×

জাতীয়

১.৫ ডিগ্রি উষ্ণতার কথা শুরু থেকেই বলে আসছে বাংলাদেশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২২, ০৭:৫৯ পিএম

১.৫ ডিগ্রি উষ্ণতার কথা শুরু থেকেই বলে আসছে বাংলাদেশ

আসন্ন কপ-২৭ সম্মেলনে জলবায়ু কূটনীতি কী হবে তা নিয়ে বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের ভাবনা ও প্রস্তাবনা তুলে ধরতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সাবের হোসেন চৌধুরী। ছবি: ভোরের কাগজ

১.৫ ডিগ্রি উষ্ণতার কথা শুরু থেকেই বলে আসছে বাংলাদেশ
১.৫ ডিগ্রি উষ্ণতার কথা শুরু থেকেই বলে আসছে বাংলাদেশ

# ২৬ বছর পেরুলেও কার্যপরিধি নির্ধারণ হয়নি

বৈশ্বিক উষ্ণতাকে এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার বিষয়টি প্যারিস অ্যাগ্রিমেন্টে ছিল না। সেখানে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস ধরা হলে আমরাই এর বিপক্ষে আওয়াজ তুলি। এখন অনেক দেশ যে এক দশমিক পাঁচ কথাটি বলছে তা আমরা শুরু থেকেই বলে এসেছি। এ বিষয়টি বাংলাদেশের একটি অর্জন। তবে কপ সম্মেলনের কার্যপরিধি কীভাবে পরিচালিত হবে ২৬ বছর পেরুলেও এখনো তা নির্ধারণ করা যায়নি। তাই আমরা বা অন্যান্য দেশ সম্মেলন থেকে যা প্রত্যাশা করছি তা দর কষাকষির মাধ্যমে চাহিদা অনুযায়ী অর্জন সম্ভব হচ্ছে না।

আসন্ন কপ-২৭ সম্মেলনে জলবায়ু কূটনীতি কী হবে তা নিয়ে বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের ভাবনা ও প্রস্তাবনা তুলে ধরতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী। জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হুসেন মানিক মিয়া কনফারেন্স হলে গতকাল বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি) নির্বাহী প্রধান মো. শামসুদ্দোহার সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন একশনএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারা কবির ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, কপ-২৭ সম্মেলনগুলোতে বাস্তব ও বৈজ্ঞানিক যে উপাত্তগুলো বলা হচ্ছে তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না, এর একটি বড় কারণ জাতিসংঘের অভ্যন্তরিন প্রক্রিয়াতে গণতন্ত্র নেই, একটা বা দুইটা দেশ অনেক সময় প্রক্রিয়াকে থামিয়েও দেয়। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় আমাদের অভিযোজন, প্রশমনে ও জলবায়ু অর্থায়নে ঘাটতি রয়েছে। কিন্তু আমাদের সবচেয়ে বড় ঘাটতি রয়েছে পারস্পরিক বিশ্বাসে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রি রাখার পক্ষ্যে জনমত তৈরি করতে বাংলাদেশ সব থেকে বেশি ভূমিকা রেখেছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এক দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস হওয়াতেই কী ধরনের বির্পযয় বিশ্বে নেমে এসেছে সেটি আমরা দেখছি। জাতিসংঘের মহাসচিব বলেছেন বর্তমান অঙ্গীকার গুলো রক্ষা করা হলেও এই শতাব্দির শেষ নাগাদ উষ্ণায়ন দুই দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাবে এর ফলে যে কল্পনাতীত বিপর্যয় নেমে আসবে সেটি কল্পনাও করা যায় না।

সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, অভিযোজনের কথা বলা হচ্ছে কিন্তু তার একটা সীমারেখা আছে, আমরা কিন্তু দেখছি এখনই অনেক বিষয়ে আর তা করা যাচ্ছে না। জলবায়ু পরিবর্তন ও সাধারণ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে একটি ওভারলেপিং আছে। আমার একটি ব্যক্তিগত মত হচ্ছে ক্লাইমেট চেঞ্জ ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে আলাদা করতে হবে। এই সংকটকে সমাধানের করতে হলে হয়ত দুটি আলাদা মন্ত্রণালয় করলে হয়ত একটা সমাধান আসতে পারে। সিপিআরডিসহ নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে যে প্রকাশনার মোড়ক এখানে উন্মোচিত হলো তাতে দেখলাম অনেকগুলো বিষয়ে আলোকপাত কার হয়েছে যা বাংলাদেশের ক্লাইমেট ন্যাগুসিয়েশনে অনেক সহায়তা করবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

