×

জাতীয়

৭২’র সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা জরুরি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২২, ০৯:২৯ পিএম

৭২’র সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা জরুরি

শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবিধান দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খিস্টান ঐক্য পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা। ছবি : সংগৃহীত

রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম-এর কথা বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা উল্লেখ করে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু প্রণীত সংবিধান ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন বক্তারা। শনিবার (৫ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবিধান দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খিস্টান ঐক্য পরিষদ আয়োজিত আদিবাসীদের আদিবাসী পরিচয়ে স্বীকৃতি দিয়ে ৭২-র বঙ্গবন্ধুর সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা চাই শীর্ষক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে বক্তারা এমন দাবি জানান। প্রসঙ্গত, দেশে প্রথমবারের মত গত ৪ নভেম্বর সংবিধান দিবস পালিত হয়।

সভায় ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, একাত্তরের গণহত্যা ধর্মের নামেই হয়েছে। আর এসব হয়েছে ইসলাম ধর্মের নামে। আর সে কারণে বঙ্গবন্ধু ধর্মের নামে রাজনীতি নিষেধ করেছিলেন। ধর্মের পবিত্রতা রক্ষা করার জন্য ধর্মকে রাষ্ট্র ও রাজনীতি থেকে পৃথক করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে এই ’৭২-এর সংবিধানকে সাম্প্রদায়িকীকরণের জন্য। এই সংবিধানকে দুই জেনারেল জিয়া ও এরশাদ কলংকিত করেছেন। আমরা আশা করেছিলাম পঞ্চদশ সংশোধনীর আগে তা যেন আগের মতো হয়ে যায়।

সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সর্বকনিষ্ঠ সদস্য অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার আগ পর্যন্ত সকল রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান চার ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ করে শুরু হতো। এখন আর কোনো অনুষ্ঠানে তা হয় না। বঙ্গবন্ধু এপার বাঙ্গলার বাঙ্গালী জনগণকে নিয়ে স্বাধীন জাতীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। অথচ আমরা আর জনগণের কথা বলি না। মুক্তিযুদ্ধ ছিলো সাধারণ মানুষের, খেটে খাওয়া মানুষের। তাদের সাথে সামরিক আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যরাও ছিলো।

তিনি আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার পঞ্চদশ সংশোধনী করেছে। কিন্তু জাতির পিতার হত্যাকারীরা সংবিধানের প্রস্তাবনার মাথায় যে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম যোগ করলো, একই ধারায় রাষ্ট্রধর্ম সংযুক্ত করলো তাকে আরও পাকাপোক্ত করেছে। এটি নিঃসন্দেহে দুঃখ ও দুর্ভাগ্যজনক। অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হিন্দুদের বাড়ি পোড়ানো হল যে এমপি’র ইন্ধনে তাকেই সংসদে ডেপুটি স্পীকার করা হয়েছে। আবু সাইয়িদ বলেন, সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থেকে তা রেখে দিয়েছে। প্রজাতন্ত্রের ৭ অনুচ্ছেদ, রাষ্ট্র পরিচালনার ২৭ অনুচ্ছেদ, মৌলিক অধিকার ও ৫১টি জায়গায় হাত দেয়া যাবে না। সংশোধন করা যাবে না। কেন করা যাবে না?

নাট্যকার মামুনুর রশীদ বলেন, আমাদের জনগণ সংবিধান বোঝে না আর বাজেট বোঝে না। আর সংবিধান না বোঝার ফলে তারা কিছুই জানতে পারে না। যখন এরশাদ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করেছিলেন তখন আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম। কিন্তু সেটা বড় আকার নেয়নি। তিনি বলেন, আমাদের এখানে সব শাসক গোষ্ঠী পাকিস্তানকে দোষারোপ করে। আমি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র ছিলাম। আর আমাদের একটা বিষয় পড়ানো হতো- কনস্টিটিউশনাল ডেভেলভমেন্ট অফ পাকিস্তান। সেখানে প্রথম কথাটাই ছিল- পাকিস্তান একটি গবেষণাগার। পাকিস্তানের একটি সংবিধান হয়েছে, পরে স্থগিত ওইটি হয়েছে। আমাদের দেশেও তাই। ৭৫-এর হত্যাকাণ্ডের পর তা স্থগিত হয়েছে। আর স্থগিত হওয়া সংবিধানে আবার ঢুকে গেছে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বিধান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আবু আহসান মো. সামসুল আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বঙ্গবন্ধু ৪ নভেম্বর সংসদে যে ভাষণ দিয়েছিলেন সেখানে তিনি চারটি খুঁটির কথা বলেছিলেন। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরেপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ। এই চারটি খুঁটি তিনি স্থাপন করেছিলেন ও বলেছিলেন। গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি ও ঐক্য পরিষদের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, জেনারেল জিয়াউর রহমান বিসমিল্লাহ লাগিয়েছেন, আল্লাহর ওপর অগাধ বিশ্বাস ইত্যাদি। আর জিয়াউল হক পাকিস্তানে করলেন আর্টিকেল-২। আর তার দেখাদেখি আরেক জেনারেল এখানে রাষ্ট্রধর্ম করলেন। অনেকে সংশোধনী নিয়ে তো বড় বড় বুলি আওড়াচ্ছেন। অমুক করেছে, তমুক করেছে, আমাদের কিছু করার নাই। ওই ব্যাপারে কোনো কথা নেই। উল্টো পঞ্চদশ সংশোধনীতে ওইটা আরো পাকা করে ফেলেছে। তিনি বলেন, এই সংবিধানে বঙ্গবন্ধু আছেন, জেনারেল জিয়া আছেন, জিয়াউল হক আছেন, এরশাদ আছেন। আবার শেখ হাসিনাও আছেন। কারণ পঞ্চদশ সংশোধনী শেখা হাসিনা করেছেন। ভবিষ্যতে এগুলো নিয়ে আলাপ হবে।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্যপরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাণা দাশগুপ্ত বলেন, বাহাত্তরের সংবিধান পাকিস্তানি মোড়কের সংবিধানের অনুরূপে আজও আবর্তিত। রাষ্ট্র, রাজনীতি, শিক্ষানীতি, সমাজনীতি, প্রশাসন সবটাই আজ মুক্তিযুদ্ধের মৌল চেতনা থেকে অনেক দূরে ছিটকে পড়েছে। বিগত তের বছরে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলের সরকার দেশের অবকাঠামোগত প্রচুর উন্নয়ন করেছে। কিন্তু আপামর বাঙালি জাতি মননে-মানসিকতায় ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাহাত্তরের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের বিকল্প নেই।

রাণা দাশগুপ্ত বলেন, আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা কথায় কথায় বলেন যে সংবিধানে সংখ্যাগুরু সংখ্যালঘু বলতে কিছু নেই। বাস্তবতা হলো, রাষ্ট্রধর্ম শুধু বাঙালি জাতিসত্তায় বিভাজন টানেনি; ধর্মীয় সংখ্যাগুরু জনগণের ধর্ম রাষ্ট্রধর্ম হওয়ায় এদেশের ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুরা কার্যত রাষ্ট্রীয় সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে। ড. নিমচন্দ্র ভৌমিকের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট নারী নেত্রী ডা. ফৌজিয়া মোসলেম, নির্মল রোজারিও

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App