×

জাতীয়

কৌশলগত অংশীদারত্বে জোর বাংলাদেশের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০২২, ০৭:৫৫ এএম

কৌশলগত অংশীদারত্বে জোর বাংলাদেশের

ফাইল ছবি

২৯ নভেম্বর জাপান যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন জাপান সফরে আলোচনার বিষয় ঠিক করতে ঢাকা ও টোকিওর মধ্যে জোরদার আলোচনা চলছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে ঢাকা সফররত জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়াবিষয়ক মহাপরিচালক ও সহকারী মন্ত্রী আরিমা ইউতাকা পররাষ্ট্র সচিব মো. মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

এতে বাংলাদেশ জাপানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে ‘কৌশলগত অংশীদারত্ব’ পর্যায়ে উন্নীত করার ওপর জোর দেয়। অন্যদিকে জাপান বাংলাদেশে সমরাস্ত্র বিক্রিসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ের ওপর জোর দেয়।

গত বুধবার ঢাকা এসেছে জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ও সহকারী মন্ত্রী আরিমা ইউতাকার নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল। আজ শুক্রবার প্রতিনিধি দলটি দেশে ফিরে যাবে।

জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, জাপানের সঙ্গে আমরা কৌশলগত অংশীদারত্বের বিষয়টি উন্নত করার জন্য কাজ করছি। জাপান বাংলাদেশে সমরাস্ত্র বিক্রির বিষয়ে সচিব বলেন, আগে কৌশলগত অংশীদারত্ব ঠিক হোক। তারপর বাকি বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার আমন্ত্রণে আগামী ২৯ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সফর করবেন। সফরকে কেন্দ্র করে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা সফররত জাপানের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্বে একটি সভা হয়। এতে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি এবং ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালকও (পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল) যোগ দেন। পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে উভয়পক্ষই দুই বন্ধুপ্রতীম দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করে এবং বিশেষ করে ২০১৪ সালের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরের কথা তুলে ধরে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে দেশ দুটোর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে ‘বিস্তৃত অংশীদারত্ব’ স্তরে উন্নীত করেন এবং ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের বাংলাদেশ সফরের সময় থেকে দুই দেশ গভীর অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব গড়ে তোলার প্রসঙ্গ টেনে সফররত জাপানের সহকারী মন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশ-জাপান বন্ধুত্বের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন জাপান সফর বাংলাদেশ-জাপান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ইতিহাসে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।

উভয়পক্ষ আশা করেছে, আসন্ন সফরে বাংলাদেশ ও জাপান উন্নয়ন সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, মানবসম্পদ উন্নয়ন, কৃষি, আইসিটি, শিক্ষা, প্রতিরক্ষা সংলাপ ও বিনিময়, জনগণের মধ্যে যোগাযোগ, প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে গভীর অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব গড়ে তুলবে। উভয়পক্ষই জলবায়ু পরিবর্তন, জাতিসংঘের সংস্কার, নিরস্ত্রীকরণ ইত্যাদি বিষয়ে আন্তর্জাতিক ফোরামে সহযোগিতা বাড়ানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, জাপান বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার। বর্তমানে দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক বেশ গভীরে। এ সম্পর্ককে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিতে চায় ঢাকা এবং টোকিও। সরকারপ্রধানের এ সফর উপলক্ষে গতকালের সভার আগে গত ২৮ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে সফরের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়। সফরকে কেন্দ্র করে এখন পর্যন্ত দুই দফায় আলোচনা হলো। দুই আলোচনায় দুই দেশের সম্পর্ক বাড়াতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলো সম্ভাব্য সুযোগগুলো খতিয়ে দেখার বিষয়টি উঠে এসেছে।

