×

জাতীয়

৪০০ বেড হচ্ছে মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২২, ০৯:৪১ এএম

৪০০ বেড হচ্ছে মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট

মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সার্বিক চিত্র উদ্বেগজনক হলেও এর চিকিৎসা সেবা এখনো অবহেলিত। গবেষণায় দেখা গেছে, শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্ক বা তরুণদের মাঝেই নয়, শিশুদের মাঝেও বাড়ছে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা। গবেষণার তথ্য বলছে, দেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ নানাভাবে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। কিন্তু স্বাস্থ্য বাজেটে মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য বরাদ্দ, হাসপাতালে বেড, দক্ষ জনবলসহ নানা সংকট দেখে সহজেই অনুমান করা যায় মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসা সেবা কতটা অবহেলিত।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ, মোট স্বাস্থ্য বাজেটের ৬ থেকে ৭ শতাংশ শুধু মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসাব্যবস্থায় খরচ করার। আর দেশের মোট স্বাস্থ্য বাজেটের দশমিক ৫০ শতাংশ মানসিক স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ রয়েছে। তবে গত কয়েক বছরে এ খাতের উন্নয়নে সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিচ্ছে। এদিকে এখনো দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থাপনা নেই। রাজধানীর জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পাশাপাশি দেশের কিছু মেডিকেল কলেজে চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকলেও সেখানে আছে বিবিধ সংকট। একই সঙ্গে নেই পর্যাপ্ত জনবল। দক্ষ জনবল তৈরিতেও নেই তেমন কোনো উদ্যোগ।

জাতীয় স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যৌথ উদ্যোগে ২০২১ সালে পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশে বয়স্কদের মধ্যে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো সময় মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। দেশের জনসংখ্যার হিসাবে এই সংখ্যা ৩ কোটির বেশি। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৮-১৯ এর তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ও ১২ দশমিক ৬ শতাংশ শিশু-কিশোর মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত। এর মধ্যে চিকিৎসার বাইরে রয়েছেন ৯২ শতাংশই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞসহ বর্তমানে প্রায় ৫শ জন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী আছেন। সর্বশেষ জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৮-১৯ এর তথ্য অনুযায়ী, দেশে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের সংখ্যা মাত্র ২৭০ জন। অর্থাৎ প্রতি ৯৩ হাজার রোগীর জন্য মাত্র ১ জন বিশেষজ্ঞ রয়েছে দেশে।

মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার ক্ষেত্রেও রয়েছে সীমাবদ্ধতা। রাজধানীর জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে আবাসিক রোগীদের জন্য বেড সংখ্যা ২শ। পাবনা মানসিক হাসপাতালে বেড রয়েছে ৫শটি। এই হাসপাতালকে আন্তর্জাতিক মানের স্নাতকোত্তর ইনস্টিটিউটে পরিণত করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া দেশের কিছুসংখ্যক সরকারি মেডিকেল কলেজে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হয়। এসব মিলিয়ে বেড সংখ্যা হতে পারে হাজার খানেক। দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এখন পর্যন্ত মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসা নিয়ে তেমন কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান নয় বলে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। সীমিত জনবলের বিষয়টিও স্বীকার করেন তিনি। বরাদ্দ বাড়িয়ে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকারকে জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ দেন অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায়।

প্রতিষ্ঠানের সহকারী অধ্যাপক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, মানসিক রোগ বিভাগ কতটা গুরুত্ব পায় তা বিভিন্ন হাসপাতালে মানসিক রোগ বিভাগের অবস্থান দেখলেই বোঝা যায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম মেডিকেলে কলেজ, বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগটি অনেক অবহেলিত জায়গায় অবস্থিত। এগুলোতে মনোরোগ চিকিৎসক ৩৫০, সাইকোলজিস্ট ৫শর মতো রয়েছে।

তিনি জানান, এরই মধ্যে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য হাসপাতালে বেড সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। ২শ বেড থেকে বাড়িয়ে তা ৪শ বেডে উন্নীত করা হচ্ছে। ৪শ বেডের প্রশাসনিক অনুমোদন পেলেও এর জন্য যে পরিমাণ ডাক্তার, নার্স, কর্মচারী তথা জনবল প্রয়োজন তা এখনো দেয়া হয়নি। আগামী ৬ তারিখ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কাজের উদ্বোধন করবেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App