×

জাতীয়

শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন নয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২২, ০৭:০২ পিএম

শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন নয়

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন নয়

রংপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: ভোরের কাগজ

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শেখ হাসিনার অধীনে আর কোনো নির্বাচন হবে না। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। বিএনপি’র এমপিরা সংসদ থেকে পদত্যাগে প্রস্তুত।

শনিবার (২৯ অক্টোবর) বিকালে রংপুর কালেক্টরেট মাঠে আয়োজিত গণসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, এর আগে ১৯৭৪ সালে দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। মানুষ খাবার খেতে না পেরে রাস্তায় পড়েছিল। এখন আবার সেই অবস্থা ফিরে এসেছে। ১০ টাকা কেজির চাল খাওয়াতে চেয়ে আওয়ামী লীগ এখন ৯০ টাকার চাল খাওয়াচ্ছে। চিনির দামও বেড়েছে। শাকসবজিও মানুষ কিনতে পারছে না। এটা দুর্ভিক্ষের লক্ষণ। আমরা সেইদিকে আর দেশকে যেতে দিতে পারি না।

তিনি আরও বলেন, সমগ্র বাংলাদেশ নয় বিশ্বের অনেক মিডিয়া এই সমাবেশের দিকে তাকিয়ে আছে। সরকার নাকি জনগণকে ভয় পায় না। ভয় না পেলে গাড়ি কেন বন্ধ করতে হয়। কেন আমাদের নেতাদের গুলি করে মারো?

মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী সরকার গত ১৫ বছরে সব শেষ করে ফেলেছে। আপনারা অর্থনীতিকে চিবিয়ে খেয়েছেন, এখন দেশকে চিবিয়ে খাচ্ছেন। সব ক্ষেত্রে চুরি করেছে আওয়ামী লীগ। এমনকি আশ্রয়ণ প্রকল্পেও চুরি করেছে। এ সরকার সর্বভ‚ক সরকারে পরিণত হয়েছে। আমাদের ৬০০ নেতাকর্মীকে গুম করেছে এই সরকার। সহস্রাধিক মানুষকে হত্যা করেছে। আলেম-ওলামাদের মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করেছে। এখানে মানুষের মানবাধিকার নেই। এদের আর ক্ষমতায় থাকতে দেয়া যায় না।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে এখন দেশের মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে উঠেছে। জনপদে জনপদে বর্তমান ভয়াবহ অত্যাচার ও নিপীড়ণের মাধ্যমে দুঃশাসন প্রতিষ্ঠা করেছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির সমাবেশগুলোতে গণজোয়ার দেখে ভীত হয়ে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিচ্ছে। তাতে কোনো কাজ হবে না। বিএনপি যখনই সমাবেশ করবে তা জনসমাবেশে পরিণত হবে। যত বাধা আসবে তাতেই বিএনপির পক্ষে জনমত সৃষ্টি হবে। তিনি বলেন, গ্রামেগঞ্জে আবার বিএনপি জেগে উঠেছে। এই গণতন্ত্রের সংগ্রামে আমাদের জয়ী হতে হবে। যে নেত্রী সংগ্রাম করে দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলেন। দেশের অর্থনীতি একটি শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করিয়েছিলেন। তাকে আজ মিথ্যে মামলা দিয়ে সাজা দিয়ে বন্দী করে রাখা হয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশের যা কিছু ভালো অর্জন সবকিছু বিএনপির হাত ধরে এসেছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বহু দলীর গণতন্ত্র নিয়ে এসেছিলেন। সংবাদপত্রে স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, মানুষের অধিকারকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।

হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এই দেশে শেখ হাসিনার অধীনে আর কোন নির্বচান হতে দেয়া হবে না। আমাদের একটাই দাবি এই সরকারের পদত্যাগ।

নিত্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, পুলিশের গুলিতে দলের নেতা-কর্মীদের মৃত্যুর প্রতিবাদসহ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে দেশের সব বিভাগে গণসমাবেশ করছে বিএনপি। চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনার পর রংপুরে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হলো।

দুপুর ২টায় বিভাগীয় এই গণসমাবেশ শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে নির্ধারিত সময়ের সোয়া দুই ঘণ্টা আগে দুপুর পৌনে ১২টায় পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত শেষে মোনাজাতের মধ্য দিয়ে গণসমাবেশ শুরু হয়ে যায়।আরো বক্তব্য রাখেন- কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে আমীর খসরু মাহমুদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও সেলিমা রহমান, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব হারুন উর রশিদ, আসাদুল হাবিব দুল, আবদুল খালেক ও সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, হেলেন জেরিন খানসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দেন। সভাপতিত্ব করেন রংপুর মহানগর বিএনপির আহবায়ক শামসুজ্জামান সামু।

রংপুরেও খালেদা জিয়ার জন্য চেয়ার ফাঁকা

ময়মনসিংহ ও খুলনার মতো রংপুরেও গণসমাবেশ মঞ্চে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার জন্য ফাঁকা চেয়ার রাখা হয়। সভামঞ্চের ঠিক মাঝখানে রাখা সাদা কাপড়ে আবৃত চেয়ারে ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া’ লেখা একটি কাগজ লাগানো ছিল।

রংপুর মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মাহফুজ-উন-নবী ডন বলেন, বেগম খালেদা জিয়া আমাদের প্রেরণার উৎস। তিনি সভামঞ্চে উপস্থিত না থাকলেও আমাদের সবার অন্তরে আছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সম্মানে চেয়ারটি খালি রাখা হয়েছে। আজ লাখ লাখ নেতাকর্মী তার নিঃশর্ত মুক্তিসহ জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে এই মাঠে এসেছেন।

