×

সারাদেশ

২২ লক্ষাধিকের জন্য মাত্র ১১ চিকিৎসক!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২২, ১১:১৯ পিএম

২২ লক্ষাধিকের জন্য মাত্র ১১ চিকিৎসক!

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ (সামেক) হাসপাতালে এভাবেই সারিবদ্ধ হয়ে চিকিৎসার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। ছবি: ভোরের কাগজ

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ (সামেক) হাসপাতালে জেলার ২২ লক্ষাধিকের স্বাস্থ্যসেবার জন্য মাত্র ১১ জন চিকিৎসক নিযুক্ত রয়েছেন। করোনা প্রাদুর্ভাবে রোগীদের স্বাস্থ্য সেবায় এই হাসপাতাল গৌরবান্বিত সাফল্য পেয়েছিল। পরবর্তী সময়ে শুধু মাত্র চিকিৎসক ও জনবল সংকটের কারনে মুখ থুবড়ে পড়েছে প্রান কেন্দ্রটি।

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায় হাসপাতালে উপ পরিচালকসহ সার্জারি, চক্ষু, অ্যানেস্থেসিয়া, ইএনটি, চর্ম ও যৌন, কার্ডিওলজিসহ সিনিয়র কনসালটেন্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ ১২টি গুরুত্বপূর্ণ পদের বিপরিতে কর্মরত আছেন মাত্র চারজন। আটজন চিকিৎসক পদ শূন্য । শুধু তাই নয়, জুনিয়র কনসালটেন্ট সার্জারি, চক্ষু, অ্যানেস্থেসিয়া, ইএনটি,চর্ম ও যৌন, রেডিওলজিসহ ১৮টি পদের বিপরিতে কর্মরত আছেন সাতজন। বাকি ১১টি পদ শূন্য অবস্থায় চলছে বছরের পর বছর। যা প্রয়োজনের তুলনা অপ্রতুল।

অন্য যেসব শূন্য পদ, সিনিয়র ক্লিনিক্যাল প্যাথলজি, অ্যানেস্থেটিস্ট বা সহকারী সার্জন, প্যাথলজি বা সহকারী সার্জন, রেডিওলজিস্ট বা রেডিওথেরাপিস্ট বা সহকারী সার্জন, সহকারী সার্জন বা সমমান, ইনডোর এমও বা সহকারী সার্জন, আউটডোর এমও বা সহকারী সার্জন, রেজিস্ট্রার বা সহকারী রেজিস্ট্রার বা এমও (ব্ল্যাড ব্যাংক) বা সহকারী সার্জন, এমও ফিজিওথেরাপি বা সহকারী সার্জন, ইমারর্জেন্সি এমও বা সহকারী সার্জন, পারফিউশনিস্টসহ সার্জন, ডেন্টাল সার্জন বা সহকারী ডেন্টাল সার্জন, মেডিকেল কর্মকর্তাসহ (আয়ুর্বেদিক বা হোমিও) ৫৬টি পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ২২ জন। এক্ষেত্রে, ৩৪টি গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য। জেলায় ২২ লক্ষাধিক মানুষের স্বাস্থ্য সেবায় সামেক হাসপাতালের জনবলের চিত্রে হতাশ হয়েছে সাতক্ষীরার সচেতন মহল।

সরেজমিনে সামেক হাসপাতাল ৫শ শয্যা বিশিষ্ট হলেও বেড খালি নাথাকায় প্রায় দেড় থেকে দুইশ রোগীকে ফ্লোরে বেড দিয়ে চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। অত্যাধুনিক ভারী যন্ত্রাংশ থাকলেও চিকিৎসকের অভাবে মারাত্মক হয়রানি ও দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন রোগীরা। রোগীরা এক রোগের চিকিৎসা নিতে এসে অন্য রোগের চিকিৎসককে দেখাতে বাধ্য হচ্ছে।

হাসপাতালে জনবল সংকটের কারনে নাজুক পর্যায়ে পৌঁছেছে স্বাস্থ্যসেবা। ইনডোরের ডাক্তারদের আউটডোর সামলাতে দেখা যায়। একেক জন চিকিৎসকের তিনটি চারটি করে দায়িত্ব পালন করতে হয়। হাসপাতালে সিনিয়র, জুনিয়র মিলে ১১জন কনসালটেন্টকে সামলাতে হয়,ভর্তি ও আউটডোরসহ প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার রোগীকে।