এদিকে, চীন ছাড়াও বিভিন্ন দেশ থেকে সামরিক সরঞ্জাম সংগ্রহ করছে বাংলাদেশ। আর এ সুযোগ নিতে চায় জাপানও। তারা বাংলাদেশের কাছে উন্নতমানের সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করতে আগ্রহী। আর এ কারণে দুই দেশের সম্পর্ককে কৌশলগত পর্যায়ে নিতে চায় দুই দেশই। বিষয়টি নিশ্চিত করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, সামরিক খাতে সম্পর্ক বাড়াতে হলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে কৌশলগত পর্যায়ে নিতে হয়। এখন সম্পর্ককে সেই পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রগুলো নিয়ে আলোচনা চলছে।

প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের নিয়মিত বৈঠক ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) করতে চেয়েছিল ঢাকা। তবে দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিবের সময় মেলাতে না পারায় বৈঠকটি হয়ে উঠছে না। এ কারণে অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো নিয়ে বৈঠক করতে জাপানের পক্ষ থেকে ঢাকায় এসে সংশ্লিষ্ট মহাপরিচালক বৈঠকটি করছেন। বৈঠক শেষে আজ শুক্রবারই দেশে ফিরছে প্রতিনিধি দলটি।

সামরিক খাতে সম্পর্ক বাড়াতে টোকিওর আগ্রহের কথা জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, জাপান প্রযুক্তিগত সমরাস্ত্রের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে। তারা বাংলাদেশের কাছে এর আগেও সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের সরঞ্জামগুলো মূলত নৌ ও বিমানবাহিনীর জন্য বেশি প্রযোজ্য। প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন জাপান সফরে সমরাস্ত্র কেনার বিষয়টি চূড়ান্ত না হলেও যৌথ বিবৃতিতে তার প্রতিফলন থাকতে পারে। যেমন, তাদের মিতসুবিশি প্রতিষ্ঠান উন্নতমানের রাডার তৈরি করে। টোকিও তাদের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিলে ঢাকা সেই পণ্যগুলো অন্য দেশগুলোর সঙ্গে দাম ও মানের বিষয়টি তুলনা করে দেখবে। তারপর তা কেনার বিষয়টি আসবে।

তিনি বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতিতে এত দাম দিয়ে পণ্য বাংলাদেশ কিনতে পারবে কিনা, সেটিও বিবেচনার বিষয় রয়েছে। বর্তমানে আর্থিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সমরাস্ত্র সংগ্রহ করার চেয়ে অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সংগ্রহে অগ্রাধিকার রয়েছে বাংলাদেশের।

স্বাধীনতার পর এখন পর্যন্ত বাংলাদেশকে সহজ ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে সব দেশের চেয়ে এগিয়ে জাপান। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশকে ২৮ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দেশটি। এর মধ্যে ১৮ বিলিয়ন ডলার ইতোমধ্যে পরিশোধ করেছে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরে প্রকল্প সহায়তার বিষয়ে কাজ করছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ। আগামী ২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে দ্বিতীয় আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানেই মূলত সফরের সার্বিক একটি ধারণা পাওয়া যাবে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, এ সফরের মধ্য দিয়ে উন্নয়ন অংশীদার জাপানের সঙ্গে সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। কারণ প্রধানমন্ত্রীর টোকিও সফর আগেই হওয়ার কথা ছিল। জাপানে বসন্তের সময় বিশেষ ধরনের ফুল সাকুরা ফোটে। সেই প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখানোর জন্য জাপানের পক্ষ থেকে সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু করোনার কারণে সফর তখন হয়নি।

বাংলাদেশ-জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে টোকিও সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। সফরে বাংলাদেশ আরো জাপানি বিনিয়োগ চাইবে। অন্যদিকে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল কৌশল রূপকল্প বাস্তবায়নে ঢাকাকে পাশে চাইবে টোকিও। তবে ঢাকা এ কৌশলের অর্থনৈতিক বা উন্নয়নভিত্তিক উদ্যোগের বাইরে সামরিক বা অন্য কোনো উদ্যোগে অংশীদার হতে চায় না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App