×

শিক্ষা

ক্যান্টিন বন্ধে বিপাকে শিক্ষার্থী, খোঁজ নেই প্রভোস্টের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২২, ০৭:৩৭ পিএম

ক্যান্টিন বন্ধে বিপাকে শিক্ষার্থী, খোঁজ নেই প্রভোস্টের

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা হল প্রাধ্যক্ষের মৃত্যুর সংবাদ ছাপিয়ে হলের বিভিন্ন স্থানে সাঁটিয়ে দেয়

ক্যান্টিন বন্ধে বিপাকে শিক্ষার্থী, খোঁজ নেই প্রভোস্টের

গত ১৫দিন ধরে সূর্যসেন হলের ক্যান্টিন বন্ধ আছে। ছবি: ভোরের কাগজ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মাস্টার দ্য সূর্যসেন হলে খাবারের মূল ক্যান্টিন বন্ধ রয়েছে ১৫ দিনের বেশি সময়। অন্যদিকে হলে শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত মেসটিতেও রয়েছে গ্যাসের নিরবিচ্ছিন্ন সংযোগের ঘাটতি। এতে খাবার নিয়ে বিপাকে রয়েছে হলটির আবাসিক শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, খাবারসহ নানা সংকট থাকলেও হলটিতে দেখা মিলছে না হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ মকবুল হোসেন ভূঁইয়ার। এতে বিক্ষুব্ধ একদল শিক্ষার্থী প্রাধ্যক্ষের মৃত্যুর সংবাদ দিয়ে পোস্টার বানিয়ে হলটির বিভিন্ন স্থানে সাঁটিয়ে দিয়েছে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা জন্ম দেয়। এর আগেও ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর অধ্যাপক মোহাম্মদ মকবুল হোসেন ভূঁইয়া ‘নিখোঁজ’ এমন একটি বিজ্ঞপ্তি ছেয়ে গিয়েছিল সারা ক্যাম্পাস।

হল প্রশাসনের সাথে কথা বলে জানা যায়, হলের ক্যান্টিন পরিচালনা করতো সাদ্দাম নামের একজন ব্যক্তি। গত ৪ অক্টোবর কাউকে কিছু না জানিয়ে হল থেকে উধাও হয়ে যান তিনি। পরে হল প্রশাসন থেকে খোঁজ নেওয়া হলে বোনের বিয়ের কথা বলে পাশ কেটে যান। পরবর্তী সময়ে পারিবারিক সমস্যার কথা বলে ক্যান্টিন পরিচালনায় অপরাগতা প্রকাশ করে আরেকজনের মাধ্যমে হল অফিসে চিঠি দেন।

গত ৪ অক্টোবর থেকে হলটির ক্যান্টিন বন্ধ রয়েছে। এতে খাবার নিয়ে সংকটের মধ্যে পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের। এদিকে কিছুদিন আগে ক্যান্টিনের বাইরেও খাবারের দোকানে পঁচা ও বাসি খাবার খাওয়ার অভিযোগে তসলিমের খাবারের দোকানটি বন্ধ করে দিয়েছিল হলটির বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। তবে পরবর্তী সময়ে এরকম পঁচা খাবার না দেওয়ার শর্তে মুচলেকা দিয়ে পুনরায় দোকানটি চালু হয়।

এ বিষয়ে হলটির আবাসিক ও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মাহিন আন নুর বলেন, ক্যান্টিন বন্ধ হওয়াতে খাবার নিয়ে টেনশন করতে হতো। একটু দেরিতে এলে খাবার শেষ হয়ে যায়। আবার দোকানেও খাবারের দাম তুলনামূলক বেশি। হল ক্যান্টিন চালু না হওয়া পর্যন্ত খাবারের জন্য আলাদা করে চিন্তা করতে হয় যে আমি খাবার পাবো কিনা।

এদিকে হলটিতে শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে পরিচালিত একটি মাত্র মেস 'নেক্সান'-এ গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ না থাকায় সঠিক সময়ে খাবার পাচ্ছেন না শিক্ষার্থীরা। একদিকে মূল ক্যান্টিন বন্ধ অন্যদিকে মেসে গ্যাসের সংযোগ না থাকায় শিক্ষার্থীদের অনেকেই ক্ষুদ্ধ।

