×

জাতীয়

তিনতলা দুটি ভবন নির্মাণে ব্যয় ৪৩ কোটি টাকা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২২, ১১:০৮ এএম

তিনতলা দুটি ভবন নির্মাণে ব্যয় ৪৩ কোটি টাকা

ফাইল ছবি

দুই সচিবের জন্য বিপুল টাকা খরচ করে সুরম্য আবাসিক ভবন নির্মাণের প্রস্তাবে তোলপাড় শুরু হয়েছে। সমালোচনার ঝড় উঠেছে সচেতন মহলে। তবে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় তোলপাড়ের খবর শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেছে। মন্ত্রণালয়টির শীর্ষ কর্মকর্তার পাল্টা প্রশ্ন, এ নিয়ে এত আলোচনার কী আছে?

বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে বিদ্যমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সরকার যখন সব খাতেই কৃচ্ছ্রতা সাধনের পথ বেছে নিয়েছে সেই সময়ে সচিবদের জন্য বিলাসবহুল আবাসিক ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা অপচয়ের শামিল। সংশ্লিষ্টদের কাণ্ডজ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তুলে তারা বলেছেন, যে দেশের মানুষ চাল, ডাল, তেলের জন্য টিসিবির ট্রাকের পেছনে দৌঁড়ায়, সে দেশের আমলাদের এত বিলাসিতার চিন্তা আসে বিভাবে? চলমান অর্থনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে অগণিত কর্মহীন হতদরিদ্র মানুষদের অন্ন সংস্থানের বিষয়টি অগ্রাধিকার বিবেচনায় রেখে এসব উচ্চাভিলাষী প্রকল্প আপাতত স্থগিত রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

বিশ্লেষকদের এই পরামর্শ অনেকটা উড়িয়ে দিয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছিউদ্দিন গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, সচিবদের বাড়ি প্রকল্প নিয়ে এত কথার কি আছে? আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে সম্মতি দিয়ে প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। এখন ওখান থেকে যদি চূড়ান্ত সম্মতি পায় তাহলে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। কাজেই এখন এটা নিয়ে এতো আলোচনার দরকার কি?

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, জনপ্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের দুটি পদ মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের জন্য রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেন এলাকায় দুটি বাসভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রকল্প অনুসারে এগুলো নির্মাণে খরচ হবে প্রায় ৪৩ কোটি টাকা। আর এই টাকার জোগান দেবে সরকারি তহবিল। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ৫০ কোটি টাকার নিচে প্রকল্প ব্যয় হওয়ায় অনুমোদনে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি লাগবে না। প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করে পরিকল্পনামন্ত্রী নিজ ক্ষমতাবলে এর অনুমোদন দিতে পারবেন। পরিকল্পনামন্ত্রী বিদেশে থাকায় এ বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, এই প্রকল্প নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার প্রেক্ষিতে মন্ত্রী এর অনুমোদন নাও দিতে পারেন।

গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বলছে, বেসামরিক প্রশাসনের শীর্ষ দুটি পদের বিপরীতে নির্ধারিত বাসভবন নেই। মন্ত্রিপরিষদ সচিব এখন রাজধানীর মিন্টো রোডে সরকারি বাসভবনে থাকেন। আর মুখ্য সচিব থাকেন রাজধানীর গুলশানে সরকারি বাসভবনে। তবে দুটি বাসভবন এই পদের বিপরীতে নির্ধারিত নয়। যখন যিনি এই দুটি পদে বসেন, তারা তাদের পছন্দমতো সরকারি বাসায় ওঠেন। সেজন্য দুটি পদের বিপরীতে আলাদা বাসভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেন এলাকায় যেখানে দুটি বাসভবন হবে, সেখানে এখন ছয়তলা দুটি ভবন আছে। একটি দোতলা গ্যারেজ ও আবাসিক ভবনও আছে। গণপূর্ত অধিদপ্তর বলছে, এসব ভবন অনেক পুরোনো। তাই এগুলো ভেঙে নতুন বাসভবন করা হবে।

প্রকল্পে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও মুখ্য সচিবের বাসভবনে দুই সেট সুইমিং পুল বানানোর পরিকল্পনা রাখা হয়েছে। এতে খরচ ধরা হয়েছে ৫ কোটি ১০ লাখ টাকা। সুইমিং পুল বানাতে এত টাকা খরচের প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই সমালোচনা করেছেন। প্রকল্পের নথি ঘেঁটে দেখা গেছে, তিনতলা দুটি ভবন নির্মাণে খরচ ধরা হয়েছে সাড়ে ৯ কোটি টাকা করে। এছাড়া দুটি ভবনেই অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জাতে খরচ হবে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। দুটি ভবনে আসবাবের পেছনে খরচ হবে দেড় কোটি টাকা। ২টি ভবনের জন্য ৭টি করে মোট ১৪টি এলইডি টেলিভিশন কেনা হবে। এতে ব্যয় হবে ৯ লাখ টাকা। সিসিটিভি সিস্টেম কেনা হবে ৩২টি। তাতে খরচ হবে ৬০ লাখ টাকা। অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থার জন্য পৌনে দুই কোটি টাকা খরচ হবে। এক হাজার কেজি লিফটে (ইউরোপীয় স্ট্যান্ডার্ড) খরচ ধরা হয়েছে ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থায় খরচ হবে ১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এছাড়া বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ খাতে খরচ হবে ১৮ লাখ টাকা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই বলেছেন, খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার বলেছেন, আগামী বছর বিশ্ব দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে পড়তে পারে। বাংলাদেশ যাতে সেই দুর্ভিক্ষের শিকার না হয় সেজন্য তিনি প্রতি ইঞ্চি জমি উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করতে বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের নিজেদের ভূমিকায় নিজেদের খাদ্য উৎপাদন করে নিজেদের সঞ্চয় করে এবং কৃচ্ছ্র সাধন করে চলতে হবে। আমরা আশা করি, সবাই সেভাবে চলবেন। সরকার কোনো কিছুই অপ্রয়োজনে ব্যবহার করতে যাবে না। তারা এও বলেছেন, হরিলুটময় দেশ আমার, লজ্জা নাই কোথা, ইস্কাটনে রাজপ্রাসাদ, আমলা আর আমলায় ঠাসা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App