×

জাতীয়

এসডিজি অর্জনে তিন চ্যালেঞ্জ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২২, ০৮:৩৩ এএম

এসডিজি অর্জনে তিন চ্যালেঞ্জ

ফাইল ছবি

চারটি অভীষ্ট সঠিক পথে ছয়টিতে উন্নতি তিনটি অপরিবর্তিত দুটির মূল্যায়নে উপাত্তে ঘাটতি

এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে দুটি লক্ষ্য দারিদ্র্য নিয়ে। প্রথমটি দারিদ্র্য শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা এবং দ্বিতীয়টি কোনো মানুষ অভুক্ত থাকতে পারবে না। করোনার পর ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক মন্দায় অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলে বিশাল দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে অর্থনীতির মূলধারায় সম্পৃক্ত করাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। সেইসঙ্গে শান্তি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে টেকসই উৎপাদন ও অংশীদারিত্ব তৈরিও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সরকারের প্রণোদনাসহ দারিদ্র্য বিমোচনের বিশেষ কৌশল সবক্ষেত্রে সঠিক প্রয়োগ এসডিজি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছেন তারা।

পরিবর্তনশীল বিশ্বে সমতা ও বৈষম্যহীন উন্নয়ন নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো ২০১৫ সালে এসডিজি স্থির করে। সংশ্লিষ্টদের মতে, টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে আগের চেয়ে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। এসডিজি অর্জনে বৈশ্বিক র‌্যাঙ্কিং অনুযায়ী, এসডিজির ১৭টি অভীষ্টের মধ্যে চারটি টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে সঠিক পথে ও ছয়টি অভীষ্ট অর্জনে বাংলাদেশ পরিমিত রূপে উন্নতি করেছে। এসডিজির তিনটি অভীষ্ট অর্জনে বাংলাদেশের অবস্থান অপরিবর্তিত ও দুটির মূল্যায়নের জন্য উপাত্তে ঘাটতি রয়েছে।

একসঙ্গে কাজ করলে ২০৩০ সালের আগেই এসডিজি অর্জন সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলতি বছরে (১৬ মে) এসডিজির বাস্তবায়ন পর্যালোচনার জন্য দ্বিতীয় জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান বলেন, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গঠনে নিরলস কাজ করছে সরকার। এক্ষেত্রে আমরা জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও সচেষ্ট আছি। এসডিজি একটি বৈশ্বিক উন্নয়ন ধারণা হলেও বাংলাদেশের উন্নয়নের পথ পরিক্রমার সঙ্গে এটি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের পথে আমরা সাত বছর অতিক্রম করছি। গত দুই বছর কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারির কারণে এসডিজি বাস্তবায়নের গতি কিছুটা মন্থর হয়েছে। তবে আমরা আমাদের সামর্থ্যরে সর্বোচ্চ ব্যবহার করে লক্ষ্য অর্জনে কাজ করে যাচ্ছি এবং যাব। অর্জনও করতে পারব বলে বিশ্বাস করি।

এসডিজির ১৭টি অভীষ্ট, ১৬৯টি লক্ষ্য ও ২৩২টি সূচক নির্ধারণ করা হয়। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের পেছনে বড় উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্যকে পরাজিত করা এবং একইসঙ্গে পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশকে সুরক্ষা দেয়া। এসব অভীষ্ট অনুযায়ী দারিদ্র্য বিমোচন, ক্ষুধা নিবারণসহ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জেন্ডার সমতা, নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন, সবুজ জ্বালানি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও শোভন কর্মসংস্থান ইত্যাদি নিশ্চিত করাসহ বৈষম্য দূর করা, টেকসই শহর ও জনপদ, জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা, টেকসই উৎপাদন ও ভোগ, সমুদ্র সম্পদের দায়িত্বশীল ব্যবহার, বাস্তুসংস্থানের সুরক্ষা, শান্তি সুরক্ষা ও অংশীদারত্ব তৈরি প্রভৃতি বিষয়গুলোকে উন্নয়নের অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এসডিজি বাস্তবায়নকে সামনে রেখে বাংলাদেশ সরকার অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা করেছে। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, এসডিজি অর্জনে আমাদের আরো শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে হবে। জাতিসংঘ স্বীকার করেছে আমাদের অর্জন ভালো।

