তারা ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। এতে কেউ ফ্ল্যাট শেয়ার করে থাকছেন। এমনকি অনেকেই গ্রামে পরিবার পাঠাতে বাধ্য হচ্ছেন। এমন এক পরিস্থিতিতে ভাড়া নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন অধিক জরুরি বলে মনে করছি। পাশাপাশি বিদ্যমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। মো. আতিকুর রহমান লেখক, ঢাকা। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App