×

অর্থনীতি

আক্রার বাজারে ঊর্ধ্বমুখী চাল, চিনি ও পেঁয়াজের দাম

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২২, ০৮:৩৮ এএম

আক্রার বাজারে ঊর্ধ্বমুখী চাল, চিনি ও পেঁয়াজের দাম

বাজারের দৃশ্যপট। ছবি: ভোরের কাগজ

ডলার ও গ্যাস সংকটের অজুহাত ব্যবসায়ীদের

ভরা মৌসুমে শুরু হওয়া চালের দামে ঊর্ধ্বগতি এখনও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। নতুন করে খুচরা বাজারে বেড়েছে চালের দাম। বাজারের আরেক পণ্য চিনির দাম সেঞ্চুরি পার করেছে। রাজধানীর অধিকাংশ দোকানে মিলছে না চিনি। চাল আর চিনির সঙ্গে দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে পেঁয়াজও। সপ্তাহের ব্যবধানে এসব নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন ভোক্তারা। খাবারের তালিকা কাটছাঁট করছেন তারা। তবে চাল, চিনি ও পেঁয়াজের দাম বাড়ার প্রধান কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা ডলারের বাজারের অস্থিরতাকে দায়ী করেছেন। আর চিনির দাম বাড়ার মূলে গ্যাস সঙ্কটের অজুহাত দেখান উৎপাদকরা।

সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারে নতুন করে মোটা চালের দাম বেড়েছে চার টাকা পর্যন্ত। গত সপ্তাহে যে চালের দাম খুচরা বাজারে ছিল ৫২ থেকে ৫৪ টাকা; সেই চাল গতকাল শুক্রবার বাজারে বিক্রি হয়েছে ৫৬ থেকে ৫৮ টাকায়। এর কারণ হিসেবে বিক্রেতারা বলছেন, বাজারের অধিকাংশ দোকানে স্বর্ণা জাতের অর্থাৎ মোটা চাল নেই। যেটা বিক্রি হচ্ছে সেটা পাইজাম। এই চাল দেশি এবং ভারত থেকে আমদানি করা।

রাজধানীর চাল বিক্রেতারা বলছেন, মৌসুম শেষ বলে কম দামের স্বর্ণা চাল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। সেজন্য দেশি ও ভারত থেকে আমদানি করা পাইজাম এখন মোটা চাল হিসেবে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। তবে পাইজামের দাম স্বর্ণা থেকে প্রতি কেজিতে ২ থেকে ৪ টাকা বেশি। তবে আমদানিকারকরা বলছেন, প্রতিনিয়ত ডলারের দাম বাড়ার কারণে চালের দামে একটা প্রভাব পড়ছে। কিন্তু পাইকারি বাজারে পাইজাম চালের দাম বাড়েনি। আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেনাপোলের অন্যতম চাল আমদানিকারক হাজী মোছা করিম এন্ড সন্সের স্বত্ত্বাধিকারী মো. আব্দুস সামাদ ভোরের কাগজকে বলেন, ব্যাংকে চাহিদামতো এলসি খোলা যাচ্ছে না। আর এলসি খোলার পর চাল আসতে আসতে প্রতি ডলারের দাম আরো দুই টাকা বেশি করে পরিশোধ করতে হয়। যে কারণে ব্যবসায় টিকে থাকা খুবই মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। তবে পাইকারি বাজারে পাইজাম চালের দাম বাড়েনি। আগের দামেই বিক্রি করছি আমরা।

এ বিষয়ে কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, বাজারে যদি কেউ কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে দাম বাড়ায় তাহলে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিত। তবে বিশ্ববাজারে অনেক পণ্যের দাম বাড়তি। তাই দেশের বাজারে এই দাম বাড়ার প্রভাব পড়তে পারে। খেয়াল রাখতে হবে কেউ যাতে এই বৈশ্বিক বাজারের অজুহাতে অতি মুনাফা লুটতে না পারে। সেই সঙ্গে ভোক্তার দুর্ভোগ লাঘবে সরকারকে সামাজিক কর্মসূচি আরো বাড়াতে হবে। যাতে নিম্ন আয়ের মানুষরা কম দামে পণ্য কিনতে পারে। শুধু চাল নয়, হুট করে বাজারে বেড়েছে চিনির দাম। সরকার নির্ধারিত ৮৪ টাকা দামের খোলা চিনি বাজারে ১০০ টাকায়ও মিলছে না। কিছু কিছু দোকানে ১১০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। আর প্যাকেটজাত চিনি তো পাওয়াই মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে চিনির সরবরাহ খুবই কম। যে কারণে বাড়তি দামে কিনে বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত সর্বশেষ দাম অনুযায়ী, প্রতি কেজি খোলা চিনি ৮৪ টাকা এবং প্যাকেট চিনি ৮৯ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু রিফাইনার্সরা চলতি মাসের শুরুতেই প্রতি কেজি খোলা চিনি ৯০ টাকা ও প্যাকেটজাত ৯৫ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়ে রেখেছেন ট্যারিফ কমিশনে। বাস্তবে সেটাও মানা হচ্ছে না, বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি দামে।

দেশে চিনির অন্যতম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপ। চিনির দাম বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা ভোরের কাগজকে বলেন, গ্যাস সঙ্কটের কারণে চিনির উৎপাদন অনেক কমে গেছে। যেখানে প্রতিদিন আমরা ৩ হাজার টন চিনি বাজারে দিয়েছি, সেখানে ৮০০ থেকে ১ হাজার টন বাজারে দিতে পারছি। যে কারণে আমাদের চিনির সরবরাহ কমেছে। শুধু চিনি নয়, গ্যাস সঙ্কটের কারণে সিটি গ্রুপের অন্যান্য পণ্যের উৎপাদনও কমেছে বলে জানান এই পরিচালক।

বাজারের আরেক অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি দশ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। যদিও এর আগে দেশে পেঁয়াজ নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড ঘটে গেছে। গত সপ্তাহে বাজারে ৫০ টাকায় বিক্রি হওয়া পেঁয়াজের দাম ১০ টাকা বেড়ে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ বিষয়ে কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা আবুল কালাম ভোরের কাগজকে বলেন, মৌসুমের শেষ, এজন্য পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম প্রতিদিনই এক-দুই টাকা করে বাড়ছে। প্রতিবছর এ সময় পেঁয়াজের দাম আরো চড়া থাকে। এ বছর সেই তুলনায় দাম অনেক কম। তিনি আরো বলেন, পাবনায় পেঁয়াজের দাম ২ হাজার টাকা মণ। রাস্তার খরচ আছে, সব মিলিয়ে ভালো পেঁয়াজ ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। আর একটু মান খারাপ পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৫৫ টাকায়। তবে বাড়তি দামের মূল কারণ পুরোনো পেঁয়াজ এখন শেষের দিকে, এ কারণে এক ধরনের ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। সব মিলিয়ে পেঁয়াজের দাম বাড়তি বলে জানান এই বিক্রেতা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কনসাস কনজুমার সোসাইটির (সিসিএস) নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদ ভোরের কাগজকে বলেন, অর্থনৈতিক মন্দার আলোচনা শুরু হতেই বেড়ে গেছে চাল, চিনি ও পেঁয়াজের দাম। হুট করে এই দাম বাড়ায় চরম বিপাকে পড়বেন সাধারণ মানুষ। কোনো অসাধু ব্যবসায়ী যদি কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে বাজারে দাম বাড়ায়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। আর সরকারের কাছে সবার তথ্য রয়েছে। কেউ যদি এই ধরনের অসাধু উদ্দেশ্যে দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করে, তাহলে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলেও মনে করেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App