×

সম্পাদকীয়

ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে পদক্ষেপ জরুরি

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২২, ০২:১৪ এএম

অর্থনীতি ও উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরছে না। ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং আর্থিক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে। গত জুন পর্যন্ত ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে আদায় অযোগ্য ঋণ ৮৯ শতাংশ। নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে খেলাপি ঋণ ১৬ হাজার কোটি টাকা। ব্যবসা পরিচালনার নামে দেশের তফসিলি ব্যাংক থেকে এ বিশাল অঙ্কের টাকা নিয়ে হজম করে ফেলেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। এতে ভারসাম্য হারাচ্ছে ব্যাংকিং খাত। করোনার পর ২০২০ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ঋণ পরিশোধে ছাড় দেয়া হয়। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বৈশ্বিক মন্দা আরো প্রকট হয়। উদ্যোক্তাদের দাবির মুখে ঋণ পরিশোধে বিভিন্ন খাতে আবারো ছাড় দেয়া হয়- যা আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে। ঋণ ছাড়ের কারণে সঙ্গত কারণেই তিন বছর ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকে ঋণ আদায় করতে পারছে না। গ্রাহকদের মধ্যে ঋণ পরিশোধে চাপ না থাকার কারণে অনেকটা শিথিলতাও দেখা দিয়েছে। এছাড়া খেলাপি ঋণের প্রকৃত তথ্য প্রকাশ না পাওয়ায় অনেক তথ্য আড়ালে থেকে যাচ্ছে। যা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি অচিরেই হুমকির মুখে পড়বে। বৈশ্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় আইএমএফের কাছে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছিল বাংলাদেশ। প্রাথমিক আলোচনার পর আইএমএফ একটি প্রতিবেদন পাঠায়। প্রতিবেদনে ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় খেলাপি ঋণের নীতিতে পরিবর্তন আনার কথা বলা হয়। এই খাতে স্বস্তি ফেরাতে ঋণখেলাপিদের ছাড় বন্ধের সুপারিশ করা হয়। ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট দূর করতে এর গুরুত্ব রয়েছে বলে আমরা মনে করি। অর্থনৈতিক উন্নয়নের নানা সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি এবং সমৃদ্ধির উজ্জ্বল চিত্র আমাদের উল্লসিত করলেও ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি অশনিসংকেত। এ বিষয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে সবাই সচেতন এবং ওয়াকিবহাল। এ নিয়ে সরকারি বিভিন্ন মহলে এবং ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টদের মধ্যেও অস্বস্তি রয়েছে। অস্বীকার করার উপায় নেই, রাজনৈতিক ছত্রছায়া, স্বজনপ্রীতি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বৈশ্বিক যুদ্ধ ও মন্দার প্রভাব, ঢালাওভাবে ঋণখেলাপিদের ছাড় দেয়াসহ আরো বেশ কিছু কারণে ঋণখেলাপির ঘটনা ঘটছে। অনেক ক্ষেত্রে ভুয়া কাগজপত্র ও অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানকে মোটা অঙ্কের ঋণ দেয়া হয়। ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে যার পরিণতি ভয়াবহ। ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বিকল্প নেই। এই খাতকে স্থিতিশীল করতে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় দেয়ার নীতি থেকে সরে আসার যে সুপারিশ করেছে সে বিষয়ে নীতি নির্ধারকদের ভাবার ও পদক্ষেপ নেয়ার সময় হয়েছে। অব্যাহত ছাড় দিতে থাকলে একটি পর্যায়ে ঋণ পরিশোধে অনীহা সৃষ্টি হবে, সক্ষমতা হারাবে উদ্যোক্তারা এবং ব্যাংক ব্যবস্থা ভঙ্গুর হয়ে পড়বে। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেয়া।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App