×

জাতীয়

গ্যাস সংকট তীব্র হওয়ায় শঙ্কা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২২, ০৮:০৭ এএম

গ্যাস সংকট তীব্র হওয়ায় শঙ্কা

ফাইল ছবি

৩৮০ কোটি ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে বিতরণ ২৬০ কোটি ঘনফুট

অনেকদিন ধরেই পাইপলাইনে গ্যাস না পেয়ে ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা। রাজধানীর অনেক এলাকায় গ্যাসের অভাবে বাসাবাড়িতে তিনবেলার খাবার রান্না হচ্ছে না। উপায় না থাকায় অগত্যা সিলিন্ডার গ্যাস কিনে রান্নার কাজ চালাতে হচ্ছে। শীতের আগেই গ্যাস সংকট বেড়ে গেছে। শীত মৌসুমে এ সংকট আরো তীব্র হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে গ্যাস না পেলেও গ্রাহকদের নিয়মিত বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। বিল বকেয়া থাকলে তিতাসের লোকজন লাইন কেটে দিয়ে রাইজার নিয়ে চলে যায়।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, অর্থ সংকটের কারণে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি গ্যাস কেনা বন্ধ রয়েছে। এ কারণে জাতীয় গ্রিডে পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে গ্যাসের সংকট কাটাতে পাইপলাইনের গ্যাস সঞ্চালন নিরবচ্ছিন্ন ও নির্বিঘ্ন করতে সরকার অটোমেশন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে আবাসিক ও বাণিজ্যিক সব লাইনের গ্যাস সরবরাহ বাড়বে। তখন আর মানুষকে গ্যাসের বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না।

তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদি গ্যাস সরবরাহ ও গ্যাসের মজুদ বাড়াতে সরকার বেশ কিছু নতুন গ্যাস ক্ষেত্র নিয়ে কাজ শুরু করেছে। এছাড়া শরিয়তপুর, ভোলা, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে পুরাতন গ্যাস কূপগুলো পুনঃখনন শুরু হয়েছে। কিছু গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। এই গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হলে সংকট অনেকটাই কাটবে। শিল্পকারখানার উৎপাদন ঠিক রাখতে এখন এই খাতে বেশি গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। উৎপাদন না থাকলে অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। এটাও একটা সমস্যা।

ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, টঙ্গি, গাজীপুর ও সাভার এলাকায় পাইপলাইনে গ্যাস পাওয়া এখন সোনার হরিণ।

পশ্চিম ধানমণ্ডি এলাকার বাসিন্দা গৃহবধূ কাকলি অভিযোগ করেন, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত লাইনে গ্যাস না থাকায় চুলা জ¦লে না। গভীর রাতে কিছুটা গ্যাস পাওয়া গেলেও ভোর হতে না হতেই আবার বন্ধ হয়ে যায়। এলাকার সবার বাড়িতেই একই অবস্থা। রান্না করার জন্য গ্যাস সিলিন্ডার কিনতে হয়েছে।

পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা জানান, দেশে দৈনিক ৩৮০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। বাসাবাড়ি, বিদ্যুৎকেন্দ্র, সার কারখানা, শিল্পকারখানায় ব্যবহারসহ সব কাজে এই পরিমাণ গ্যাসের প্রয়োজন হয়। কিন্তু চাহিদার বিপরীতে গত জুন মাস পর্যন্ত ৩০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হতো। কিন্তু এখন তা আরো নেমে ২৬০ কোটিতে ঠেকেছে। ফলে বড় ধরনের গ্যাস সংকট তৈরি হয়েছে। আগামী শীত পর্যন্ত গ্যাস সংকট থাকবে। তবে সংকট নিরসনে বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। পেট্রোবাংলা দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে গ্যাসের সংকট কমে যাবে।

গাবতলীর চারতলা ভবনের মালিক শফিকুল জানান, তার ভবনের বৈধ গ্যাস লাইন রয়েছে। কিন্তু গত কয়েকমাস ধরে গ্যাস নেই। ভাড়াটিয়ারা গ্যাসের বিল দিচ্ছে না, কিন্তু তাকে নিয়মিত তিতাসের নির্ধারিত বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। ফলে অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও সবাই রান্নার পেছনে বাড়তি খরচ বহনের চাপে পড়েছেন।

রায়েরবাজারের বাসিন্দা পংকজ পাল জানান, মাসের পর মাস গ্যাস পাচ্ছি না। কিন্তু গ্যাসের বিল নিয়মিত পরিশোধ করতে হচ্ছে। বিল নিয়মিত পরিশোধ না করলে তিতাসের লোকজন এসে গ্যাস লাইন কেটে দেবে। অনেকের লাইন কেটে দিয়ে রাইজার নিয়ে চলে গেছে। একবার লাইন কাটলে তা জোড়া লাগাতে ১৫ দিন সময় লাগে, বাড়তি টাকাও গুনতে হয়। গ্যাস সংকট চলছে দীর্ঘদিন ধরে। তবে গত জুন মাস থেকে গ্যাস সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। রাজধানীর মোহাম্মদপুর, ধানমণ্ডি, গাবতলী, উত্তরা, মহাখালী, গোপীবাগ, খিলগাঁও, বাসাবো, লালবাগ, আজিমপুর, কামরাঙ্গীরচরসহ প্রায় সব এলাকায়ই দিনের বেলায় পাইপলাইনে গ্যাস পাওয়া যায় না। গভীর রাতে গ্যাস এলেও তাতে চাপ থাকে না। প্রায় সব বাসাতেই সিলিন্ডার ব্যবহার করতে হচ্ছে। আবার অনেকেই বৈদ্যুতিক চুলায় ও প্রেসার কুকারে রান্না সারছেন। রাজধানীর পার্শ্ববর্তী এলাকায় যাদের সিলিন্ডার কেনার সামর্থ্য নেই তারা অনেকে মাটির চুলা ব্যবহার করছেন।

রাজধানীর গ্রাহকরা তীব্র গ্যাস সংকটে ভোগান্তি পোহালেও নীরবে সহ্য করে যাচ্ছেন। কিন্তু চলতি মাসেও নারায়ণগঞ্জে গ্যাস না পেয়ে গ্রাহকরা তিতাসের আঞ্চলিক অফিস ঘেরাও করে। এই এলাকায় গ্যাস কখনো কখনো এলেও লাইনে গ্যাসের চাপ কম। শত শত গ্রাহক নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্যাস সরবরাহের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে। পুরো নারায়ণগঞ্জ জেলায় গ্যাসের তীব্র সংকট চলছে। এর মধ্যে সদর ও বন্দর থানা এলাকার গ্রাহকরা সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে আছে।

তিতাসের কর্মকর্তারা বলছেন, এমনিতেই গ্যাসের সরবরাহ কম। তিতাস পর্যাপ্ত গ্যাস না পাওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করতে পারছে না। তাছাড়া শিল্প প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর ফলে অনেক জায়গায় গ্যাসের রেশনিং করতে হচ্ছে। ঢাকায় সিএনজি ফিলিং স্টেশন ও শিল্পকারখানাগুলোকে গ্যাস দিতে হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, টঙ্গি, সাভার এলাকায় শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেশি। তাই এসব এলাকার আবাসিক গ্রাহকরা কম গ্যাস পাচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App