×

সারাদেশ

বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা চালুর বিকল্প নেই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২২, ০৮:১৫ পিএম

বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা চালুর বিকল্প নেই

চট্টগ্রামে ‘ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ’ অয়োজিত ‘মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ও আদর্শ অর্জনে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা’ শীর্ষক দিনব্যাপী সেমিনারে বক্তব্য রাখছেন প্রাবন্ধিক ও শিক্ষাবিদ আবুল মোমেন। ছবি: ভোরের কাগজ

দেশে শিক্ষার হারের ক্ষেত্রে বেশ উল্লেখযোগ্য উন্নতি হলেও শিক্ষার গুণগত মান নিয়ে সচেতন নাগরিকদের মধ্যে একটি বড় প্রশ্ন রয়েছে।

নানা শ্রেণিতে বিভক্ত এই সমাজে শিক্ষা অর্জনের সুযোগ সকলের জন্য সমান নয়। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা চরমভাবে বৈষম্যমূলক একটি ব্যবস্থা চালু আছে। শিক্ষাক্ষেত্রে হার বাড়লেও তা গুণগত মানের বিচারে এখনো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। শিক্ষা এখন শুধু পরীক্ষা ও পরীক্ষার ফলাফলভিত্তিক হয়ে গেছে। বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে না পারলে ও শিক্ষাকে শুধুমাত্র অর্থপ্রাপ্তির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হলে সেই শিক্ষা থেকে কোন মানবিক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারনকারী সমাজব্যবস্থা তৈরি করতে পারবে না। তাই শিক্ষাকে সময় উপযোগী করে যৌক্তিকভাবে মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করা সময়ের দাবি। তাই মুক্তিযদ্ধের আদর্শের ওপর ভিত্তি করে তৃণমূল পর্যায় থেকে অভিন্ন বিজ্ঞানভিত্তিক ও সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন করাটি জরুরি

শুক্রবার (৪ নভেম্বর) নগরের নন্দনকাননে শিশুতোষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘ফুলকি’র একে খান স্মৃতি মিলনায়তনে ‘ ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ’ আয়োজনে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ও আদর্শ অর্জনে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা শীর্ষক দিনব্যাপী এক সেমিনারে শিক্ষাবিদ ও আলোচকগন এ অভিমত ব্যক্ত করেন।

সংগঠনটির মহাপরিচালক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সমাজতত্ত্ব বিভাগের সাবেক সুপারনিউমারি প্রফেসর ড, ইমাম আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে পাঁচজন শিক্ষাবিদ তাদের প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। কবি-সাংবাদিক-শিক্ষাবিদ আবুল মোমেন ‘শিশুর বিকেল ও আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা’, যশোরের সরকারি মাইকেল মধুসুধন কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. স ম রেজাউল করিম ‘ গুণগত মানসম্মত শিক্ষা ও টেকসই উন্নয়ন’, বাঁশখালী ডিগ্রী কলেজের সাবেক অধ্যাপক ও শিক্ষকনেতা কানাই দাশ ‘মুক্তিযুদ্ধের শিক্ষাদর্শন ও মাধ্যমিক শিক্ষার চালচিত্র’, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট এর অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. আবদুল আউয়াল বিশ্বাস ‘বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের জন্য গুণগত শিক্ষা’ বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

৩ পর্বে বিভক্ত এ সেমিনারে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইয়েন্স বিশ্বদ্যালয়ের প্রক্টও তাসনিম ইমামের উপস্থাপনায় প্রাবন্থিক ও গবেষক একুশে পদকপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মাহবুবুল হক, সেন্টার ফর ল্যাঙ্গুয়েজ স্টাডিজ, ইউল্যাব এর পরিচালক ড. ফাহিম হাসান শাহেদ, সরকারি সিটি কলেজ চট্টগ্রাম এর অধ্যক্ষ ড. সুদীপ্তা দত্ত, শিক্ষকনেতা ও বিজয় স্বরণী কলেজ, চট্টগ্রাম এর অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, সমাজ গবেষক ও লেখক খন্দকার শাখাওয়াত আলী, রাঙ্গুনিয়া হাসিনা জামাল ডিগ্রী কলেজ এর সমাজবিজ্ঝান বিভাগের সহকারি অধ্যাপক শীলা দাশগুপ্তা, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন, নর্থ আমেরিকা’র আহ্বায়ক আবু জাফর মাহমুদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

