×

সারাদেশ

রংপুরে বিএনপির গণসমাবেশ ঘিরে উত্তেজনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২২, ০৮:০৫ এএম

রংপুরে বিএনপির গণসমাবেশ ঘিরে উত্তেজনা

ছবি: ভোরের কাগজ

রংপুরে বিএনপির গণসমাবেশ আজ শনিবার। এই গণসমাবেশের একদিন আগে রংপুর জেলায় গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে। জেলা মোটর মালিক সমিতির ডাকা এই ধর্মঘট চলবে আজ সমাবেশের দিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। গতকাল সকাল থেকে কোনো বাস রংপুর ছেড়ে যায়নি। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। বাস না পেয়ে অনেকে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।

এদিকে, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় আগে ভাগেই সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেছেন বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। বাস বন্ধ থাকায় বিকল্প উপায়ে রংপুরে আসছেন তারা। কেউ মাইলের পর মাইল হেঁটে, কেউ ব্যক্তিগত গাড়ি, রিকশা, অটোরিকশা কিংবা মোটরসাইকেলে করে সমাবেশস্থলে আসছেন। গতকাল জুমার নামাজের পর শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে তরা অবস্থান নিয়েছেন। কারো হাতে কাঁথাবালিশ, কারো হাতে শুকনো খাবার, আবার কারো হাতে প্ল্যাকার্ড।

হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে মহাসড়কে যান চলাচল এবং রংপুর-কুড়িগ্রাম রুটে প্রশাসনের হয়রানির প্রতিবাদে গতকাল ভোর ৬টা থেকে আজ শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রংপুর জেলার সব রুটের বাস-মিনিবাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা মোটর মালিক সমিতি। ফলে রংপুরের সঙ্গে সারা দেশের পরিবহন যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বাধ্য হয়ে বিভিন্ন স্থানে যাত্রীরা ভেঙে ভেঙে যাওয়ায় গুনতে হচ্ছে বেশি ভাড়া। অনেকেই আবার গন্তব্যে না যেতে পেরে বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন।

গতকাল সকালে রংপুর নগরীর কামারপাড়ার ঢাকা কোচ স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, বাসের টিকেট কাউন্টারগুলো বন্ধ। স্ট্যান্ডে ঢাকাগামী সব বাস লাইন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এস আর ও নাবিল পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজাররা জানান, সমাবেশকে ঘিরে সহিংসতার আশঙ্কায় বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। রংপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালেরও একই দৃশ্য। সকাল থেকে কোনো বাস টার্মিনাল ছেড়ে যায়নি। জেলার সব রুটের বাস বন্ধ রয়েছে। ট্রাক, মাইক্রোবাস ও মিনিবাস চলাচলও বন্ধ রয়েছে।

আজ দুপুর ২টায় শহরের কালেক্টরেট ঈদগাঁ মাঠে বিএনপির সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলগমীর। এতে যোগ দিতে একদিন আগেই সমাবেশস্থলে যোগ দিতে দলবেধে আসছেন নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। সমাবেশে আগতদের বাধার দেয়ার অভিযোগ করেছেন অনেকে। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নেতাকর্মীরা বলেন, বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করেই সরকার গণপরিবহন বন্ধ রেখেছে। গণপরিবহন বন্ধ রেখে শহরের প্রবেশ পথে বিভিন্ন পয়েন্ট বাধা দিচ্ছেন সরকার দলের নেতাকর্মীরা। তবে কোনো বাধাই এই সমাবেশে জনসমাগম ঠেকাতে পারবে না।

আগে আসা নেতাকর্মীরা শহরের বানিয়াপাড়া এলাকায় খোলা মাঠে চুলা জ্বালিয়ে সবজি-খিচুড়ি রান্না করে ভাগাভাগি করে খেতে দেখা যায়। তাদের কয়েকজন জানান, গত বৃহস্পতিবার বিকালে তারা ঠাকুরগাঁও থেকে রওয়ানা হয়ে বানিয়াপাড়া আসেন। সমাবেশস্থল কাছে হওয়ায় তারা সেখানেই কাথা বালিশ নিয়ে রাত্রিযাপন করেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে সমাবেশস্থল কালেক্টরেট মাঠে শত শত নেতাকর্মীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে কথা হয় ঠাকুরগাঁও থেকে আসা নুরুজ্জামান নুরের সঙ্গে। তিনি ঠাকুরগাঁও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি। তিনি জানান, তার জেলা থেকে ইতোমধ্যে ৫ হাজার নেতাকর্মী রংপুরে এসেছেন। আরো অনেকে বিভিন্ন উপায়ে সমাবেশস্থলে এসে পৌঁছবেন।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনা সমাবেশের পর ভিন্নমাত্রা যোগ হচ্ছে রংপুরের সমাবেশে। এই সমাবেশ বিপুল সংখ্যক মানুষ উপস্থিত হবেন। সরকার গণপরিবহন বন্ধ করে আমাদের নেতাকর্মীদের পথরোধ করতে পারবে না। বাধা দিলে আরো বেশি মানুষ আসবে। বিএনপির সমাবেশে যোগ দেয়ার জন্য মানুষ মাইলে পর মাইল পায়ে হেঁটে রওয়ানা করেছেন। তারা রাতের মধ্যে সমাবেশস্থলে জড়ো হবেন। সমাবেশে আসা নেতাকর্মীরা চিড়া, মুড়িসহ বিছানা নিয়ে আসছেন। শত কষ্টের মধ্যেও তারা সমাবেশে যোগ দেবেন।

