×

সম্পাদকীয়

দুর্যোগ মোকাবিলায় সচেতনতা ও সার্বিক প্রস্তুতি

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২২, ০১:৩৩ এএম

ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে পৃথিবীর অন্যতম প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ এলাকা বাংলাদেশ। এবার উপকূলের দিকে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের অভিজ্ঞতা থাকলেও সিত্রাং এমন এক সময়ে আসছে, যখন দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব এরই মধ্যে পড়তে শুরু করেছে। সিত্রাং নামের এই ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র মঙ্গলবার ভোরবেলা বাংলাদেশের খেপুপাড়া অঞ্চল দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করবে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। এটি যে বাংলাদেশের ওপর দিয়েই অতিক্রম করবে এটা নিশ্চিত, কারণ ইতোমধ্যে ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রভাগ আমাদের উপকূলে চলে এসেছে। বঙ্গোপসাগরের একটি নিম্নচাপ রবিবার সন্ধ্যায় ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হয়। সিত্রাং নামটি থাইল্যান্ডের দেয়া। ‘সিত্রাং’ শব্দের ভিয়েতনামি অর্থ পাতা। আবার থাইল্যান্ডের বাসিন্দাদের পদবিও ‘সিত্রাং’। ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ রয়েছে ১০০-১১০ কিলোমিটার। উপকূলে ৫-৮ ফুট পর্যন্ত জলোচ্ছ¡াস হতে পারে। ঘণ্টায় ৬ কিলোমিটার বেগে এগোচ্ছে ঘূর্ণিঝড়টি। খেপুপাড়া থেকে দূরত্ব ৪৫০ কিলোমিটার। আগামী ৪৮ ঘণ্টা দেশের বেশিরভাগ এলাকায় ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাত হবে। সাগর এখন উত্তাল রয়েছে। দেশের উপকূলের প্রায় প্রতিটি জেলায় সিত্রাংয়ের প্রভাবে প্রবল বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ, অমাবস্যা তিথি ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, ল²ীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-৮ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ¡াসে প্লাবিত হতে পারে। মোংলা ও পায়রা বন্দরে সতর্ক সংকেত বাড়িয়ে ৭ নম্বর করা হয়েছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে চলছে ৬ নম্বর সতর্ক সংকেত। সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। এই নির্দেশনা মেনে চলা এবং সচেতন থাকার বিকল্প নেই। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়ার কথা জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে উপকূলীয় জেলাগুলোয় সাইক্লোন শেল্টারগুলো প্রস্তুত রাখতে মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দ্রুত সেখানে লোকজনদের সরিয়ে নিতে হবে। শুকনো খাবার ও পর্যাপ্ত পানির মজুত রাখা জরুরি। এটা ঠিক যে, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ¡াস ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ এখন আগের চেয়ে সক্ষমতা অর্জন করেছে। গত দশ বছরে দেশে কয়েকটি বড় ঘূর্ণিঝড় হয়েছে। অধিকাংশ ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে ছিল। আইলা, সিডরের সময় বাংলাদেশের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। সে সময় ক্ষয়ক্ষতি বেশি ছিল, কারণ আমাদের প্রস্তুতি ছিল না। কিন্তু এখন বাংলাদেশ অনেক বেশি সক্ষমতা অর্জন করেছে। এ কথা অনস্বীকার্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কমবেশি আসবেই। প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে দুর্যোগের ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি মানুষের চেষ্টায় যে কমিয়ে আনা সম্ভব তাতে সন্দেহ নেই। তাই যতটা সম্ভব দ্রুত উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের ছোবল থেকে রক্ষা করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App