×

মুক্তচিন্তা

উপকূল বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০২২, ১২:১৬ এএম

উপকূল বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং

অবশেষে বাংলাদেশের উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলোকে তছনছ করে দিয়ে বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এবারকার মতো তার শক্তি হারিয়ে বিদায় নিয়েছে। কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড গরমে বোঝা যাচ্ছিল প্রকৃতিতে কোনো সমস্যার সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। আবহাওয়াবিদরা আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে একটি ঘূর্ণিঝড়কে নিম্নচাপের সৃষ্টির কথা জানাতে না জানাতেই তা প্রবলবেগে ভূমধ্যসাগরে গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়ে বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসতে লাগল। এবার ট্রপিক্যাল ঝড়ের নাম দেয়ার পালা ছিল থাইল্যান্ডের, থাইল্যান্ড এই ঝড়ের নাম দিয়েছিল ‘সিত্রাং’ ভিয়েতনামী ভাষার শব্দ যার অর্থ ‘পাতা’। নাম পাতা হলেও এটির ধ্বংস ক্ষমতা মোটেই পাতাতে সীমাবদ্ধ ছিল না, এটির আঘাতে সারাদেশে ১৭ জেলায় প্রাণ হারিয়েছে ৩৫ জন মানুষ। প্রায় ১০ হাজারের ওপরে ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে। ব্যাপকসংখ্যক মানুষ এখনো বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং বাংলাদেশের উপকূল থেকে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার দূরে থাকতেই বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিসগুলো জোর তৎপরতার মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে মানুষকে সতর্ক করার মাধ্যমে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বলেছে। এই সংকেতের মধ্যেও কিছু মানুষকে অধিক রাত পর্যন্ত সমুদ্রের আশপাশে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে, যা মোটেই উচিত হয়নি। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের আগে আমাদের দেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের সংকেতগুলোকে বাংলাদেশের মানুষ তেমন পাত্তা দিত না। হাজার মাইলিং করে নিরাপদ দূরত্বে সরে যেতে বললেও কেউ যেত না, ফলে সে সময় যেকোনো ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতিসহ যানমালের ক্ষতি হতো বেশি। বিশেষ করে ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল আবহাওয়া অধিদপ্তর ১০নং মহাবিপদ সংকেত দেখানোর পরও উপকূলবর্তী অঞ্চলের কোনো মানুষই তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে না যাওয়ায় সেদিন ইতিহাসের প্রবল প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় বয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের ওপর দিয়ে এবং ব্যাপক যানমালের ক্ষতিও হয়েছিল। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সিত্রাংয়ের সংকেত শোনার পর উপকূলবর্তী লাখ লাখ মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে সরে গিয়েছিল কিংবা এসব মানুষকে কর্তৃপক্ষ নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে এসেছিল, ফলে এটির আঘাতে বলতে গেলে ক্ষয়ক্ষতি কম হয়েছে। তবে সিত্রাংয়ের শক্তি এত বেশি ছিল যে এটি উপকূলবর্তী এলাকা একেবারে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে। এমন তাণ্ডব এবং আঘাত থেকে বাঁচতে উপকূলবর্তী এলাকায় প্রচুর পরিমাণ সাইক্লোন, টাইফুন এবং ঝড় সহনশীল গাছ রোপণ করতে হবে। উপকূল তথা উপকূলসংলগ্ন এলাকায় ঘন বৃক্ষাদির বাগান গড়ে তুললে যে কোনো ঝড় সেই বৃক্ষের ওপর দিয়ে চলে যাবে, এতে যানমালের ক্ষয়ক্ষতি আরো কমে আসবে। তাছাড়া ঘরবাড়ি তৈরি করার সময় আশপাশে বনায়ন তথা ঝড় সহনশীল গাছপালা রোপণ করলে ঝড়ের কবল থেকে ঘরবাড়িগুলো রক্ষা করা সহজ হবে। প্রকৃতপক্ষে আমাদের দেশের মানুষ আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রদত্ত সংকেত শোনার সঙ্গে সঙ্গে যদি তা শতভাগ মেনে চলে এবং সঙ্গে সঙ্গে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়, তাহলে অন্ততপক্ষে জীবনের ঝুঁকি থেকে বেঁচে যায়। জীবনের নিরাপত্তার জন্য এটি পালন করা সব নাগরিকের কর্তব্য। আমরা প্রত্যাশা করব ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের ধ্বংসযজ্ঞ থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষতে যে কোনো ঝড়ের সংকেতের সময় আমরা প্রত্যেকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকব এবং এসব ঘূর্ণিঝড় থেকে যানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নিজস্ব বসতভিটায় একটি স্থায়ী বনায়ন গড়ে তুলব। বিশেষ করে উপকূলবাসীকে এই বিষয়টা খুব কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। এ বিষয়ে সরকারের দায় রয়েছে, সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচাতে উপকূল তথা উপকূলবর্তী মানুষের যানমাল নিরাপত্তার জন্য কী ধরনের বনায়ন প্রয়োজন তা তারা তাদের হাতে কলমে শিখিয়ে দিতে হবে। তবেই আসবে সুফল।

রতন কুমার তুরী : লেখক ও শিক্ষক, ঢাকা। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App