×

জাতীয়

আগামী বাজেটে থিম হোক সাসটেইনেবিলিটি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২২, ০৮:৩১ পিএম

আগামী বাজেটে থিম হোক সাসটেইনেবিলিটি

এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ, এর আয়োজনে এবং ইউএনডিপি এর সহযোগিতায় "বাংলাদেশে ব্যক্তি খাতের সাসটেইনিবিলিটি রিপোর্টিং "প্রত্যাশা ও অভিজ্ঞতা শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি। মহাখালী ব্রাক সেন্টার ইন অডিটোরিয়াম।

আগামী বাজেটে থিম হোক সাসটেইনেবিলিটি
আগামী বাজেটে থিম হোক সাসটেইনেবিলিটি
আগামী বাজেটে থিম হোক সাসটেইনেবিলিটি
আগামী বাজেটে থিম হোক সাসটেইনেবিলিটি

জাতীয় বাজেটগুলো ঘোষণার সময় একটি থিম থাকে। আগামী বাজেটে থিম হিসেবে সাসটেইনেবিলিটি ব্যবহার করা যায় কি না- তা সরকার ভেবে দেখতে পারে বলে জানিয়েছেন ঢাকা-৯ আসনের সংসদ সদস্য এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী ।

ইউনাইটেড নেশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউএনডিপি) বাংলাদেশ এবং ইউনাইটেড নেশনস এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম পভার্টি-এর সঙ্গে অংশীদারিত্বে সিটিজেনস প্ল্যাটফর্ম ফর এসডিজি, বাংলাদেশ কর্তৃক আয়োজিত বাংলাদেশে বেসরকারি খাতের টেকসই প্রতিবেদন: প্রত্যাশা এবং অভিজ্ঞতা শীর্ষক সংলাপে এ দিকগুলোর ওপর জোর দেয়া হয়।

শনিবার (২৯ অক্টোবর) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা-৯ আসনের সংসদ সদস্য এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, আমাদের টেকসই প্রতিবেদনের গুরুত্ব এবং এটি কিভাবে বেসরকারি খাতকে উপকৃত করতে পারে সে সম্পর্কে কথা বলা উচিত। এ লক্ষ্যে, বেসরকারি খাতের জন্য তিনটি অনুপ্রেরণা রয়েছে, ব্যয় হ্রাস, মুনাফা এবং আয় বৃদ্ধি। প্রক্রিয়াটি মাইক্রো-লেভেল ইন্ডাস্ট্রি থেকে শুরু হওয়া উচিত এবং এটিই মূল বিষয়। তিনি বলেন, সাসটেইনেবিলিটি প্রচার ও বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় ভোক্তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। সবার উচিত, সাসটেইনেবিলিটি শুধুমাত্র একটি প্রক্রিয়া হিসাবে নয়, একটি সংস্কৃতি হিসাবেও নেয়া ও প্রচার করা।

সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, আপনারা বলছেন রিপোর্টিং এর প্রয়োজন, বাংলাদেশ ব্যাংকও আমাদের কাছ থেকে জানতে চাচ্ছে, আমরা রিপোর্ট করেছি কিনা। কিন্তু এই রিপোর্টের যৌক্তিকতাটা কি? এই রিপোর্ট না করলে আমাদের ক্ষতিটা কি হবে বা আমি কোন সুযোগ থেকে বঞ্চিত হব এই বিষয়টি যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের private sector উপলব্ধি না করবে পরিবর্তন কিন্তু আসবে না।

তিনি বলেন, private sector এর motivation এর জায়গাগুলো হচ্ছে- তারা তাদের উৎপাদন খরচ কমাতে চায়, তাদের আয় বাড়াতে চায় এবং তাদের লাভের মাত্রাটা যেন সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকে এই তিনটা বিষয় ছাড়া যতই এসডিজি বলেন, environment social governance বলেন, it will not make a difference। এবং এটা শুধু বাংলাদেশের প্রাইভেট সেক্টর না, সারা বিশ্বে এটা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমি যেটা মনে করি প্রাইভেট সেক্টরের জন্য যেটা মটিভেটিং হবে সেটা হচ্ছে স্থায়িত্ব, মানে এই কোম্পানিটি আসলে টিকে থাকবে কিনা লং টাইম টিকে থাকবে কিনা এটার জন্য তারা কী প্রয়োজন। তিনি বলেন, আজকাল সারা বিশ্বে ই কমার্স কিভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এবং রিটেইল সেল কিভাবে ড্রপ করছে। why can't we go to the customer? so just not sustainability we should challenge the global network। তিনি আরো বলেন, একটা টি-শার্ট বিক্রি হয় কত পাউন্ডে ? আনুমানিক বিক্রি হয় ১০ পাউন্ডে সেই ১০ পাউন্ডের মধ্যে কতটুকু বাংলাদেশ পায়। ২ পাউন্ড বাংলাদেশ পায় বা ২০%। অর্থাৎ বিশ্ব বাজারে যে মূল্য তার শুধু ২০% আমরা পাচ্ছি বাকি ৮০% চলে যাচ্ছে মধ্যবর্তী স্তরগুলোতে। it's a dogy, dog mentality। কারণ আমি তো এই ২০% নিয়েই মারামারি করছি। ওই 20% নিয়ে যখন আপনি মারামারি করেন তখন সাস্টেইনএবিলিটি প্রোগ্রাম আপনাকে কে দিবে, কেন দিবে? সো ওই জায়গাতে আমার এডভাইস, আমরা ওইখানে কিছু করতে পারি কিনা দেখেন।

সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ইটিপির উপরে ডিউটির কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, হাজারিবাগ থেকে ট্যানারি স্থানান্তর করা হয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠানেরই ইটিপি আছে কিন্তু কেউ ব্যবহার করে না। কারণ ব্যবহার না করলে তার আনুমানিক দিনে এক লাখ টাকা খরচ কম হচ্ছে। যদি কোনোভাবে মনিটরিং টিমের হাতে ধরা পড়ে তাহলে তাকে মাত্র ২ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হয়। সুতরাং আলোচনা করে সামাজিক দায়বদ্ধতা বা এনভায়রনমেন্ট গভর্নেন্স করতে পারবো না। তার চেয়ে সরাসরি কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারের কিছু করনীয় আছে। কি ধরনের ইনসেনটিভ দিতে পারি সে বিষয়ে ভাবতে হবে।

সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, টেকসই প্রতিবেদন বেসরকারি খাতকে নিশ্চিত করতে সাহায্য করে যে স্বল্পমেয়াদী লাভ দীর্ঘমেয়াদী দায়বদ্ধতায় পরিণত না হয়। তৌফিক খান উল্লেখ করেন, ২০১৯ সালে ৩২০টির মধ্যে ৪৯টি ডিএসই তালিকাভুক্ত কোম্পানি (১৫%) স্থায়িত্ব প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। মাত্র ১১টি স্ট্যান্ডার্ড রিপোর্টিং ফ্রেমওয়ার্ক (৩%) অনুসরণ করেছে। উপস্থাপনাটি এ প্রেক্ষাপটে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছে, যার মধ্যে রয়েছে সচেতনতার অভাব, সক্ষমতার অভাব, সংস্কৃতির অনুপস্থিতি, দুর্বল কর্পোরেট গভর্ন্যান্স, শক্তিশালী নিয়ন্ত্রক নির্দেশনার অনুপলব্ধতা এবং বাংলাদেশে বেসরকারি খাতের জন্য অস্পষ্ট প্রণোদনা। তিনি বলেন, সব রিপোর্টের নিয়মিত বিশ্লেষণ বেসরকারি খাতের দৃষ্টিকোণ থেকে এসডিজি রিপোর্টিং উন্নত করতে পারে। এছাড়াও, সরকারের উচিত বাংলাদেশে টেকসই প্রতিবেদনের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের জন্য একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা।

সংলাপটি পরিচালনা করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো ও নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ফর এসডিজি, বাংলাদেশ এর আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি উল্লেখ করেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন এবং এসডিজি প্রক্রিয়ায় টেকসই রিপোর্টিং গুরুত্বপূর্ণ। এলডিসিতে আমাদের একটি কৌশলপত্র অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। তিনি বলেন, আমাদের রিলেশনাল ডেটার উপরও ফোকাস করা উচিত। তিনি দুই ধরনের ব্যর্থতার কথাও উল্লেখ করেন, নিয়ন্ত্রক ব্যর্থতা এবং বাজার ব্যর্থতা।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, সাধারণ জনগণের বিষয়ে সাসটেইনিবিলিটি অর্জনের প্রক্রিয়ায় সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকেও পাঠ্যসূচিতে টেকসই বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার পদক্ষেপ নিতে হবে। বেসরকারি খাত, রাজনৈতিক নেতা এবং উন্নয়ন কর্মীদের সহায়তায় টেকসই অর্জনের প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের নাগরিকদের অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টের অতিরিক্ত পরিচালক অমিতাভ চক্রবর্তী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ২০০৮ সাল থেকে টেকসইতার উপর জোর দিয়ে আসছে। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচী (ইউএনডিপি) বাংলাদেশের সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি প্রসেনজিৎ চাকমা বলেন, আমাদের অবশ্যই রিপোর্টিং প্রক্রিয়ার নিয়ন্ত্রক অবস্থা বের করতে হবে, তা স্বেচ্ছায় হোক বা বাধ্যতামূলক হোক এবং কোম্পানিগুলোর মধ্যে সচেতনতার মাত্রা পরিমাপ করতে হবে।

সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন সিপিডির বিশিষ্ট ফেলো অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সিনিয়র সহ-সভাপতি কামরান টি. রহমান, বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক, ঢাকার সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদসহ বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নেতা। এছাড়া ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের সিইও জাভেদ আখতার, বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড) এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিসেস ফেরদৌস আরা বেগম, প্রমুখ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App