×

মুক্তচিন্তা

পুরান ঢাকার ঐতিহ্য রক্ষা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২২, ১২:১৬ এএম

রাজধানী ঢাকার এক প্রাণ পুরান ঢাকা। ঢাকা মহানগরীর এক আদি অঞ্চল এটি। প্রায় ৪০০ বছরের ইতিহাসে বাংলা সংস্কৃতির এক প্রাণকেন্দ্র এই পুরান ঢাকা। এই নগরীটির অবস্থান রাজধানী ঢাকার একটি ছোট অঞ্চলজুড়ে বিদ্যমান থাকলেও পুরো অঞ্চলটি যেন ধরে রেখেছে এক রাজ্য পরিমাণ ইতিহাস। ঢাকার পূর্ব-পশ্চিমের গেণ্ডারিয়া, ফরিদাবাদ থেকে হাজারীবাগ ট্যানারি মোড় পর্যন্ত এবং দক্ষিণে ঢাকা সদরঘাট থেকে নবাবপুর পর্যন্ত বিস্তৃত এই নগরীটি। পুরান ঢাকার ঐতিহ্য অধিক সাফল্যমণ্ডিত। একসময়ের সুপরিকল্পিত, সুন্দর ও ছিমছাম এই অঞ্চলটি সময়ের বিবর্তনে হারিয়ে ফেলেছে তার নিজ ঐতিহ্য। যদিও এ নগরীটি তার নিজ সমৃদ্ধি বজায় রাখতে হারিয়ে যাওয়া এই বিবর্তনকে টেনে ধরতে চাইছে কিন্তু সময় বিবেচনায় তা যেন অনেক অনুপযোগী ও অপরিকল্পিত। বুড়িগঙ্গা নদীর তীর ঘেঁষে ৭০০-১২০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে গড়ে উঠে ঐতিহ্যবাহী এই পুরান ঢাকা নগরী। পুরান ঢাকা মূলত ব্যবসায়ী এলাকা হিসেবে বেশ পরিচিত। আসলে পরিচিত নয় বরং একটি ব্যবসায়ী এলাকাই এটি। তবুও বাঙালিয়ানা সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র হিসেবে ও সবার প্রথমে নাম আসে এই পুরান ঢাকার। কিন্তু পুরান ঢাকার সংস্কৃতি যেন আর নেই। এই সংস্কৃতির ঘাড় চেপে বসেছে অনেকটা আধুনিকতা ও সংস্কৃতি বিমুখতা আর অনেকটা অব্যবস্থাপনা। তবে সবকিছু থেকে অব্যবস্থাপনার ভারটিই যেন অনেক বেশি। অপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা, জলাবদ্ধতা, যানজট, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ সবকিছু যেন আঁকড়ে ধরে বসে আছে এই পুরান ঢাকাকে। পুরান ঢাকা ঘিরে নেই কোনো নগরায়নের চিত্র। অলিগলির একেক দিকে জলাবদ্ধতা, পরিবেশও যাচ্ছেতাই। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে গড়ে উঠেছে নানা রকম অস্বাস্থ্যকর জিনিস। হাজারো মানুষের আনাগোনার এই অঞ্চলের আরেকটি সমস্যা হলো যানজট। আর এর একটি মূল কারণ হলো অপরিকল্পিত যানবাহন ব্যবস্থা। নিয়ন্ত্রণহীন যানবাহনগুলোই যেন মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থাকে করে তুলছে কষ্টকর, তৈরি করছে নানা রকম ভোগান্তির। এই নগরীটিতে রয়েছে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আর এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্যও এই যানবাহন ব্যবস্থা এক ভীতির কারণ। ক্যাম্পাসের বাইরে সারাদিনই যানজট আর যানবাহনের বেপরোয়া চালনা। রাস্তার জায়গা দখল করে দাঁড়ানো একের পর এক বাস। যেন কোনো বাসস্ট্যান্ড। ছোট ছোট জায়গা নিয়ে তৈরি করে নিয়েছে নিজস্ব বাস কাউন্টার। কিন্তু শিক্ষার্থীদের এর ফলে যে ঝামেলা তৈরি হয়, তা সবার জানা থাকলেও সবাই অগোচরে ফেলে রাখে এটিকে। নেই প্রশাসন কিংবা কর্তৃপক্ষের কোনো নজরদারি। পুরান ঢাকায় অবস্থিত এক ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা বাহাদুর শাহ পার্ক বা ভিক্টোরিয়া পার্কেও নেই কোনো নজরদারি। পুরো পার্ক যেন খাবারের দোকানের দখলে। আর এর সঙ্গে আরো দেখা মেলে ঘরহীন কিছু মানুষের। এই মানুষগুলোর মাঝে আবার দেখা মেলে কিছু পথশিশুর, যাদের অধিকাংশই অপরিচ্ছন্ন এক পরিবেশে নিজেদের ভাসিয়ে দিয়েছে মাদকের জগতে ও বিভিন্ন অনৈতিক কাজে। অনেক সময় এর সঙ্গে দেখা যায় প্রশাসনে অবস্থানরত কিছু নীরব দর্শকদের। পুরান ঢাকার ঐতিহ্য নিয়ে আলোচনা অধিক বিশদ হওয়াই স্বাভাবিক। কারণ একসময়ের এক প্রজ্জ্বলিত অঞ্চলের বর্তমান অবস্থা কারো জন্যই সহজে গ্রহণযোগ্য নয়। পুরান ঢাকায় অবস্থান করছে নানা ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা। রূপলাল হাউস, লালকুঠি, আহসান মঞ্জিল, জিনজিরা প্রাসাদসহ নানা রকম স্থাপনা রয়েছে এই অঞ্চলটিতে। কিন্তু এই স্থাপনাগুলোও অবহেলায় পড়ে আছে। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে এগুলোর সৌন্দর্য, হয়ে উঠছে ধ্বংসপ্রায়। দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখা এই পুরান ঢাকা কেবল অবহেলায় হারিয়ে ফেলছে তার সর্বস্বত্তা। সংস্কৃতির চাদরে আগলে থাকা এই পুরান ঢাকায় আজ সংস্কৃতির ছোঁয়া অনেক কমে গেছে। যে পুরান ঢাকা থাকা উচিত ছিল জৌলুসতায় পরিপূর্ণ। পুরান ঢাকার ঐতিহ্য আবারও ফিরিয়ে আনা উচিত। এর জন্য প্রয়োজন এক পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা। নিজেদের ঐতিহ্যগুলো এভাবে হারিয়ে ফেলতে ফেলতে এক সময় আমরা হয়ে উঠব সংস্কৃতিবিমুখ। তাই সবকিছু হারিয়ে যাওয়ার আগেই টেনে ধরতে হবে লাগাম। আর এর জন্য প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষের কড়া নজরদারি অনেক বেশি প্রয়োজন।

সাফা আক্তার নোলক : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App