×

অর্থনীতি

ঝুঁকিতে জাহাজ ভাঙা শিল্প

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২২, ০৮:৪৪ এএম

ঝুঁকিতে জাহাজ ভাঙা শিল্প

জাহাজ ভাঙা শিল্প

আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপ বা জাহাজের ভাঙা অংশের দামের নিম্নমুখিতা এবং দেশের বাজারে ডলার সংকটের কারণে এলসি বন্ধ থাকায় ঝুঁকিতে পড়েছে দেশের জাহাজ ভাঙা শিল্প। বর্তমানে বাজারে স্ক্র্যাপের চাহিদা থাকলেও সরবরাহ করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে টনপ্রতি লোকসান করতে হচ্ছে ১০-১৫ হাজার টাকা। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে দেশে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি কমেছে প্রায় ৫৬ শতাংশের বেশি। সব মিলিয়ে সম্ভাবনাময় খাতটি নিয়ে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা। সার্বিকভাবে যার প্রভাব পড়বে ইস্পাত শিল্প খাতে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে ডলার সংকটের কারণে এলসি বন্ধ। ছোট জাহাজ আমদানির সুযোগও বন্ধ। অন্যদিকে আমদানি খরচ এবং বর্তমান বাজার দরের মধ্যে বিস্তর ফারাক থাকায় বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। এভাবে চলতে থাকলে বন্ধ হয়ে যাওয়া ইয়ার্ড চালু করাই সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের। পর্যালোচনা করে দেখা গিয়েছে, গত সপ্তাহে দেশের বাজারে কেজি প্রতি স্ক্র্যাপ বিক্রি করা হয়েছে ৫৪ টাকা এবং প্লেট বিক্রি করা হয়েছে ৭৩ টাকায়। অর্থাৎ টন প্রতি স্ক্র্যাপের দাম পড়েছে ৫৪ হাজার এবং প্লেটের দাম ৭৩ হাজার টাকা। দুই মাস আগেও স্ক্র্যাপ ৬৫ টাকা এবং প্লেট ৮০ টাকা দরে বিক্রি করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানিতে দীর্ঘসূত্রতা থাকায় বেশি দামে স্ক্র্যাপ জাহাজ কিনে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।

গত দু-তিন মাসে টনপ্রতি আমদানিতে গড়ে ৫৩০ ডলার খরচ হলে তা অংকের হিসাবে দাঁড়ায় ৫৪ হাজার টাকা। তার সঙ্গে কাটিং, ব্যাংকের সুদ ও ভ্যাট-ট্যাক্স মিলে টনপ্রতি মালিকদের মোট খরচ দাঁড়ায় ৬৫ হাজার ৭০০ থেকে ৬৬ হাজার টাকায়। অর্থাৎ ৫৪ হাজারে স্ক্র্যাপ বিক্রি করলে টনপ্রতি ১২ হাজার টাকা লোকসান দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

এ ব্যাপারে জাহাজ ভাঙা মালিকদের সংগঠন বিএসবিআরএর সিনিয়র সহসভাপতি এবং ব্যবসায়ী মো. কামাল উদ্দিন আহমদ বলেন, যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়, তাহলে আগামী জানুয়ারিতে এলসি খোলা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে ব্যাংকগুলো। যদিও আমাদের তা মনে হচ্ছে না। চট্টগ্রামের শিপইয়ার্ড এখন কার্যত বন্ধ। এভাবে চলতে থাকলে অনেক ব্যবসায়ী নিঃস্ব হয়ে যাবেন এবং ব্যবসা একেবারেই বন্ধ করতে বাধ্য হবেন। সেজন্য সরকারের কাছে এ শিল্প খাতটি বাঁচতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানাই।

ইনভেস্ট ডটকমের তথ্যমতে, গত ২৫ অক্টোবর আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিটন স্ক্র্যাপ বিক্রি করা হয় ৩৬৫ দশমিক ৫০ ডলারে। ১০ আগস্ট বিক্রি হয়েছিল টনপ্রতি প্রায় ৪০০ ডলার দামে। অন্যদিকে চলতি বছরে সর্বোচ্চ দামে স্ক্র্যাপ বিক্রি হয় ২৭ ফেব্রুয়ারি ৬৪৫ ডলারে। অথচ ২০ ফেব্রুয়ারি এ স্ক্র্যাপ আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি হয় ৫০৫ ডলারে। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির শেষ ৮ দিনে স্ক্র্যাপের দাম বাড়ে একলাফে ১৪০ ডলার হয়েছে। মার্চ ও এপ্রিলের শেষ দিক পর্যন্ত স্ক্র্যাপের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও মে মাসে ৪৬০-৪৮৫ ডলারে বিক্রি হয়। তবে ১৯ জুন থেকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত স্ক্র্যাপের আন্তর্জাতিক দাম ৩৬৫ ডলার।

বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স এন্ড রিসাইকেলার্স এসোসিয়েশনের (বিএসবিআরএ) স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানির পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি বছরের ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত শিপইয়ার্ডে আমদানি করা হয়েছে ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৩১৪ দশমিক ৩৩ টনের ১২৫টি স্ক্র্যাপ জাহাজ। গত বছরের একই সময়ে আমদানি করা হয়েছে ২২ লাখ ৭৫ হাজার ৬৯১ টনের ২৩৭টি স্ক্র্যাপ জাহাজ। এক বছরের ব্যবধানে ১০ মাসে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি কমেছে ১১২টি এবং ১২ লাখ ৭৭ হাজার ৩৭৬ দশমিক ৬৭ টন। অর্থাৎ মোট আমদানি কমেছে ৫৬ শতাংশের বেশি।

জানা গেছে- দেশে প্রায় ১৮৫টি নিবন্ধিত ইয়ার্ড থাকলেও প্রতি বছর কাজ হয় ৪০-৫০টি শিপইয়ার্ডে। কিন্তু এখন সেই সংখ্যা নেমে এসেছে ২০টিতে। চালু থাকা শিপইয়ার্ডগুলোর কয়েকটিতে ঠিকাদারির মাধ্যমে কাজ হয়। স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি বন্ধ হলে কাজ বন্ধ হয়ে যাবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App