চলতি মাসের ৬ থেকে ১৮ নভেম্বর মিশরের শার্ম আল- শেখে ইউএনএফসিসিসি এর ২৭ তম সমঝোতা সম্মেলন কপ-২৭ অনুষ্ঠিত হবে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য তুলে ধরে মো. শামসুদ্দোহা বলেন, কপ-২৭ সম্মেলন উপলক্ষ্যে আমাদের সামনে আসা সুযোগগুলোকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে একটি যথাযথ কর্মকৌশল তৈরি করতে হবে। আমরা নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারসহ ক্ষতিগ্রস্ত উন্নয়নশীল বিশ্বের কর্মকৌশল প্রণয়নে প্রস্তাবনা হাজির করার কথা বলেছিলাম। আজকের সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা নাগরিক সমাজের পক্ষ্য থেকে প্রণিত কর্মকৌশল ও প্রাসঙ্গিক বক্তব্য আপনাদের সামনে হাজির করলাম। তিনি আরো বলেন আমরা কপ-২৬ এর কাছ থেকে চেয়েছিলাম যে বৈশি^ক উষ্ণায়নকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে অঙ্গীকার আদায় করবে কিন্তু আমরা সেটি পাইনি। আমরা বৈশি^ক কার্বন উদগীরণ কমানোর যে সীমা সেখান এখনো অনেক দূরে রয়েছি বর্তমান, টার্গেট গুলো পূরণ করলেও এই শতাব্দির শেষ নাগাদ ২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে। এই সমঝোতা সম্মেলনে ১.৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেটের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার কথা বিবেচনায় রেখে নতুন জাতীয় ভাবে নির্নীত অবদান ঠিক করার কোন বিকল্প নেই। তিনি আরো বলেন, উন্নত বিশ্ব অভিযোজন অর্থায়ন নিয়ে যে তালবাহানা শুরো করেছে তাকে অবিলম্বে বন্ধকরতে হবে ও আগের প্রতিশ্রুত বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিতরণের ঘাটতি পূরণ করতে হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে নতুন চাহিদা বিচেনায় নিয়ে অন্তত বাষিক ৬০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দিতে হবে।

দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের পরিকল্পনা ও দলিল তৈরিতে বিদেশি পরামর্শক নির্ভরশীলতা থেকেও সরে আসতে হবে।

অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারা কবির বলেন, এ বছর ২০২২ সালকে বলা হচ্ছে সব থেকে বেশি দূর্যোগের বছর আর এই বর্ধিত দূর্যোগ আসছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে। আমরা আশ্চর্য হই কেন বিশ্ব নেতৃত্বের টনক নড়ছে না। বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য স্থানান্তরিত হওয়াসহ মানুষের নিরাপত্তা, অধিকার ব্যাপক ভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে কিন্তু আমরা দেখেছি বিজ্ঞানীরা বলেছেন ১.৫ ডিগ্রির মধ্যে উষ্ণায়নকে সীমিত করা না যায় তাহলে বাঁচার আরকোন সুযোগ নেই। তাই অবিলম্ব্যে উদগীরণ কমাতে নতুন লক্ষ্যমাত্রা নিধারণের দাবি জানাই। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, আমরা যদি নিরাপদে না থাকি তাহলে উন্নত বিশ্ব কি নিরাপদ থাকবে? শাহীন আনাম বলেন, নাগরিক সমাজের পক্ষ্য থেকে আমাদের কথাগুলো আমরা বলেছি। এখন আমাদের সরকারে কাছে চাওয়া তারা যেন এসব বাস্তবায়নে যথাযথ ভূমিকা রাখেন। আমরা দেখছি যুদ্ধের জন্য বিভিন্ন দেশ ট্রিলিয়ন-ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করে কিন্তু জলাবায়ু পরিবর্তনের প্রতিরোধে ও অভিযোজন করতে আমরা টাকা পাইনা। তিনি আরো বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে বাঁচানোর জন্য ও কার্বন উদগীরণ কমানোর জন্য কথা বলেই যেতে হবে। বিশ্বব্যাপী চাঁপ বাড়ানো ছাড়া কোন বিকল্প নেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App