×

জাতীয়

বঙ্গবন্ধু-জেলহত্যার বিচারে অভিশাপমুক্ত হয়েছে দেশ: প্রধানমন্ত্রী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২২, ১২:২৩ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যা, জেলহত্যা এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যদি না করতে পারতাম তাহলে আজকে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের ঋণ শোধ হতো না, এ বিচারের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে আমরা অভিশাপ মুক্ত করতে পেরেছি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বিচার যদি করতে না পারতাম তাহলে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত করা সম্ভব হতো না।

বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) রাতে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে পয়েন্ট অর্ডারে দাড়িয়ে জেল হত্যা দিবসে চার নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫ এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে এদেশে ন্যায় বিচার পাওয়ার পথ ইনডেমনিটি দিয়ে বন্ধ করে দেয় খুনী মোস্তাক ও জিয়াউর রহমান। এরাই কিন্তু দেশের চার নেতাকে জেলে হত্যা করে। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে এসব খুনীদের পুরষ্কৃত করে। যারা স্বাধীনতা বিরোধী, খুনী, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী তাদেরকে ক্ষমতায় আনে। আর যারা বঙ্গবন্ধু ও চার নেতকাকে খুন করে তাদেরকে ইনডেমনিটি দিয়ে বিচারের পথ বন্ধ করে, তাদের রাষ্ট্রদুত বানিয়ে বিদেশে পাঠায়।

তিনি আরো বলেন, দুর্ভাগের বিষয়, জিয়াউর রহমান যেভাবে দেশের সেনা বাহিনী বিমান বাহিনীর সৈনিকদের হত্যা করেছে, যেভাবে আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের ওপর অত্যাচার ও হত্যা করেছে, তারই ধারা বাহিকতায় এ ৩ নভেম্বরের ঘটনা ওতপ্রত ভাবে জড়িত। এদেশটাকে সম্মূর্ণ ভাবে তারা বিজয়টাকে নষ্ট নস্যাৎ করতে চেয়েছিল। আমাদের বিচার চাওয়ার কোন অধিকার ছিল না। আমি কোর্টে বার বার গেছি, কিন্তু ইনডেমনিটি অর্ডার দিয়ে বিচারের পথ বন্ধ করে দেয়। ক্ষমতায় এসে জেল হত্যার বিচার করেছি, জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার করেছি। কিন্তু সেই খুনিদের কিন্তু বাচানোর চেষ্টাও করা হয়েছে। ২০০১ এ খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে সেই আসামী খায়রুজ্জামানকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকুরীদিয়ে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়। সাজা প্রাপ্ত আসামী আজিজ পাশা বিদেশে মারা যায়, তাকে মৃত অবস্থায় প্রমোশন দেয়, এতে বোঝা যায় এরা যে এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ বছর পরে সরকার গঠন করে অনেক বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে বঙ্গবন্ধু চার নেতার খুনীর বিচার আমরা করতে পেরেছি। এখনো খুনি রাশিদ বিদেশে, মেজর রাশেদ আমেরিকায়, ডালিম, কর্নেল রশিদ লিবিয়া ও পাকিস্তান মিলে থাকে, এসব খবর আমরা রাখি। এদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। কানাডা পাকিস্তান এনস দেশ থেকে সহযোগিতা পাচ্ছি না।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমাদের কত মানবাধীকারের কথা, গণতন্ত্রের কত শুনতে হয়। কিন্তু মার্শালা দিয়ে, অবৈধভাবে যারা ক্ষমতায় আসে তারা কিভাবে গণতন্ত্র দেবে, গণতন্ত্রের কথঅ তাদের মুখে মানায় না। তারা কিভাবে মানবাধিকারের কথা বলে। বঙ্গবন্ধুর খুনীদের, চার নেতা খুনীদের বিচার করে আমরা প্রমান করেছি এদেশে বিচার আছে, এক সময় সেই বিচারের বানী নিরবে নির্ভীতে কেঁদেছে। এখানে জনগণই মূল শক্তি , আমরা ক্ষমতায় আসতে পেরেছি, তাই এ বিচারগুলো করতে পেরেছি। অবৈধ পথে যেন কেউ ক্ষমতায় না আসতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি।

বিচারের দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংসদরাও

এদিকে, জেলহত্যা দিবসের ওপর বক্তৃতায় জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ৩ নভেম্বর জেলে জাতীয় চার নেতার হত্যার তদন্ত কমিশন গঠন করে এ হত্যাকাণ্ডের জন্য যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত তাদের খুজে বের করে দোষীদের যথাযথ শাস্তির দাবি জানিয়েছে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব ওর্ডারে দাড়িয়ে এ দাবি জানান তারা।

আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা আমির হোসেন আমু বলেন, জাতীর পিতার হত্যাকারীদের নীল নকসার আরো একটি জঘন্য ও নৃশংস হত্যাকাণ্ড ছিল জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ড। তিনি বলেন, এই চার নেতার সঙ্গে তিনিও কারাগারে ছিলেন। ৩ নভেম্বর রাতে এ চার নেতাকে কারাগার থেকে বের করে নৃশংসভঅবে গুলি করে খুন করা হয়। এসময় জিয়া-মোশতাক একে একে বহু মুক্তিযোদ্ধাকে বিনা বিচারে রাতের অন্ধকারে হত্যা করেছে, তাদের কারো কারো লাশও পরিবার পায়নি।

বক্তব্যের পুনরাবৃত্তিতে তিনি বলেন, যেসব বুদ্ধিজীবী আজ বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের প্রতিবাদ, গণতন্ত্রের কথা বলেন, সুশাসনের কথা বলেন, তাদের আমলেই কিন্তু এসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি তারা। এ হত্যাকাণ্ড শুধু হত্যাকাণ্ড নয়, জাতীয়তা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিনষ্ট করার জন্য এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল। এর পেছনে বহু দেশ মদদ দিয়েছিলো। এমনকি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদ করার জন্য শেখ হাসিনাকে সংসদে বক্তব্য রাখতে দেয়া হয়নি। আজকে জনগণের সামনে এসব চক্রান্তকারী, হত্যাকারীদের মুখোশ উন্মুক্ত করার দাবি জানান তিনি। আজকে যারা রাজনীতিতে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায় তাদের চক্রান্ত নস্যাৎ করতে হবে।

দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড ও জাতীয় চার নেতার হত্যাকারী ও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কারা জড়িত, কোন কোন দেশী বিদেশি ষড়যন্ত্র এর সঙ্গে জড়িত তা বের করতে দ্রুত একটি তদন্ত কমিশন গঠন করার দাবি জানান।

বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, চার নেতার হত্যাকাণ্ড স্বাধীন ও সভ্যমস্ত শিষ্টার বহির্ভূত ছিল। সমস্ত শিষ্টাচার, মানবতা উপেক্ষা করে দেশের এই মহান সন্তানদের হত্যা করে মোশতাক-জিয়া।

জেল হত্যা দিবসে আরো বক্তব্য রাখেন জাপার এমপি কাজী ফিরোজ রশীদ, মশিউর রহমান রাঙা, আওয়ামী লীগের এমপি মোসলেম উদ্দীন আহমেদ, বেনজির আহমেদ, নাহিদ এজাহার খান ও তারভীর শাকিল জয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App