২টার পর থেকে নেতাকর্মীরা বাড়ির দিকে

সমাবেশ মঞ্চ ও মাঠের আশপাশসহ প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ১৩০টি মাইক টাঙানো হয়েছে। মাঠের পাশাপাশি নেতাকর্মীরা আশপাশের বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিয়েছেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠ বিভিন্ন স্লোগানে মুখর হয়ে উঠেছে। দলীয় প্রতীক ধানের শীষ ছাড়াও ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন নিয়ে এসেছেন নেতা-কর্মীরা। তবে তীব্র রোদের কারণে অনেকে সড়কের পাশে ছায়ায় জড়ো হয়েছেন। সমাবেশের সময় মাঠ পেরিয়ে নগরীর পাড়া-মহল্লার বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নেন নেতাকর্মিরা। বিএনপির গণ সমাবেশকে ঘিরে আগের দিন রাতে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা আসেন। তাদের অনেকেই অনুষ্ঠান শুরুর পর পরেই চলে যাওয়া শুরু করেন।

মাঠে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও রংপুরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী ও সমর্থক ছাড়াও রাজশাহী বিভাগের বগুড়া, জয়পুরহাট, নওগাঁসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা দলীয় লোকজনের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। যাদের বেশিরভাগই ভোর হওয়ার আগেই সমাবেশস্থলে এসে পৌঁছেন।

রংপুরে মহাসমাবেশে যুবদল নেতার মৃত্যু

বিএনপির রংপুর বিভাগীয় গণসমাবেশে এসে মারা গেলেন দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলা যুবদলের যুগ্ম-আহŸায়ক মোস্তাফিজুর রহমান (৪৫)। গতকাল শনিবার বিকেল ৪টার দিকে সমাবেশস্থলে তিনি মারা যান। বিষয়টি নিশ্চিত করে রংপুর মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মাহফুজ উন নবী ডন জানান, গণসমাবেশে যোগ দিতে সকালে দলীয় নেতা-কর্মীদের নিযয় মোস্তাফিজুর কাহারোল থেকে রংপুরে আসেন। এরপর ৪টার দিকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তিনি মারা যান। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে বলে তারা ধারণা করছেন।

মিছিলের নগরী

পরিবহন ধর্মঘটও থামাতে পারেনি বিএনপি নেতাকর্মীদের। রংপুর ক্রমশই মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়েছে। গতকাল শনিবার ভোর থেকে নগরীর প্রবেশমুখ মেডিকেল মোড়, টার্মিনাল রোড মাহিগঞ্জ সাতমাথাসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মিছিল নিয়ে আসতে দেখা যায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রধান সড়কগুলোতে বাড়ছে মিছিলের চাপ। লালমনিরহাটের বড়বাড়ি থেকে প্রায় ৫ শতাধিক অটোরিকশায় করে সাড়ে চার হাজারের বেশি বিএনপির নেতাকর্মী সকাল আটটার দিকে রংপুর শহরে প্রবেশ করেন। তাদের হাতে ছিল ধানের শীষ এবং বাঁশের লাঠিতে বাঁধা জাতীয় পতাকা। মুখে মুখে ছিলো বিভিন্ন শ্লোগান।

সারিবদ্ধভাবে একে একে অটোরিকশাগুলো সাতমাথা অতিক্রম করে পার্কের মোড়ে গিয়ে জমায়েত হয়। পরে সেখান থেকে বিশাল একটি মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলের দিকে রওনা হন তারা।

এছাড়া, রংপুরের অন্যান্য জেলা থেকে কেউ সাইকেলে, কেউ গরুর গাড়িতে, আবার কেউ পদব্রজে সমাবেশেরি উদ্দেশ্যে রওনা হন।।কিছু কিছু জায়গায় বিএনপি নেতাকর্মীদের পুলিশের বাধার মুখে পড়ার অভিযোগ করেছেন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর থেকে সামবেশে যোগ দিতে আসা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীদের একটি অটোরিকশা পুলিশ ঘুরিয়ে দিয়েছে বলে দাবি করেছেন সাদুল্যাপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহŸায়ক সফিকুল ইসলাম।

গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, বাস বন্ধ থাকায় সকাল ছয়টার দিকে তারা অটোরিকশা সাদুল্যাপুর থেকে রংপুরের উদ্দেশে রওনা দেন। কিন্তু রংপুরের মডার্ন মোড়ে আসার পর পুলিশ অটোরিকশা থামানোর পর বিএনপির কর্মী পরিচয় দেয়ায় আর সমাবেশে যেতে দেওয়া হয়নি। অবশ্য পুলিশের দাবি, তারা কাউকে বাঁধা দিচ্ছে না। বরং কাউকে সন্দেহ হলে নিরাপত্তার স্বার্থে তল্লাশি করছেন।

লাঠি হাতে সোডাউন

বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রংপুর বিভাগীয় গণসমাবেশে অংশ নিতে নগরীতে লাঠি হাতে সোডাউন দিতে দেখা গেছে কর্মীদের। সোডাউনে অংশ নেওয়া প্রায় প্রত্যেকের হাতে শুধু লাঠি দেখা গেছে। কারো কারো হাতে পতাকা ও ধানের শিষের সঙ্গে বড় বড় লাঠি থাকতে দেখা যায়। লালমনির হাট থেকে আসা একটা বড় মিছিল নগরীর বিভিন্ন সড়কে সোডাউন দিতে থাকে। সেই সোডাউনে প্রায় প্রত্যেকের হাতে বড় বড় লাঠি দেখা গেছে। কারো কারো হাতে পতাকা ও ধানের শিষের সাথে বড় বড় লাঠি রয়েছে। এছাড়াও নেতাকর্মীরা নগরীর সুরভি উদ্যানের সামনেরে সড়ক দখল করে লাঠি হতে নিয়ে বসে থাকে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App