×

জাতীয়

এলডিসি উত্তরণে চ্যালেঞ্জের মুখে এনজিও

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২২, ০৯:৪২ পিএম

এলডিসি উত্তরণে চ্যালেঞ্জের মুখে এনজিও

সংলাপ অনুষ্ঠানে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম

দেশ উন্নতির দিকে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কমছে এনজিওদের অর্থপ্রাপ্তি। ফলে মাঠ পর্যায়ে সামাজিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ছে। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ক্ষুদ্র এনজিও। সেই সঙ্গে সুশীল সমাজের ভূমিকাও সংকুচিত হচ্ছে। চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে এনজিও সুশীল সমাজ। এলডিসি উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে সমাজের এই অংশকে অবশ্যই বাঁচিয়ে রাখতে হবে। বুধবার (১৯ অক্টোবর) এলডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ আয়োজিত ‘বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ প্রক্রিয়ায় নাগরিক সংগঠনগুলোর ভূমিকা: সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক নীতি সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ সংলাপের আয়োজন করে এডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ। সংলাপ অনুষ্ঠানে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ একটি গবেষণা পত্র উপস্থাপন করেন। জরিপে উঠে আসে, বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান বা নাগরিক সংগঠনগুলোর সামগ্রিকভাবে অর্থায়নের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। বৈশ্বিক অর্থায়ন বাড়লেও এলডিসি তথা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে অর্থায়ন কমে যাচ্ছে। জরিপ অনুযায়ী প্রায় ৭০% প্রতিষ্ঠান মনে করে, সরকারের কাছ থেকে তহবিল লাভের চ্যালেঞ্জগুলো ভবিষ্যতেও বিরাজ করবে। ফলস্বরূপ, তহবিলের সীমাবদ্ধতা দারিদ্র্য, ক্ষুধা হ্রাস এবং মানসম্মত শিক্ষা বাড়াতে সিএসওগুলোর কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করবে। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন অনুমিত হিসাব সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন নিজেরা করির সমন্বয়ক খুশি কবীর, হাঙ্গার প্রজেক্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. বদিউল আলম মজুমদার, এ্যাকশন এইড’র কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবীর, ইউএনডিপির কান্ট্রি ইকোনমিস্ট ড. নাজনীন আহমেদ এবং ইআরডির এলডিসি গ্রাজুয়েশন প্রকল্পের নেসার আহমেদ। এছাড়াও বক্তব্য দেন- জাগো নারীর হোসনে আরা বেগম, ঠাকুরগাঁও’র এনজিও ব্যক্তিত্ব ড. শহীদুজ্জামান প্রমুখ। সংলপ সঞ্চালনা করেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের শাাহীন আনাম। মূল গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক এবং সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ বলেন, আগে বাজেট দিলে বিরোধীপক্ষে সবসময় ব্যানার নিয়ে মানি না, মানব না মিছিল হতো। আমরাও বিরোধীদলে থাকতেও সেটি করেছি। কিন্তু এখন সময় বদলে গেছে। এখন আর মিছিল হয় না। মানুষ বোঝে বাজেট কীভাবে হয়। তবে বাজেট বাস্তবায়নই বড় কথা। এলডিসি উত্তরণের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে রফতানি ও বাণিজ্য সুবিধা কমে যাওয়া। এছাড়া আরও অন্যান্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে এখন থেক প্রস্তুতি নিতে হবে।আগামী কয়েক বছর বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কর্মকর্তাদের দরকষাকষির দক্ষতা বাড়াতে হবে। এলডিসি উত্তরণে দেশের ভাবমূর্তি উন্নত হওয়ায় বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আসলেই কি আমাদের উন্নতি হচ্ছে? জীবন যাত্রার মানের উন্নয়ন হচ্ছে? আমাদের ভোটাধিকার নেই, সুশাসনের অভাব, মানাবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। এসব নিয়ে আমাদের প্রশ্ন আছে। আমাদের মধ্যম আয়ের দেশে যেতে যেসব পরিবর্তন হচ্ছে তাতে আরও পরিবর্তন দরকার। এসব ক্ষেত্রে নাগরিক সমাজের অংশগ্রহণ কমে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হলে আমাদের বৈদেশিক সম্পদ আসা কমে যাবে। সেজন্য অভ্যন্তরীণ সম্পদের ব্যবহার বাড়াতে হবে। সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সরকারকে নজরদারিতে রাখার কথা। কিন্তু তাদের নজরদারিকে রাখবে কে। সেখানেই সিভিল সোসাইটিকে ভূমিকা রাখতে হবে। দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ঢাকার বাইরে অনেক এনজিও’র কাজই বন্ধ হয়ে যাবে। জরিপে অংশ নেয়া তিন চর্তুথাংশ মানুষ মনে করে, এলডিসি উত্তরণের ফলে তহবিল সংকট দেখা দিয়েছে। ১৩ থেকে ১৪ শতাংশ মনে করে অর্থায়ন বেড়েছে। কিন্তু অধিকাংশরই অর্থায়ন কমেছে। ৫৮ শতাংশ বলেছেন, বিদেশি অর্থায়ন আসা বন্ধ হয়েছে। এনজিও খাতে বৈদেশিক অর্থায়ন, সরকারি অর্থায়ন এবং আর্ন্তজাতিক বেসরকারি ফাউন্ডেশনগুলোরও অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ইউএনডিপির কান্ট্রি ইকোনোমিস্ট ড. নাজনিন আহমেদ বলেন, এলডিসি উত্তরণের ফলে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের জন্য একটি পরিকল্পনা করা দরকার। অনেক দেশ মধ্যম আয়ের ফাঁদে পড়েছে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। ২০২৬ সালের পর বড় চ্যালেঞ্জ হবে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়ানো। এক্ষেত্রে মানব দক্ষতা বাড়াতে হবে। এটি করতে হলে এনজিও এবং সুশীল সমাজকে কাজে লাগাতে হবে। খুশি কবীর বলেন, দেশকে উপরের দিকে নিয়ে যেতে হলে এনজিও এবং নাগরিক সমাজকে কাজে লাগাতে হবে। এটা সরকার ও নাগরিকদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয় নয়। এটা পারাস্পারিক সহযোগিতার বিষয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App