×

জাতীয়

গণসমাবেশ সফল করতে ভিন্ন কৌশল বিএনপির

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২২, ০৩:৪৫ এএম

গণসমাবেশ সফল করতে ভিন্ন কৌশল বিএনপির

ফাইল ছবি

বিভাগীয় গণসমাবেশ শুরু থেকেই এর সাফল্য নিয়ে বেশ শঙ্কায় ছিলেন বিএনপির নীতি-নির্ধারকরা। তবে চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহে বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে দলটির তৃণমূল নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের বিপুল উপস্থিতি সেই শঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছে। বেড়েছে আত্মবিশ্বাসও। আগামীতে গণসমাবেশসহ যে কোনো কর্মসূচিতে বড় ধরনের বাধা আসতে পারে- এমন পরিস্থিতি ধরে নিয়েই ভিন্ন কৌশলে এগোচ্ছে দলটি।

আগামীকাল শনিবার বিএনপির খুলনা বিভাগীয় গণসমাবেশ। নগরীর সোনালী ব্যাংক চত্বরে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধিসহ চলমান আন্দোলনে বিএনপির নেতাকর্মীদের হত্যা, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে বিভাগীয় শহরে ১০টি গণসমাবেশের ডাক দেয় বিএনপি।

খুলনা সিটি করপোরেশন ও খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে চিঠি দিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। উভয় সংস্থা মৌখিকভাবে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে। দুপুর ১২টায় সমাবেশ শুরু হবে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চে আসবেন দুপুর ২টায়। বিকাল সাড়ে ৫টার মধ্যে তাদের সমাবেশ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

বিএনপির সিনিয়র নেতারা জানান, নিজেদের মধ্যে দ্বিধা-বিভক্তি ভুলে সমাবেশকে সফল করতে বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে এখন মাঠে। মামলা-মোকদ্দমায় আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীরাও প্রকাশ্যে এসেছেন। সমাবেশে সাধারণ মানুষের বিপুল অংশগ্রহণে নেতাকর্মীরা এতটাই উজ্জীবিত যে, সমাবেশের সফলতাকে তারা বাঁচা-মরার লড়াই হিসেবে দেখছেন।

জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহে সমাবেশে লোকসমাগম ঠেকাতে সরকার বিভিন্ন স্থানে বাধা ও গণপরিবহন বন্ধ করে দিয়েছিল। তবুও জনসভা শেষ পর্যন্ত জনসমুদ্রে রূপ নিয়েছে। এবারো তাই হবে। বাধা দিয়ে জনস্রোত রোধ করা যায়

না। এ সমাবেশ নিয়ে আমাদের নেতাকর্মীরা সবাই আশাবাদী। জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগে বাধ্য হবে। দলটির নীতি-নির্ধারকরা জানান, চট্টগ্রামের পর ময়মনসিংহে সফল সমাবেশের পর আগামী সমাবেশগুলো সফল করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগীয় নেতারা রীতিমতো নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। খুলনার সমাবেশ সফল করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ১০ দিন আগে থেকেই খুলনায় অবস্থান করছেন। সেখানকার স্থানীয় বড় নেতাদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক, কর্মীসভা, উঠানবৈঠক ও লিফলেট বিতরণ করেছেন।

খুলনা জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, সব বাধা উপেক্ষা করে যাতে নেতাকর্মীরা সমাবেশে অংশ নিতে পারেন, সে লক্ষ্যে ২-৩ দিন আগে থেকেই সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীদের খুলনায় গিয়ে তাদের আত্মীয়স্বজনের বাড়ি, আবাসিক হোটেলসহ সুবিধাজনক জায়গায় অবস্থান নিতে কেন্দ্রীয় নির্দেশ দেয়া হয়েছে। খুলনার বাইরে থেকে যারা যাবেন সমাবেশের দিন ছাড়া তাদের অযথা বাইরে ঘোরাঘুরি না করে সমাবেশের দিন দলবদ্ধভাবে অংশ নিতে বলা হয়েছে।

খুলনার দায়িত্বশীল নেতারা জানান, সমাবেশের দিন নগরের প্রতিটি স্পটে বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক টিম সতর্ক থাকবে। পুলিশ কিংবা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সমাবেশে যেতে বাধা দিলে তা প্রতিহত করার প্রস্তুতিও থাকবে। পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বিএনপির নেতারা কথা বলেছেন। গণপরিবহনে ভাঙচুর বা ক্ষয়ক্ষতি হলে দল দায়িত্ব নেবে এমন আশ্বাস দিয়ে সমাবেশের দিন গণপরিবহন বন্ধ না রাখতে বলা হয়েছে।

এছাড়া যানবাহন সংকট দেখা দিলে খুলনা নগরীতে যারা আছেন তাদের ট্রাক, পিকআপ, মাইক্রোবাস ও ব্যক্তিগত গাড়িতে করে আসার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া নিজ নিজ এলাকা থেকে নেতাকর্মী নিয়ে আসার জন্য গত নির্বাচনের সংসদ সদস্য প্রার্থী ও আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু ভোরের কাগজকে বলেন, জনগণের মধ্যে যে সাড়া দেখছি, তাতে আমরা বিশ্বাস করি, যত বাধা আসুক, পরিবহন বন্ধ করে দিক, জনস্রোত ঠেকাতে পারবে না। একটা রাজনৈতিক দলের মহাসমাবেশকে রাজনৈতিকভাবে ঠেকানো ছাড়া ষড়যন্ত্র করে ঠেকানো যায় না। এবারো ঠেকানো যাবে না।

খুলনার কয়রা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব নুরুল আমিন বাবুল জানান, তারা ২৫টি বড় ট্রলার ভাড়া করেছেন। প্রতিটিতে ১২০ জন করে ৩ হাজার নেতাকর্মী নৌপথে সমাবেশে যোগ দেবেন। যশোর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, আমরা খুলনার সমাবেশে ৫০ হাজারের বেশি মানুষকে নিয়ে যেতে প্রস্তুতি নিয়েছি। মাগুরা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আকতার হোসেন বলেন, বাস বন্ধ থাকলে বিকল্প উপায়ে, প্রয়োজনে হেঁটে মাগুরা থেকে নেতাকর্মীরা খুলনার সমাবেশে যোগ দেবে।

১১ মাস পর দলীয় কর্মসূচিতে সক্রিয় মঞ্জু

গত ১১ মাস বিএনপির রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় থাকলেও খুলনার গণসমাবেশে যোগ দিচ্ছেন মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও তার অনুসারীরা। এরই মধ্যে দুই দফা প্রস্তুতি সভা ও সমাবেশ সফল করতে নগরীতে লিফলেট বিতরণ করেছেন। মঞ্জু-মনি ও সাবেক নেতারা দলের কর্মসূচিতে ফেরায় কর্মীদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে। সূত্র জানায়, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ফোন করে মঞ্জুকে সমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে কাজ করতে বলেছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App