×

সম্পাদকীয়

দুর্যোগ পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় পদক্ষেপ নিন

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২২, ১২:২৩ এএম

দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আছড়ে পড়া ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং স্থল নিম্নচাপ আকারে বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের আসামের দিকে অগ্রসর হয়েছে। সিত্রাংয়ের প্রভাবে উপকূলের বেশির ভাগ এলাকা জোয়ারে প্লাবিত। ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানার সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৮৯-১১০ কিলোমিটার। গত সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে আঘাত হানতে শুরু করা সিত্রাং রাতভর তাণ্ডব চালায় দেশের উপকূলীয় এলাকার ১৩টি জেলায়। এর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো পুরোপুরি জানা না গেলেও গতকাল দুপুর পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বিপদ কেটে যাওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে লোকজন ফিরতে শুরু করেছে। প্রায় ২২ ঘণ্টা পর সারাদেশে সব ধরনের নৌযান চলাচল শুরু হয়েছে। সিত্রাংয়ের প্রভাবে ঝড়ো হাওয়ার আগে ও পরে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ জেলা বিদ্যুৎবিহীন হয়ে যাওয়ার ১৮ ঘণ্টা পরও কিছু জেলায় বিদ্যুৎ ফিরে আসেনি। মেরামতে কাজ চলছে। আমরা আশা করি এসব উপদ্রুত এলাকায় দ্রুত বিদ্যুৎ এবং মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক পরিষেবা চালু হবে। উদ্ধার কার্যক্রমে সম্পৃক্ত রয়েছে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও স্বেচ্ছাসেবীরা। কিন্তু কেবল তাদের অপেক্ষায় বসে থাকলে চলবে না। সবাইকে উদ্ধার ও ত্রাণ বিতরণে এগিয়ে আসতে হবে। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী দুর্গত এলাকাগুলোতে জরুরি চিকিৎসা সহায়তায় বিশেষ মেডিকেল টিমকে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, স্যালাইন ও অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত থাকতে হবে। রাস্তাঘাটের ওপর উপড়ে পড়া গাছপালা সরিয়ে ফেলা দরকার, যাতে সহজে সাহায্যকারী দল আসতে পারে এবং দ্রুত যোগাযোগ সম্ভব হয়। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ফেরা মানুষদের পুনর্বাসনে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে। দুর্যোগ পরবর্তী এই সময়ে পানিবাহিত রোগ যেমন- ডায়রিয়া, কলেরা বেড়ে যায়। নলকূপ, পুকুর বা নদীর পানি ফুটিয়ে পান করতে হবে। এছাড়া এই সময়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়বে। এর থেকে বাঁচতে যেখানে-সেখানে জমে থাকা পানি জমতে দেয়া যাবে না। এসব অঞ্চলে মশানাশক ওষুধ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে কর্তৃপক্ষকে। মশারির পাশাপাশি শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি পৌঁছে দিতে হবে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনদের মধ্যে। বিশেষ করে নারী, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ও অসুস্থ লোকদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় ত্রাণ বণ্টন করা দরকার। দুর্যোগ চলে গেছে। এখন দ্রুত উৎপাদনশীল ধান ও শাকসবজির জন্য জমি প্রস্তুত করা, বীজ সংগ্রহ করা এবং কৃষিকাজ শুরু করা জরুরি, যাতে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি ফসল ঘরে তোলা সম্ভব হয়। সিত্রাং চলে যাওয়ার পরপরই আবহাওয়া অধিদপ্তর আগামী নভেম্বর মাসে আরেকটি ঝড়ের আশঙ্কা করছে। আমাদের এখনই সচেতন হতে হবে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে টানা ভারি বৃষ্টিপাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। বৃষ্টি আর ড্রেনের ময়লা পানি ঢুকে পড়েছে বাসা-বাড়িতে। ঝড়ের রাতের পর মঙ্গলবার সকালে রাস্তায় বেরিয়ে বিপাকে পড়তে হয়েছে কর্মজীবী মানুষকে। যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলা, সিটি করপোরেশন ও ওয়াসার কাজের মধ্যে সমন্বয় না থাকায় একটু বৃষ্টিতেই জলজটে পড়ে রাজধানী ঢাকা। জলাবদ্ধতা নিরসনে জনসচেতনতার পাশাপাশি কর্তৃপক্ষ দীর্ঘমেয়াদি, সমন্বিত ও সুষ্ঠু পদক্ষেপ নেবেন আশা করি। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর দুর্দশা ও বিপদ বিবেচনায় নিয়ে সবার মানবিক সহযোগিতা কামনা করছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App