এদিকে, কর্মরত ১১ জন চিকিৎসক অক্লান্ত পরিশ্রম করে ইনডোর,আউটডোর,জরুরী বিভাগসহ ফ্লোরে থাকা রোগীদের সেবা দিতে দেখা যায়। সিনিয়র কনসালটেন্ট নাথাকায় ওটিতে এ্যানেসথেসিয়া দিচ্ছেন মেডিকেল অফিসার। সিনিয়র কনসাল্ট্যান্টদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায় জুনিয়রদের। চোখের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন একজন জুনিয়র কনসালটেন্ট।

আরো দেখা যায়, তৃতীয় শ্রেণির স্বাস্থ্যকর্মী ৭৮ জনের বিপরীতে আছে ২২ জন, আয়া ৫০-৬০ জনের বিপরীতে ১০ জন কর্মরত থাকায় মারাত্মক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগীদের। হাসপাতালের প্রতিটি স্থান অপরিছন্ন,নোংরা। ওয়ার্ড কেবিনের বাথরুমসহ ডাক্তারদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জায়গায়ও অপরিছন্ন লক্ষ্য করা যায়। বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। যেটা রোগীদের জন্য মারাত্মক ঝুকির। স্বাস্থ্যসেবা নিতে আশা প্রতিটি রোগীদের জীবন বিপন্নে অন্যতম কারন হতে পারে। খোজ নিয়ে জানা যায়, ৫০-৬০ জন সুইপারের বিপরীতে কর্মরত আছে মাত্র ১০-১৫ জন। তাদের পক্ষে এত রোগীর সমাগম হাসপাতাল পরিষ্কার পরিছন্ন রাখা খুবই দুঃসাধ্য। এখানেও জনবল সংকটের চিত্র।

চিকিৎসকের অভাবে স্বাস্থ্যসেবায় মুখ থুবড়ে পড়েছে প্রান কেন্দ্র খ্যাত সামেক হাসপাতালটি। জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতালের করুণ চিত্র বলে দেয় সাতক্ষীরা জেলা অভিভাবকশূন্য। এরই পরিস্কার চিত্র এই হাসপাতালটি।

সাতক্ষীরা আশাশুনি উপজেলার শোতকনা গ্রামের আলম। দীর্ঘদিন চোখের সমস্যা নিয়ে ভুগছেন তিনি। এসেছিলাম চোখের ডাক্তার দেখাতে। জানতে পারলাম চোখের কোন সি. কন. নেই। কোন উপায় নাপেয়ে যে ডাক্তার আছে তাকে দেখালাম। বিশেষাজ্ঞ চিকিৎসকসশূন্য থাকায় জেলার প্রতিটি রোগীরা স্বাস্থ্যসেবা থেকে চরমভাবে বঞ্চিত হচ্ছে।

সদরের মাটিয়াডাঙ্গা থেকে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা আজিজুল ইসলাম বলেন, আমার স্ত্রীকে নিয়ে এসেছি চর্ম ও যৌন ডাক্তার দেখানোর জন্য। আসার পরে জানলাম হাসপাতালে কোন চর্ম ও যৌন ডাক্তার নেই। ফিরে যেতে হচ্ছে। আমরা গরিব মানুষ।এখন চিকিৎসকের কাছে নেয়ার জন্য খুলনায় যেতে হবে। কীভাবে খরচের টাকা যোগাড় করবো তাই ভাবছি। এভাবে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তও হচ্ছে।

সামেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. কুদরত-ই-খুদা জনবল সংকটের কথা নিশ্চিত করে বলেন, হাসপাতালে মঞ্জুরিকৃত পদ সংখ্যা ৯৮টি।কর্মরত আছেন মাত্র ৪৫টি। বাকি পদ শূন্য থাকায় হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছি। দিন দিন হাসপাতালে রোগী বৃদ্ধি পাচ্ছে।আগে জরুরী বিভাগ আউটডোরে এত রোগী হতনা।এখন নিয়মিত শুধু আউটডোরে হাজার বারোশ রোগী আশে। তাদের ও ভর্তি হওয়া রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চত করতে চিকিৎসক,স্বাস্থ্যকর্মী,আয়া ও সুইপারের সবগুলো শুন্য পদে জনবলের বিকল্প নেই।

তিনি আরো বলেন, বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অনেক অবহিত করেছি। আমি ব্যক্তিগতভাবেও ফোনে কথা বলেছি। বিষয়টি দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন কিন্তু বাস্তবে কোন ফল হয়নি বলে জানান এই কর্মকর্তা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App