×

জাতীয়

ডিবির এডিসির বিরুদ্ধে স্ত্রী নির্যাতনের অভিযোগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২২, ০৯:২৯ পিএম

ডিবির এডিসির বিরুদ্ধে স্ত্রী নির্যাতনের অভিযোগ

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. শাহাদত হোসেন সুমা ও তার স্ত্রী ডা. শেখ মৃন্ময়ী হোসেন। ছবি: ভোরের কাগজ

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. শাহাদত হোসেন সুমার বিরুদ্ধে স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। স্ত্রী ডা. শেখ মৃন্ময়ী হোসেন নিজের ফেসবুক পোস্টে স্বামীর নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে একাধিক ছবি ও ভিডিও শেয়ার করেছেন। নির্যাতনের অভিযোগ জানিয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে গত জুলাই মাসে পুলিশ সদর দপ্তরে দরখাস্ত করলেও এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়নি বলে তার অভিযোগ।

জানা গেছে, অভিযুক্ত এডিসি সুমা বর্তমানে ডিবির তেজগাঁও বিভাগে কর্মরত। আর স্ত্রী মৃন্ময়ী অ্যাসথেটিক ডার্মাটোলজিস্ট অ্যান্ডা লেজার স্পেশালিস্ট এবং পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত আইজি শেখ হিমায়েত হোসেনের মেয়ে। ফেসবুক পোস্টের ছবিতে স্ত্রীর শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন ও জখম দেখা গেছে।

স্ত্রী মৃন্ময়ীর অভিযোগ, ২০১৪ সালে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে সাধারণ বিষয় নিয়ে নানাভাবে তাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতো। ছোট বিষয় নিয়েই গায়ে হাত তুলতো। কয়েক বছর পর তাদের একটি কন্যা সন্তান হয়। তখন পরিবার ও স্বজনরা সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে এমনটি বোঝাতো। কিন্তুু সময় বাড়লেও স্বামীর নির্যাতন বন্ধ না হয়ে আরো বেড়ে যায়। ঝগড়া থেকে গায়ে হাত তোলা ও মারধরও বাড়তে থাকে। মৃন্ময়ী বলেন, ওই সময় তার বাবা পুলিশে বড় পদে চাকরি করা, পারিবারিক মান সম্মানের চিন্তা ও ভবিষ্যতে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে ভেবে ধর্য্য ধারণ করতেন। মেয়েটি বড় হওয়ার পর কোন কিছু ঠিক হওয়ার পরিবর্তে ‘বাচ্চাকে ভালোমতো কেয়ার না করা’, ‘ঠিকমতো খাবার না খাওয়ানো’সহ নানা অভিযোগে সব সময় ঝগড়া ও মারধর করা হতো। মারধর ও নির্যাতনের পর একাধিকবার তিনি ৯৯৯ নম্বর ও রমনা থানায় কল করে জানালেও পুলিশ স্বামীর পরিচয় জেনে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে পারিবারিকভাবে সমাধান করতে বলে।

তিনি বলেন, এভাবে প্রায় সময় মারধর ও হত্যার হুমকি দেওয়ায় ভীত হয়ে চলতি বছরের মাঝামাঝিতে মেয়ে ও কিছু কাপড় নিয়ে সিদ্ধেশরীতে বাবার বাড়িতে চলে যান। কিন্তু বাবার বাড়ি থেকে সব সময় স্বামীর বাড়িতে চলে যেতে বললে গত ১৮ জুলাই তিনি এক বান্ধবীর বাসায় চলে যান। সেখানে যাওয়ার পর তার স্বামী মোবাইল ফোনে লোকেশন নিশ্চিত হয়ে বান্ধবীর স্বামীর নাম্বারে কল করে হুমকি দেন। ২০ জুলাই সুমা তার বন্ধু ও সহকর্মীদের নিয়ে ওই বন্ধবীর বাসায় হামলা চালায়।

তিনি বলেন, একপর্যায়ে সুমা আমার (মৃন্ময়ী) অবস্থান নিশ্চিত হতে পেরে গুলশানের ‘মাই স্কিন অ্যাসথেটিক’ কর্মস্থলে গিয়ে সবার সামনে এলোপাথারি চড়-থাপ্পর ও কিল ঘুষি মারতে মারতে টেনে হিচড়ে গাড়িতে তোলে। মারধরে মাথা, দুই চোখ, মুখ, কাঁধ ও পিঠে রক্তাক্ত ফোলা জখম তৈরি হয়। ওই সময় আমার অফিসের কর্মীচারীরা বাধা দিতে গেলে তাদেরও হুমকি দেয়া হয়। পরবর্তীতে আমার ছোট বোনকেও মেরে রক্তাক্ত করা হয়।

পুলিশ সদর দপ্তরে দেয়া অভিযোগে স্ত্রী মৃন্ময়ী বলেন, ‘গত ১৯ জুলাই সোমা তাদের একমাত্র মেয়েকে (সাত বছর বয়েস) জোরপূর্বক নিয়ে চলে যায়। এরপর থেকে তার ভাই-বোনসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের হুমকি, ভয়-ভীতি দেখানোসহ নোংরা মেসেজ পাঠিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন সময় তার (মৃন্ময়ী) ও পরিবারের অন্য সদস্যদের কললিস্ট ও রেকর্ড বেআইনিভাবে বের করেছে’। দরখাস্তে তিনি স্বামীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়াসহ তার ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা চেয়েছেন।

মৃন্ময়ী বলেন, মেয়েকে নিয়ে যাওয়া ও কোন ধরণের যোগাযোগ করতে না দেয়ার পরিপ্রেেিত গত ২২ আগস্ট তিনি হাইকোর্টে রিট করেন। পরবর্তীতে হাইকোর্ট থেকে সপ্তাহে দুদিন (শুক্র ও শনি) করে বাচ্চাকে দেখতে দেয়ার বলেন। মৃন্মীয়র অভিযোগ, বাচ্চাকে দেখতে গেলে তার স্বামী তাকে হুমকি ও ভয়-ভীতি দেখাতো। বলতো, ‘আমি চাকরির ভয় করি না। তোর বাবাতো কিছুই করতে পারলো না। এখনো পারবি না। তোকে কেটে টুকরো টুকরো করবো’। মৃন্ময়ী বলেন, ‘গত ১ নভেম্বর ফেসবুকে স্বামীর নির্যাতনের ছবি ও ভিডিও পোস্ট করার পর থেকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত মেয়ের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে দিচ্ছে না’। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শাহাদত হোসেন সুমা বলেন, আমার স্ত্রী অন্যের সঙ্গে রিসোর্টে সময় কাটাবে, এটা জানার পর আমি চুপ থাকবো, সেটি কখনোই হতে পারে না। সে (স্ত্রী) যে কাজগুলো করেছে তার সব প্রমান আমার কাছে আছে। এসব আমিও চাইলে ফেসবুকে পোস্ট দিতে পারি। কিন্তু এতে আমার সম্মান বাড়বে না। রক্তাক্ত জখমের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, যা কিছু হয়েছে, আমার শশুর শাশুড়ির সামনেই হয়েছে। কি কারণে এমনটা হলো আমার শশুর শাশুড়ির কাছে জিজ্ঞাসা করুন। অনেক সিনিয়র সাংবাদিকরাও বিষয়টি অবগত। এছাড়া আমার কিছু বলার নেই।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) মো. মনজুর রহমানকে কল করলে তিনি বিষয়টি অবগত নন বলে জানান। পরে ডিবির যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) খোন্দকার নুরুন্নবীকে কল করা হলে তিনি বিষয়টি জেনে জানানোর কথা বলেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App