×

সম্পাদকীয়

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতা ও পদক্ষেপ জরুরি

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২২, ১২:১৩ এএম

কোনোভাবেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। দিন দিন প্রকোপ বাড়ছে। দুই সিটি করপোরেশন দাবি করছে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে, তাদের কোনো ত্রæটি নেই। এরপরও কেন ডেঙ্গুর প্রকোপ কমছে না সেটা দেখার বিষয়। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মূল কাজের প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে সিটি করপোরেশন লোক দেখানো কর্মসূচিতে ব্যস্ত- এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৫৫ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ বছর একদিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার রেকর্ড এটি। নতুন রোগীদের নিয়ে ঢাকার ৫১টি হাসপাতালে মোট ভর্তি আছে ১ হাজার ৯৫৭ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় এসব হাসপাতালে নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে ৫২৩ জন। এ নিয়ে চলতি বছর এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ২৫ হাজার ১৮১ জন। মৃত্যু হয়েছে ৯৪ জনের। হাসপাতালগুলোতে শয্যা সংকটের কারণে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে দৌড়াতে হচ্ছে রোগী ও স্বজনদের। ডেঙ্গুর জীবাণু মানুষের শরীরে আসে এডিস মশার মাধ্যমে। বর্ষায় বাসাবাড়িতে পানি জমে এই মশার বংশবিস্তার বেশি ঘটে। ২০১৯ সালে সবচেয়ে বেশি ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছিল। সে বছর জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত প্রথম ৫ মাসে ৩২৪ রোগী ছিল। গত বছর দেশে ২৮ হাজার ৪২৯ রোগী শনাক্ত হয়। যার মধ্যে প্রথম ৫ মাসে রোগী ছিল মাত্র ১০০ জন। ২০১৯ ও ২০২১ সালের প্রথম ৫ মাসের তুলনায় চলতি বছর রোগীর সংখ্যা বেশি। চিকিৎসকরা বলছেন, যথাযথ নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া অনুসরণ ও জনসচেতনতা সৃষ্টি হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। এখনো ডেঙ্গুজ্বরের কোনো প্রতিষেধক বের করতে পারেনি সরকার। ডেঙ্গু থেকে রেহাই পেতে হলে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় জরিপ চালিয়ে ১২ শতাংশের বেশি বাড়িতে ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক এডিস মশার লার্ভা পেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার ৯৮টি ওয়ার্ডে চালানো এই জরিপে ২৭টি ওয়ার্ডকে ‘অধিক ঝুঁকিপূর্ণ’ চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আর এসব ওয়ার্ডকে গুরুত্ব দিয়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। কিন্তু ভরা মৌসুমে যখন ডেঙ্গু পরিস্থিতি দিন দিন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে তখন সিটি করপোরেশনের ডেঙ্গু নিধন কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আইইডিসিআরের তথ্য মতে, সাধারণত জুন-জুলাই থেকে শুরু করে অক্টোবর-ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ডেঙ্গুর বিস্তার থাকে। সাধারণত মশক নিধন কার্যক্রমের স্থবিরতা, গাইডলাইনের অভাব এবং মানুষের অসচেতনতাই ডেঙ্গুর প্রকোপের জন্য দায়ী। হঠাৎ থেমে থেমে স্বল্পমেয়াদি বৃষ্টিতে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার লার্ভা খুব বেশি মাত্রায় প্রজনন সক্ষমতা পায়। ফলে এডিস মশার বিস্তারও ঘটে বেশি। উৎস বন্ধ না করতে পারলে ডেঙ্গুর ঝুঁকি থেকেই যাবে। ঢাকা সিটির দুই মেয়র ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালাচ্ছেন বলে দাবি করছেন। আমরা মাঠপর্যায়ের কাজের বাস্তবায়ন দেখতে চাই। এক্ষেত্রে নগরবাসীকেও সচেতন থাকতে হবে। এবার জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে বৃষ্টিপাতের মৌসুমও পরিবর্তিত হয়েছে। ডেঙ্গুর এই জ্যামিতিক হারে বেড়ে যাওয়া খুবই উদ্বেগের। হাসপাতাল থেকে ডেঙ্গু রোগীর ঠিকানা সংগ্রহ করে রোগীর এলাকায় মশা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারলে ডেঙ্গু রোধে তা অনেকটা কার্যকর হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App