×

জাতীয়

জীন থেরাপি; শিশুর স্নায়ু চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২২, ০৪:২০ পিএম

জীন থেরাপি; শিশুর স্নায়ু চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত

ছবি: ভোরের কাগজ

শিশুদের স্নায়ুর বিরল রোগ স্পাইনাল মাস্কুলার এট্রফি রোগাক্রান্ত শিশুর প্রায় ৯০ শতাংশ দুইবছর পর মারা যায়। গত বছর নিউরো সায়েন্সে প্রায় ৩০ জন শিশু এ রোগ নিয়ে ভর্তি হয়েছে। বিরল এ রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত বয়বহুল। এক ডোজ টিকা প্রায় ২২ কোটি টাকা। আক্রান্ত শিশুর জন্য প্রথমবারের মতো বিনামূল্যে জিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপী চিকিৎসা শুরু করেছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতাল।এই কাজে সহায়তা করেছে নোভার্টিস গ্লোবাল জেনো থেরাপি ম্যানেজ একসেস প্রোগ্রাম। চিকিৎসা ব্যয় না কমলে সাধারণ মানুষের জন্য দূরহ হবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবল) দুপুরে রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের কনফারেন্স রুমে শিশুদের স্নায়ুর বিরল রোগ স্পাইনাল মাস্কুলার এট্রফি তে আক্রান্ত শিশুকে প্রথমবারের মতো জিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপী চিকিৎসা বিষয়ে সায়েন্টিফিক সেশন এবং সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন।

স্বাস্থ্য সেবা সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, স্পাইনাল মাস্কুলার এট্রফির মতো এমন অনেক শত শত বিরল রোগ আছে, যে রোগ পরিবার ও রোগীর কষ্টের কারণ। সে জায়গায় জিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি আশার আলো নিয়ে এসেছে। কিন্তু এই থেরাপি ব্যয়বহুল। এই চিকিৎসা যদি মানুষের নাগালে আনা না যায় তাহলে সুফল পাওয়া যাবে না। আজকে যে শিশুকে থেরাপি দেওয়া হয়েছে সে ভাগ্যবান। রোগের চিকিৎসা যেহেতু শুরু হয়েছে, আশাকরি ব্যয় কমবে, মানুষ নিতে পারবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ভালো লিডারশীপ জাতিকে ভালোকিছু উপহার দেয়। নিউরোসায়েন্সে সেই ভালো নেতৃত্বের বহিঃপ্রকাশ দেখছি। এজন্যই শিশুদের বিরল রোগের এই টিকা বিনামূল্যে প্রদান সম্ভব হয়েছে।

তিনি বলেন, এখানে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মহোদয় উপস্থিত আছেন। আমরা অনুরোধ করবো শিশুদের এই জিন থেরাপি কিভাবে সহজলভ্য করা যায়। সেটা নিয়ে পলিসি মেকিংয়ে কাজ করবেন। স্টোকহোল্ডার হিসেবে আমরা সাথে থাকবো।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী দীন মোহাম্মদ বলেন, আমরা নিউরে সায়েন্সে যারা আছি। আমরা জানি আমরা সবাইকে ভালো করতে পারি না। এখানে আসা প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষকে ভালো করতে পারি। কিন্তু কিছু বিরল রোগ আছে। যা নিরাময় যোগ্য নয়। যেই রোগের অধিকাংশ আক্রান্ত শিশু ও বয়স্করা। যাদের বাঁচিয়ে রাখতে অনেক দক্ষ জনবল দরকার। আমরা জানি শিশুদের চিকিৎসার জন্য অনেক চিকিৎসক শিশু নিউরোলজিতে উচ্চ শিক্ষা শেষ করেছেন। তাদেরকে যথাযথভাবে নিউরো সায়েন্সে পদায়ন করলে পরে বিরল এসব রোগের যথাযথ চিকিৎসা করা সম্ভব।

তিনি বলেন, রোগীরা এখন হাসপাতালে ভর্তি হতে চায় না। কারণ দেশে চিকিৎসা ব্যয় বেড়ে গেছে। প্রাইভেট চিকিৎসা সবার নাগালে আর নেই। তাই সবাই দৌড়ে আসছে সরকারি হাসপাতালে। এজন্য এই খাতের ব্যয় কমাতে হবে। এসময় তিনি বলেন. ডা. নারায়ন সাহা ও জোবাইদার টিম একটা শিশুকে আকাশ দেখা ও বুক ভরে শ্বাস নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন এজন্য আমরা কৃতজ্ঞ।

নোভার্টিস গ্লোবাল জেনো থেরাপি ম্যানেজ একসেস প্রোগ্রামের প্রতিনিধি ডা. রিয়াদ মামুন প্রধান জানান, নোভার্টিসের এই জেনো থেরাপি কোনো ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল নয়। ২০১৯ সাল থেকে টিকা অনুমোদন সাপেক্ষে বাণিজিক্যভাবে দেওয়া হচ্ছে। গত আগস্ট পর্যন্ত দুই হাজার ৩০০ জনকে প্রয়োগ করা হয়েছে। এই টিকা সব দেশের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে থাকায় নোভার্টিস ২০২০ সাল থেকে গ্লোবাল জেনো থেরাপি ম্যানেজ একসেস প্রোগ্রাম চালু করে। সেখানে আবেদনের প্রেক্ষিতে লটারির মাধ্যমে প্রতি বছর দুইজনকে বিনামূল্যে টিকা দেওয়া হয়। বাংলাদেশ তিন জনের আবেদনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ এক শিশু পেয়েছেন। নোভার্টিসের উদ্যোগে এ পর্যন্ত প্রায় ২৫০ ডোজ টিকা বিনামূল্যে প্রয়োগ করা হয়েছে। আমরা রোগী শনাক্ত করে যত দ্রুত আবেদন করবো ততবেশি ভালো হবে। কেননা দুই বছরের পর এই টিকা আর দেওয়া হবে না।

প্রতিষ্ঠানের পরিচাল অধ্যাপক ডা. কাজী দীন মোহাম্মদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাইদুর রহমান, হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. বদরুল আলম ও পেডিয়েট্রিক নিউরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নারায়ন সাহা প্রমুখ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App