এদিকে এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যের মধ্যে পরিমিত ভোগ ও টেকসই উৎপাদন ধরন নিশ্চিত করা এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব মোকাবিলায় জরুরি কর্মব্যবস্থা অর্জনে বাংলাদেশ সফল। সূচকের এ দুটি অবস্থানে তাই বাংলাদেশের রং সবুজ। এসডিজির ১ নম্বরে সব ধরনের দারিদ্র্যের অবসান এবং ৪ নম্বরে সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং জীবনব্যাপী শিক্ষা লাভের সুযোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ লক্ষ্য পূরণের পথেই রয়েছে। এসডিজি-১ এ বাংলাদেশকে রাখা হয়েছে কমলা তালিকায়। অর্থাৎ লক্ষ্য অর্জনের পথে বাংলাদেশের সামনে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এছাড়া এসডিজি-৩, এসডিজি-৬, এসডিজি-৯, এসডিজি-১৩, এসডিজি-১৪, এসডিজি-১৫, এসডিজি-১৬ এবং এসডিজি-১৭তে বাংলাদেশকে লাল তালিকায় রাখা হয়েছে। অর্থাৎ এই আটটি ক্ষেত্রে লক্ষ্য পূরণ করতে গেলে বাংলাদেশকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এসডিজি-৪ এ বাংলাদেশকে সূচকের হলুদ তালিকায় রাখা হয়েছে। এর অর্থ হলো এসব ক্ষেত্রে লক্ষ্য অর্জনে আরো অনেক কাজ করতে হবে। এসডিজির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহামারির কারণে বেকারত্ব এবং দারিদ্র্যের হার বেড়েছে। সূচকের শীর্ষে থাকা ফিনল্যান্ড এবং সবচেয়ে এগিয়ে থাকা দেশগুলোও মহামারির কারণে এসডিজির বেশ কিছু লক্ষ্য পূরণে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

এসডিজি অর্জনে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ভোরের কাগজকে বলেন, কোভিড, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে আর্থিক অবস্থা, সরকারি, বেসরকারি কার্যক্রম কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এটা সত্যি। কোভিড মোকাবিলায় সফল হয়েছে বাংলাদেশ। তবে যুদ্ধের গতি কমলে এসডিজি উন্নয়ন এগিয়ে যাবে। এখনো সময় আছে। ১৭টি অভীষ্টের মধ্যে সবগুলো না হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সফলভাবে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, কোভিড, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে সারা বিশ্বে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। দারিদ্র্য বাড়ছে। বাংলাদেশে শহরে দারিদ্র্য কিছুটা বেড়েছে। জলবায়ু মোকাবিলায় বাংলাদেশ সব সময় সোচ্চার। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহায়তার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এসডিজি অর্জনে সরকার, বেসরকারি, প্রাইভেট ও নাগরিক পার্টনারশিপ প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন এই অর্থনীতিবিদ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা মহামারি, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে অভীষ্ট-১৬ অর্জন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। অবস্থার উন্নতি না হলে অভীষ্ট ১৬ ও তার লক্ষ্য অর্জন কাগুজে দলিলে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সরকারকে এক্ষেত্রে নজর দেয়ার পরামর্শ তাদের। সুজন (সুশাসনের জন্য নাগরিক) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ভোরের কাগজকে বলেন, শান্তি-ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুশাসনের ক্ষেত্রে উল্টো পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। অভীষ্ট-১৬, বিশেষ করে এর আওতায় প্রতিশ্রæত সবার জন্য বৈষম্যহীনভাবে ন্যায়বিচার, অংশগ্রহণমূলক সুশাসন, প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও কার্যকারিতা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধমূলক লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়ন বাংলাদেশে স্বাভাবিক সময়েই কঠিন ছিল।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App