রংপুর বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, সরকারি হস্তক্ষেপে পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। সরকারি দলের মূল উদ্দেশ্য সমাবেশে আসা লোকজনকে বাধা দেয়া। কিন্তু পরিবহন ধর্মঘট কোনোভাবেই নেতাকর্মীদের সমাবেশে আসা ঠেকাতে পারবে না।

রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু বলেন, আমরা ধর্মঘট নিয়ে চিন্তিত না। গণসমাবেশে যোগ দিতে মানুষ উদ্গ্রীব হয়ে আছে। বৃহস্পতিবার রাতেও কয়েক হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক সমাবেশ সফল করতে এসেছেন। ধর্মঘটসহ যত বাধাই আসুক মানুষ সমাবেশে উপস্থিত হবেন। গণসমাবেশের জনস্রোত ধর্মঘট দিয়ে আটকানো যাবে না।

সমাবেশের সমন্বয়কারী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, সরকার আমাদের সমাবেশ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র করছে। আমাদের নেতাকর্মীদের বাধা দেয়া হচ্ছে। পরিবহন ধর্মঘটের নামে দেশের মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে। তবে কোন বাধা আমাদের সমাবেশ ঠেকাতে পারবে না। মানুষ যে যেভাবে পারছেন সমাবেশে আসছেন। রাতের মধ্যেই পুরো মাঠ ভরে যাবে। মঞ্চের কাজ দ্রুতই শেষ হচ্ছে। দেশের মানুষ তাদের দাবি আদায়ের জন্য এই সমাবেশে যোগ দেবেন।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, আমরা ২৯ অক্টোবর সমাবেশ করতে চেয়েছি। তবে সরকার গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়ায় এখন আমাদের সমাবেশ দুই দিন হচ্ছে। আজ থেকেই সমাবেশ শুরু হয়ে গেছে। মানুষ দল বেঁধে আসছে। আরো আসবে। রংপুরের দিকে আসতে থাকা বিএনপি নেতা-কর্মীদের কুড়িগ্রাম-রংপুর মহাসড়ক ও দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়কসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কে বাধা দেয়া হচ্ছে। তবে এসব সরকারের কোন লাভ হয়নি। উল্টো নেতাকর্মীরা উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে মাঠে উপস্থিত হয়েছে। রাতের মধ্যে সবাই চলে আসবে।

এদিকে রংপুরে বিএনপির গণসমাবেশের দিকে আওয়ামী লীগের লক্ষ্য না থাকলেও আওয়ামী লীগ নেতাদের সাঁটানো বিলবোর্ডের ওপর বিএনপির গণসমাবেশের বিলবোর্ড সাঁটানোর অভিযোগ করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিএনপির সাঁটানো বিলবোর্ড অপসারণে আলটিমেটাম দিয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে রংপুরে বিএনপি কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তাদের প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ।

গতকাল দুপুরে নগরীর বেতপট্টিতে দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিউর রহমান সফি বলেন, আমরা চাই, বিএনপির গণসমাবেশ শান্তিপূর্ণ হোক। কিন্তু তারা পায়ে পা রেখে উসকানিমূলক পরিবেশ সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। এমন করলে তাদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না। আমরা খেয়াল করছি, নগরীর বিভিন্ন মোড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিসহ সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রচারণা সম্বলিত আওয়ামী লীগের সাঁটানো বিলবোর্ডের ওপরে বিএনপির নেতারা তাদের গণসমাবেশের বিলবোর্ড সাঁটিয়েছেন। এটা অন্যায় এবং রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত কাজ।

এদিকে গণসমাবেশ সফল করতে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব হারুন উর রশিদ, রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল খালেক ও সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমসহ জেলা পর্যায়ের অন্যান্য নেতারা গতকাল বিকালে সমাবেশের মঞ্চ নির্মাণসহ অন্যান্য প্রস্তুতি এবং বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নেতাকর্মীদের খোঁজখবর নেন। পরে মাঠেই তারা সংবাদ সম্মেলন করে আজকের গণসমাবেশ সফল করতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App