ঘি তৈরির প্রধান উপকরণ দুধ হলেও সয়াবিন ও ডালডা দিয়ে একটি চক্র তৈরি করছিল নকল ঘি। পরে এসব ঘি তারা বিএসটিআইয়ের লোগো লাগিয়ে নামি-দামি বিভিন্ন ব্র‍্যান্ডের মোড়কে বাজারজাত করতো চক্রের সদস্যরা। এসব নকল ঘি ব্যবহারে স্বাস্থ্য ঝুঁকিসহ হৃদরোগের মতো মারাত্মক রোগেও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

রাজধানীর ডেমরার ডগাইর পূর্বপাড়ার একটি বাসা থেকে নকল ঘি তৈরি চক্রের দুজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপি গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন।

বুধবার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- মো. মামুন পাইক ও মো. সাব্বির। গত মঙ্গলবার গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ নকল নিউ ফ্রেশ গাওয়া ঘি, ফেমাস স্পেশাল গাওয়া ঘি, স্পেশাল বাঘাবাড়ি ঘি ও নকল ঘি তৈরির মেশিন, সয়াবিন তেল এবং ডালডা জব্দ করা হয়।

উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন স্বনামধন্য ঘি কোম্পানির মান ক্ষুন্ন করার লক্ষ্যে এ চক্রের সদস্যরা ভেজাল ঘি উৎপাদন করে আসছিলো। আর এই কাজে গ্রেপ্তারকৃতদের সঙ্গে তাদের আরো সহযোগী রয়েছে।

পুলিশের এই কর্মকর্তা আরো বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়, তারা প্রতারণামূলকভাবে, মিথ্যা ও অনিবন্ধিত ট্রেডমার্ক ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে দেশের স্বনামধন্য বিভিন্ন কোম্পানির ঘি ভেজালভাবে প্রস্তুত করে বেশি মুনাফা অর্জনের উদ্দেশে বাজারজাত করে আসছিলো। তাদের বিরুদ্ধে ডিএমপির ডেমরা থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

জব্দ হওয়া ঘি যে ভেজাল তা কিভাবে ডিবি নিশ্চিত হয়েছেন? জানতে চাইলে ডিসি ডিবি ওয়ারী বলেন, ঘি সাধারণত তৈরি হয় দুধ দিয়ে। কিন্তু কারখানাটিতে অভিযান পরিচালনা করার সময় দেখেছি সেখানে সয়াবিন, ডালডা ও বিভিন্ন কেমিক্যাল মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছিল। আসামিরাও স্বীকার করেছে তারা নকল ঘি তৈরি করছিল ওই কারখানায়।

নকল ঘিয়ের অভিযানে ডিবির সঙ্গে বিএসটিআই ছিল কিনা অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অভিযানটি আমরা একাই পরিচালনা করেছি। এছাড়া ঘিয়ের গায়ে বিএসটিআই'র সিলটিও নকল লাগিয়েছে তারা মানুষ জনকে বিশ্বাস দেয়ার জন্য। নকল ঘি কোন কোন এলাকায় বেশি সাপ্লাই করা হতো?

এমন প্রশ্নের জবাবে ডিসি ডিবি ওয়ারী বলেন, আসামিদের রিমান্ডে এনে আমরা এসব বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা করব। চক্রটি কাদের কাছে ঘি সরবরাহ করে ও কারা তাদের কাছ থেকে কিনে নিয়ে বিক্রি করতো সে বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। ক্রেতারা নকল ঘি কিভাবে চিনবে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্রাহক পর্যায়ে নকল ঘি চিনার কোনো উপায় নেই। নামি-দামি ব্র্যান্ডের ঘিয়ের হুবহু একই আদলে নকল ঘি প্যাকেট জাত করা হয়। এই জন্যই এইটা এখন চিন্তার বিষয়। যেসব বড় বড় দোকানিরা এসব ঘি বিক্রি করছেন তাদেরকেও আমরা সন্দেহের তালিকায় রেখেছি।

এক্ষেত্রে বিএসটিআই’র কোনো দায়ে আছে কিনা? জানতে চাইলে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, আসলে তারা মূলত তাদের লোগো নকল করে লাগাচ্ছে। বিএসটিআই নিশ্চয়ই তাদের নকল ঘি তৈরি করার অনুমোদন দেয়নি।