প্রাবন্ধিক-শিক্ষাবিদ আবুল মোমেন বলেন, ‘স্কুল থেকে শিক্ষা চলে গেছে কোচিং সেন্টারে’। নোট আর গাইড বই-ই যেন ভরসা। শিক্ষাটা পরীক্ষামুখী হয়ে গেছে। শিক্ষা জিনিসটা স্কুল থেকে কোচিং সেন্টারে গেছে। বইয়ের চেয়ে নোট বই গুরুত্বপূর্ণ ও শিক্ষকের চেয়ে কোর্স গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে। লেখা পড়ার চেয়ে পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে। জ্ঞানের চেয়ে সনদ পত্রের গুরুত্ব বাড়ানো হয়েছে।এই জায়গা থেকে বের হতে হবে। আবুল মোমেন শিশুর শারিরীক-মানসিক-সাংস্কৃতিক ও নৈতিক উৎকর্ষতা সাধনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে সার্বজনীন-বিজ্ঞানমনষ্ক একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করার জন্য বলেন।

শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. মাহবুবুল হক ‘ শিক্ষা কোনো বাণিজ্য নয়, শিক্ষা সবার অধিকার’ এই শ্লোগানটিকে প্রাথমিক পর্য্য়া থেকে শুরু করে শিক্ষাজীবনের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানান। পাশাপাশি তিনি ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতির মধ্যে যে চরম সুবিধাবাদিতা প্রবেশ করেছে তার সমালোচনা করে সে জায়গা থেকে বের হয়ে আসার আহ্বান জানান।শ্রেণীকক্ষে পাঠদান না করে প্রাইভেট ও কোচিং ব্যবসার মধ্য দিয়ে বেশি টাকা উপার্জনের যে প্রক্রিয়া শিক্ষকদের মধ্যে চলমান রয়েছে তা বন্ধ করে শিক্ষার্থী ও জাতির কল্যানে নিবেদিত হওয়ার আহ্বান জানান।

শিক্ষক নেতা কানাইদাশ বলেন, বিজ্ঞানমনস্ক ও যুক্তিনির্ভর মানস গড়ে তুলতে প্রগতিশীল রাজনৈতিক শক্তির বিকাশ ও রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা যেমন অপরিহার্য তার চাইতেও গুরুত্বপুর্ণ হল দেশের শিক্সঅ ব্যবস্থা ও রাষ্ট্রীয় কর্নধারদের শিক্ষাচিন্তা। ড, কুদরত এ খুদা শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টে মুক্তিযুদ্ধের সেই শিক্ষাদর্শ রয়েছে। যার লক্ষ্য অবশ্যই হতে হবে একটি সেকুলার প্রকৃত গনতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মান, বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে বাহাত্তরের সাংবিধানিক রাষ্টাদর্শ।

ড. আবদুল আউয়াল বলেন, দেশে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরকে যোগ্য করে গড়ে তোলা সব শিক্ষকের জাতীয় দায়িত্ব। একই সঙ্গে তাদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধেও চেতনা সংবলিত জ্ঞানদানের মধ্য দিয়ে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

ড. খ ম রেজাউল করিম বলেন, শিক্ষা যে কোনো দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে ও টেকসই সমাজ নির্মানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, সেখানে শিক্ষকই হলেন প্রধান চালিকাশক্তি। শিক্ষকতা পেশাকে আকর্ষনীয় করে যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যাক্তিকে এ পেশায় আনা, পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের পেশাগত মান উন্নয়নে শুরুতেই যথাযথ প্রশিক্ষণ নিশ্চিতকরণ ও অব্যাহত রাখতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App