ব্যবস্থাপনা বিভাগের স্নাতকোত্তর ও হলটির আবাসিক শিক্ষার্থী ওসমান সরোয়ার বলেন, ক্যান্টিন বন্ধ হয়েছে দু'সপ্তাহ হলো। এদিকে মেসের খাবার ঠিক সময়ে পাওয়া যায় না। দুপুরে সাড়ে ১২টার খাবার দেড়টার পরে শুরু হয়। আমরা নির্ধারিত সময়ের এক থেকে দেড় ঘণ্টা পরে খাবার পাচ্ছি। হলের এই সমস্যাগুলো প্রভোস্ট স্যার চাইলে দ্রুত সমাধান করে দিতে পারেন। উনাকে হলেও খুব একটা দেখা যায় না। আমরা বর্তমানে মূলত খাবার নিয়ে ব্যাপক ঝামেলায় আছি।

[caption id="attachment_376565" align="aligncenter" width="1237"] বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা হল প্রাধ্যক্ষের মৃত্যুর সংবাদ ছাপিয়ে হলের বিভিন্ন স্থানে সাঁটিয়ে দেয়[/caption]

এ বিষয়ে জানতে প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মকবুল হোসেন ভূঁইয়াকে হলে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

তবে ক্যান্টিনের সমস্যায় হল প্রশাসন কাজ করছে বলে জানান হলটির প্রন্সিপ্যাল এডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার মো. আব্দুল মোতালেব। তিনি বলেন, আমরা ক্যান্টিনের জন্য নতুন করে সার্কুলার দিয়েছি। আগামী মাসের ১ তারিখে ক্যান্টিন চালু হওয়ার কথা রয়েছে। আর মেসের গ্যাসের সমস্যা নিয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং অফিসকে চিঠি দিয়েছি। কাজগুলো প্রক্রিয়াধীন আছে।

সূর্যসেন হল প্রাধ্যক্ষের মৃত্যুর সংবাদ নিয়ে পোস্টার সাঁটানো এবং হল প্রাধ্যক্ষের নিয়মিত হলে না আসার ঘটনাটি নিয়ে প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি ও বিজয় একাত্তর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড আবদুল বাছির বলেন, হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের সাথে হল প্রাধ্যক্ষের মিথস্ক্রিয়াটা খুব জরুরি। সূর্যসেন হলে যে ঘটনাটা ঘটেছে এটা কাম্য না। এক্ষেত্রে দুপক্ষেরই কাজ করার সুযোগ ছিল বলে তিনি মনে করেন।

তিনি বলেন, প্রাধ্যক্ষ মকবুল হোসেন স্যার চাইলে বিভিন্ন ম্যাকানিজমের মাধ্যমে হলের সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারতেন। আবার শিক্ষার্থীরা চাইলে এমনটি না করে প্রাধ্যক্ষের সাথে সমঝোতায় আসতে পারতেন। শিক্ষার্থীরা চাইলে সরাসরি উপাচার্য স্যারের সাথে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করতে পারে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো তুলে ধরে মৃত্যুর সংবাদ দিয়ে পোস্টার সাঁটিয়ে ভিন্ন আঙ্গিকে হল প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা হয়েছে বলেও একাধিক শিক্ষার্থী জানান। তবে বিষয়টিকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঠিক মূল্যবোধের বহিঃপ্রকাশ নয় বলে মন্তব্য করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড মো আখতারুজ্জামান বলেন, যারা হল প্রাধ্যক্ষ, হলের আবাসিক শিক্ষক পদে থাকেন তবে তাদের নির্ধারিত দায়িত্বগুলো পালন করতে হবে এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা প্রত্যেকের জন্য কাজের নিয়মনীতি রেখেছি। তবে শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর পোস্টার লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এমন কাজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মূল্যবোধের পরিচায়ক নয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App