বিএনপির সমাবেশ ঘিরে ধর্মঘটের কারণে বরিশালে খেয়া পারাপারের ট্রলার, লঞ্চ, বাস, মাইক্রোবাস, মাহিন্দ্রা টেম্পু, সিএনজি চালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ থাকে। ফলে বিএনপির সমাবেশে আগত নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাধারণ মানুষও ভোগান্তিতে পরেন। বাধ্য হয়ে অটোভ্যান, অটোরিকশা, বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল, ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে সড়ক-মহাসড়ক হয়ে সাধারণ মানুষ গন্তব্যে যাচ্ছেন।
অপরদিকে খেয়া পারাপারের নৌকা-ট্রলার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নদী পথেও মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। অনেকেই বাধ্য হয়ে জেলেদের নৌকায় নদী পাড়ি দিচ্ছেন। আর নদীবেষ্টিত বরিশালের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে আসা মানুষ ঝুঁকি নিয়ে বিশাল বিশাল নদী পাড়ি দিচ্ছেন ট্রলার, বাল্কহেডে। নিয়মিত গণপরিবহনগুলো বন্ধ থাকায় এসব যানবাহনের চালকদের বিরুদ্ধে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ তুলেছেন যাত্রীরা।
ব্যাটারিচালিত ভ্যানের চালক মানিক বলেন, বাস চলাচল বন্ধ, সেইসঙ্গে মহাসড়কে মাইক্রোবাস, মাহিন্দ্রা টেম্পুও চলছে না। এ অবস্থায় স্বল্প দূরত্বে যাওয়া মানুষরা ভ্যানেও যেতে চাচ্ছেন। তবে নথুল্লাবাদ ও রুপাতলী থেকে বিএনপির সমাবেশস্থলে মানুষ বেশি যাচ্ছে ভ্যানে। কারণ এক ভ্যানে ৭-৮ জন যাওয়া যায় কিন্তু রিকশায় তিন জনের বেশি সম্ভব হয় না। রিজার্ভ নিলে যাত্রীদের লাভই বেশি হচ্ছে।
এদিকে ধর্মঘটের কারণে মহাসড়কগুলোতে প্রভাব পড়লেও বরিশাল শহরের মধ্যে তেমন প্রভাব পড়েনি। আজ সকাল থেকে শহরের রাস্তায় প্রচুর খালি রিকশা দেখা গেছে। তবে নগরের চৌমাথা, রুপাতলী, আমানতগঞ্জ, নাজিরের পুল থেকে শহরতলীতে যেতে রিকশাসহ সব যানবাহনেই বেশি ভাড়া চাওয়ার অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।
এদিকে মহাসমাবেশে যোগ দিতে আসা মানুষরা পায়ে হেঁটেই যাতায়াত করছেন বলে জানিয়েছেন অটোরিকশা চালক কালাম। তিনি বলেন, শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ পায়ে হেঁটে বিএনপির সমাবেশস্থল বঙ্গবন্ধু উদ্যানে যাচ্ছেন। হাতে গোনা অল্প কিছু লোক রিকশা-অটোরিকশায় চড়ছেন। আর নৌ-পথে আসা যাত্রীরা নগরীর কেডিসি কলোনী ও চাঁদমারী এলাকায় নেমে পায়ে হেঁটেই সমাবেশস্থলে যাচ্ছেন।
সব প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে বিএনপির বিভিন্ন জেলা উপজেলার কেন্দ্রীয় ও সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে ট্রাক, পিক-আপ, মাইক্রোবাস, অটোরিকশা, ভ্যান, ইজিবাইক ও মোটরসাইকেলসহ ছোট বড় যানবাহনে করে এই গণ সমাবেশে যোগ দিতে দেখা যায়। বেলা গড়াতেই হাতে বাশ ও লাঠি নিয়ে মিছিলে মিছিলে সমাবেশস্থলে নেতা-কর্মীদের ঢল নামে। সমাবেশে আসা আগতদের হাতে ছিল বিএনপির প্রধান নেতাদের প্রতিকৃতি, দলীয় পতাকা সেই সঙ্গে সরকারবিরোধী স্লোগান এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি সম্বলিত পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন।
এদিকে সকাল ৯টার পর বরিশালে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েন মিডিয়া কর্মীরা। সমাবেশ কাভার করতে যারা বরিশালে অবস্থান করছিলেন তাদেরকে ঢাকায় সংবাদ প্রেরণের জন্য বিভিন্ন প্রান্তে ছুটাছুটি করতে হয়েছে। লঞ্চ, বাস, তিন চাকার অটো, নৌকা সব বন্ধ করে সারা দেশের সাথে বরিশালের যোগাযোগ আগেই বন্ধ করে দেয়া হয়। ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়ায় পুরো বিশ্বের সাথে বরিশাল এক প্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
বিএনপির মিডিয়া সেলের দায়িত্বে থাকা নেতা জহির উদ্দিন স্বপন বলেন যে পটুয়াখালী, ভোলাসহ বেশ কিছু জায়গায় বিএনপি কার্যালয়ে হামলা হলেও বরিশালে সমাবেশ আয়োজনের ক্ষেত্রে প্রশাসনের দিক থেকে অসহযোগিতা তারা পাননি।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।