×

জাতীয়

বাবা এই মহান জাতির গল্প বলেছিলেন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২২, ০৭:৫৯ পিএম

বাবা এই মহান জাতির গল্প বলেছিলেন

সিনেট ভবনে বক্তব্য দেন কেনেডি জুনিয়র। এর আগে পরিবারের সাথে কলা ভবনের সামনে বটতলায় কিছু সময় উপভোগ করেন। এসময় তাদের বাঙালি পোশাকে দেখা যায়। ছবি: ভোরের কাগজ

আমার বাবা আমাদের বড় হওয়ার সময় এই মহান জাতির গল্প বলেছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের শরনার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া লাখ লাখ বাঙালির কথা, নিজ বাচ্চার মৃতদেহ কোলে রাখা মায়েদের কথা, ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাজার হাজার শিক্ষক ও ছাত্রকে এলোপাতাড়ি গুলি করার কথা বলেছিলেন।

সোমবার (৩১ অক্টোবর) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি’র উপর একটি স্মারক ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি।

টেড কেনেডি জুনিয়র বলেন, আমি এইমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলার বটগাছটি পরিদর্শন করেছি যেটি আমার বাবা ১৯৭২ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কের প্রতীক হিসাবে রোপণ করেছিলেন। গত ৫০ বছর ধরে গাছটি যেমন বেড়ে উঠেছে তেমনি বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্কও চলছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড মো আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে এসময় তিনি বলেন, আমার বাবা যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের সম্পর্কের ও গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধারের প্রতীক হিসেবে সেসময় গাছটি রোপণ করেছিলেন। পাকিস্তানিরা ঐ জায়গায় থাকা বটগাছটি ১৯৭১ সালে উড়িয়ে দিয়েছিলো কারণ সেখানে শিক্ষার্থীরা একত্রিত হত ও আন্দোলন সংগ্রাম শুরু করতো। বাবা গাছটি রোপণ করেছিলেন যাতে শিক্ষার্থীরা আবার সেখানে জড়ো হয়ে রাজনৈতিক আলোচনা করতে পারে।

কেনেডি জুনিয়র বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কলা ভবনের সামনে অবস্থিত বটগাছের মতো বলে মন্তব্য করেছেন প্রয়াত মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড এম কেনেডির পুত্র এডওয়ার্ড (টেড) এম কেনেডি জুনিয়র।

তিনি বলেন, আমার বাবা ১৯৭২ এর ১৪ ফেব্রুয়ারিতে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলো তখন এখানকার শিক্ষার্থীরা তাকে স্বাগত জানিয়েছিল। সে সময় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দিলেও যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিলো।

তিনি আরো বলেন, সারা জীবন আমার বাবা বিশ্বের মানুষের কল্যাণের জন্য লড়াই করেছেন। জনগণের ওপর সরকারের সেন্সরশিপের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। সারা বিশ্বে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য, জনগণের নিবন্ধন ও ভোট দেয়া সহজ করার চেষ্টা করেছিলেন। একটি দলে রাজনৈতিক ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার বিষয়ে তিনি সচেতন ছিলেন এবং এর মধ্য দিয়ে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টির যে আশঙ্কা রয়েছে সে জন্য তিনি কাজ করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের বর্বরতার বিরুদ্ধেও তিনি কাজ করেছিলেন এবং অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য তাদের বিরুদ্ধে মামলাও করেছিলেন।

বক্তব্যের শেষে তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরো মজবুত হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন এবং এই আয়োজনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

এসময় তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারকে ১৯৭১ এ এডওয়ার্ড কেনেডির করা Crisis In South Asia শিরোনামের প্রতিবেদনের মূল কপি উপহার দেন।

অনুষ্ঠানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, যদিও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় আমেরিকার নিক্সন প্রশাসন মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলো কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের অনেক জনগণ, কনস্যুলেট ও সিনেটটরা সেসময় পাকিস্তানিদের সাহায্য করার জন্য মার্কিন প্রশাসনের বিরোধিতা করেছিলো। সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডিও তাদের মধ্যে একজন ছিলেন যিনি নিক্সন প্রশাসনের সমালোচনা করেছিলেন। এছাড়া তিনি ১৯৭১ সালে কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সম্মানের সঙ্গে আচরণ করার জন্য পাকিস্তান সরকারকে আহ্বান জানিয়েছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান পিতার মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার জন্য এডওয়ার্ড ("টেড") এম কেনেডি জুনিয়রকে ধন্যবাদ জানান। এসময় ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রয়াত মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড এম কেনেডির অসামান্য অবদানের কথা স্মরণ করে উপাচার্য বলেন, সেসময় বাংলাদেশের পক্ষে তিনি আন্তর্জাতিক জনমত গড়ে তুলেছিলেন। এসময় এম কেনেডির বাংলাদেশ সফরের মাধ্যমে দুই দেশের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

এর আগে এডওয়ার্ড (টেড) এম কেনেডি জুনিয়র তার পরিবারসহ রিকশায় ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করেন এবং তার পিতার রোপণ করা ঐতিহাসিক বটগাছটি সপরিবারে পরিদর্শন করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App