×

জাতীয়

প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ১৮ মাসের বদলে ৬ মাস

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর ২০২২, ০৫:০০ পিএম

প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ১৮ মাসের বদলে ৬ মাস

ফাইল ছবি

বরাদ্দ টাকা যাতে ফেরত চলে না যায় সেজন্য বিশ্বব্যাংক, ইউএনডিপি ও ইউনিসেফের পরামর্শে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ১৮ মাস মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন প্রাইমারি এডুকেশন (ডিপিএড) প্রশিক্ষণ বাদ দিয়ে দিচ্ছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর বদলে শিক্ষকদের জন্য ছয় মাসের মৌলিক প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করতে যাচ্ছে। প্রশিক্ষণের জন্য এরই মধ্যে ছয় মাস উপযোগী শিক্ষাক্রম প্রণয়নের জন্য বিভিন্ন কর্মশালা শুরু করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর। ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার বিষয়টি মৌলিক প্রশিক্ষণে পুরোপুরি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে এ নিয়ে কোনো কর্মকর্তাই প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি হননি। সব মিলিয়ে প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ নিয়ে এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি শুরু হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন।

প্রসঙ্গত, স্বাধীনতার আগে থেকেই দেশে প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য একবছর মেয়াদি সার্টিফিকেট-ইন-এডুকেশন (সিইনএড) চালু ছিল। ২০১০ সালের শিক্ষানীতি অনুযায়ী সিইনএডকে আরো যুগোপযোগী করে ১৮ মাস মেয়াদি ডিপিএড কোর্সের প্রবর্তন করা হয়। সেই কোর্স প্রবর্তনের এক যুগ কাটতে না কাটতেই সেটিও বাতিল করে দিয়ে শিক্ষকদের জন্য ছয় মাসের প্রশিক্ষণ কোর্স শুরু করতে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিইডিপি-৪ এর আওতায় বিশ্বব্যাংক, ইউএনডিপি ও ইউনিসেফ প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে ৩৪ শতাংশ অর্থ দেয়। এই উন্নয়ন সংস্থাগুলো প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে জানায়, শিক্ষকদের ডিপিএড প্রশিক্ষণে সময় ও অর্থ দুটোই অপচয় হচ্ছে। একে পরিমার্জন করে ছয় মাসে নিয়ে আসতে হবে। নতুবা অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। এরপরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ বিভাগ থেকে এ বিষয়ে গবেষণা করা হয়। এতে উন্নয়ন সহযোগীদের কথামতো গবেষণা প্রতিবেদনও তৈরি হয়। এরপরেই গত সাত মাস ধরে অত্যন্ত

নীরবে ডিপিএড বাদ দিয়ে ছয় মাসের শিক্ষক প্রশিক্ষণ কোর্স কীভাবে শুরু করা যায় তা নিয়ে মাঠে নামে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। তবে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ) তীব্র বিরোধিতা করে বলেছে, হঠাৎ করে দীর্ঘদিনের চলমান এই কোর্স বন্ধ না করে মৌলিক প্রশিক্ষণ নাম না দিয়ে চলমান প্রশিক্ষণ কোর্সের মান যুগোপযোগী করা উচিত। এছাড়া ২০২০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে শিক্ষকদের মানসম্মত প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করার কথা বলেছে নেপ। তবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বলছে, নেপ সকল প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকার পর এভাবে চিঠি দিতে পারে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. উত্তম কুমার দাশ গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, বর্তমানে ডিপিএড নামে শিক্ষকদেরকে যে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় সেটি কোনো কাজে আসছে না। এটি পাবলিক পরীক্ষার মতো অনেকটা মুখস্থ বিদ্যানির্ভর হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে শিক্ষকদের দক্ষতা ও যোগ্যতার উন্নয়ন কোনোটাই হচ্ছে না। তিনি বলেন, প্রশিক্ষণ কোর্সটি কোনো অর্থবহ ফলাফল না দেয়ায় প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন সহযোগী বিশ্বব্যাংক, ইউএনডিপি ও ইউনিসেফের পরামর্শে প্রশিক্ষণ কোর্স পরিমার্জনের জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়। কারণ তারা টাকা দেয়, তাদের কথা তো শুনতে হয়। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ বিভাগ থেকে দুটো গবেষণা করা হয়। এতে গবেষণায় উন্নয়ন সহযোগীদের কথার সত্যতা পাওয়া যায়। এরপরেই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে পরিবর্তনের কাজ শুরু হয়।

প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ) বিষয়টিতে আপত্তি জানিয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নেপ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিবর্তনের কাজে জড়িত, তারা আপত্তি জানাবে কেন? নেপের পাঠানো সেই চিঠি ভোরের কাগজ সংগ্রহ করেছে এবং তা পাঠ করে শোনালে ড. উত্তম কুমার দাশ বলেন, প্রশিক্ষণের নামে অনেক টাকাপয়সার খেলা থাকে। এজন্য হয়তো তারা এমনটি করেছে।

তবে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমির (নেপ) মহাপরিচালক মো. শাহ আলম বিষয়টি জানেন না বলে এড়িয়ে যান। আবার তাকে ফোন করা হলে তিনি নামাজে রয়েছেন বলে জানান। পরে আর তিনি এ বিষয়ে কথা বলেননি। ওই দপ্তরেরই পরিচালক ফরিদ আহমদ শিক্ষকদের ডিপিএড প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা চলছে বলে ভোরের কাগজকে জানালেও নেপ থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে কি না তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছেন। তিনি বলেন, আমাকে ফাইল দেখে বলতে হবে চিঠিটি কবে পাঠিয়েছি। তবে ডিপিএড কর্মসূচি পরিবর্তন নিয়ে অধিদপ্তর এবং মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলে জানান তিনি।

নেপের দেয়া মতামতে বলা হয়েছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা-২০১৯ এর বিধি (গ) অনুযায়ী, কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় হইতে দ্বিতীয় শ্রেণি বা সমমানের সিজিপিসহ স্নাতক (সম্মান) বা সমমানের ডিগ্রি’। সেক্ষেত্রে ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েট হিসেবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন। শিশু শিক্ষা কার্যক্রম বেশ জটিল ও কঠিন কাজ। শিশু শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য পৃথিবীজুড়ে অভিজ্ঞদের নিয়োগ করা হয়ে থাকে। তাই প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ যোগ্যতার পূর্বশর্ত হিসেবে ডিপিএড অন্তর্ভুক্ত না হওয়া পর্যন্ত ইন-সার্ভিস হিসেবে ডিপিএড প্রশিক্ষণ চলমান থাকতে পারে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App