×

সারাদেশ

খুলনায় ধর্মঘটে দুর্ভোগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২২, ০৮:৪৮ এএম

খুলনায় ধর্মঘটে দুর্ভোগ

খুলনা বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে জনদুর্ভোগ চরমে ওঠে। ছবি: ভোরের কাগজ

বিভাগীয় শহর খুলনায় বিএনপির সমাবেশ বিরাজ করছে টানটান উত্তেজনা। এরইমধ্যে শুরু হয়েছে বাস-লঞ্চ ধর্মঘট। দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। গতকাল শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে বাস ধর্মঘট শুরু হয়েছে। চলবে আজ শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি ও মহাসড়কে নসিমন, করিমন, মাহিন্দ্রা, অতুল, ইজিবাইকসহ তিন চাকার যানবাহন চলাচলের প্রতিবাদে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বাস-মিনিবাবাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়ন। গত ১৮ অক্টোবর রাতে খুলনা জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি ও খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন যৌথভাবে চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। বাসের পর খুলনার নৌরুট শুরু হয়েছে ৪৮ ঘণ্টা লঞ্চ ধর্মঘট। বেতন বাড়ানোসহ ১০ দফা দাবিতে খুলনা বিভাগীয় লঞ্চ লেবার এসোসিয়েশনের ডাকে গত শুক্রবার সকাল থেকে এ ধর্মঘট চলছে।

খুলনায় বাস ও নৌপথে ৪৮ ঘণ্টা ধর্মঘট শুরু হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। এদিকে বিএনপির অভিযোগ ২২ অক্টোবর বিএনপির খুলনা বিভাগীয় গণসমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করতে উদ্দেশ্য এ ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে। খুলনায় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় অবস্থানরত বাড়িতে পুলিশের অভিযানসহ গত বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন থানায় অর্ধশত নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন বলেও অভিযোগ করেছে বিএনপি। অন্যদিকে এই ধর্মঘটের সঙ্গে বিএনপির সমাবেশের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানান আন্দোলনরত শ্রমিক ও মালিক সমিতির নেতারা।

ডাকা আন্দোলনের ৪৮ ঘণ্টা ধর্মঘটে গত শুক্রবার ভোর ৬টায় খুলনার সোনাডাঙ্গা বাস টর্মিনাল থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। সব পথে গাড়ি বন্ধের ঘোষণা থাকলেও ঢাকা-খুলনার রুটের বাস যশোর ও গোপালগঞ্জ পর্যন্ত চলবে। সাতক্ষীরামুখী যেসব বাস যশোর হয়ে চলে, সেগুলোর চলাচল অব্যাহত থাকবে। তবে যেগুলো খুলনা হয়ে চলে সেগুলো বন্ধ থাকবে। মূলত খুলনায় কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে ও খুলনা থেকে বিভিন্ন রুটে গাড়ি ছেড়ে যাবে না এ দুই দিন।

খুলনা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস মালিক সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট কাজী এনায়েত হোসেন বলেন, বিএনপির সমাবেশের জন্য নয়, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি ও মহাসড়কে নসিমন, করিমন, মাহিন্দ্রা, অতুল, ইজিবাইকসহ তিন চাকার যানবাহন চলাচলের প্রতিবাদে মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে গতকাল সকাল ৬টা থেকে আজ শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দুদিন পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে আমাদের দাবি মানা না হলে প্রয়োজনে সময় আরো বাড়তে পারে।

এদিকে, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে ৪৮ ঘণ্টা খুলনার নৌরুটে লঞ্চ ধর্মঘট শুরু হয়েছে। লঞ্চ শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি, ভৈরব থেকে নওয়াপড়া পর্যন্ত নদীর খনন, ভারতগামী জাহাজের ল্যান্ডিং পাস দেয়াসহ ১০ দফা দাবিতে ধর্মঘট পালন করছেন যাত্রীবাহী লঞ্চের শ্রমিকরা। বাংলাদেশ লঞ্চ লেবার এসোসিয়েশনের খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন জানান, বেতন বৃদ্ধিসহ ১০ দফা দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট চলছে। এর সঙ্গে বিএনপির সমাবেশের কোনো সম্পর্ক নেই।

এদিকে খুলনায় বাস ও নৌপথে ৪৮ ঘণ্টা ধর্মঘট শুরু হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। দূর দূরান্তের যাত্রীদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। নগরীর গল্লামারী এলাকায় বাবা বাড়িতে বেড়াতে আসা পপি বেগম জানান, গত বৃহস্পতিবার সকালে তিনি জান?তে পারেন বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সংবাদ শুনে তিনি দুপুরের পরে খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা হন।

পারিবারিক কাজ শেষে যশোরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখেন কোন বাস চলছে না। জরুরি ভিত্তিতে তাকে বাড়িতে ফিরে যেতে হবে। ভেবে কোনো উপায় না পেয়ে মাহিন্দ্রায় করে যশোরের পথে যাত্রা কর?বেন বলে চিন্তা করেন। কিন্তু সেখানে বাধ সাধে চালক, তিনি নওয়াপাড়ার বেশি যেতে চাননি। ভাড়াও দ্বিগুণ দা?বি ক?রেন চালক। প?পি বেগম ব?লেন, ঘ?রে তার ছোট বাচ্চা র?য়ে?ছে। এখন যে?তে না পার?লে তার বিপদ হয়ে যাবে। তাই যেভা?বে হোক তাকে যেতে হবে।

অন্যদিকে দিকে, বিএনপির অভিযোগ ২২ অক্টোবর বিএনপির খুলনা বিভাগীয় গণসমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করতে এ ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে। খুলনায় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় গয়েশ্বর রায়ের অবস্থানরত বাড়িতে পুলিশের অভিযানসহ গত বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন থানায় অর্ধশত নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় নগরীর কে ডি ঘোষ রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ে বিএনপি খুলনা বিভাগ আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এই অভিযোগ করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, সহপ্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, সহধর্মবিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা, জেলা আহ্বায়ক আমীর এজাজ খান, জেলা সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পী, নগর সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. তারিকুল ইসলাম জহীর, জেলার আবু হোসেন বাবু প্রমুখ।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়ক শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ২২ অক্টোবর খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ বাঁধাগ্রস্ত করতে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ সম্মিলিতভাবে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। নগরীর অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী গণগ্রেপ্তার শিকার হয়েছেন। পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বাড়ি বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সমাবেশে না যাওয়ার জন্য কঠোর হুমকি দিচ্ছে।

তিনি বলেন, দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরু হয়ে চলবে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। এ সমাবেশ দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য। জনদাবির সমর্থনে আন্দোলনে শহীদ পাঁচ সহকর্মী হত্যার বিচারের দাবিতে। এই সমাবেশ খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে, দেশনায়ক তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিতে। জ্বালানি তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানোর দাবিতে। যেকোন মূল্যে এই কর্মসূচি সফল করার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App