×

আন্তর্জাতিক

কংগ্রেস নেতৃত্ব বাইরে গেলেও রিমোট কি সোনিয়ার হাতেই?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২২, ০৯:১১ এএম

কংগ্রেস নেতৃত্ব বাইরে গেলেও রিমোট কি সোনিয়ার হাতেই?

ফাইল ছবি

এই প্রথম ভারতের রাজনীতির ইতিহাসে দেশটির অন্যতম ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের নেতৃত্ব থেকে বিদায় নিতে যাচ্ছে গান্ধী পরিবারকে। জন্মের পর থেকেই এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন নেহরু-গান্ধী পরিবারের কেউ না কেউ। মাঝে মাত্র দুবার দলের নেতৃত্ব এই পরিবারের বাইরে থাকলেও তা মূলত সাময়িক।

কংগ্রেসের ইতিহাসে দীর্ঘ সময় সভাপতির আসনে ছিলেন সোনিয়া গান্ধী। ৮,৩৮১ দিন বা প্রায় ২৩ বছর সভাপতির পদ ধরে রাখা ভারতের রাজনীতির ইতিহাসের অন্যরকম এক অধ্যায়, যা এই প্রাচীন দলটির ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময়। সোনিয়ার প্রথম মেয়াদের যাত্রা শুরু ১৯৯৮ এর ১৪ মার্চ, ২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল। এটি ৭,২১৫ দিনের দীর্ঘ যাত্রা। ১০ আগস্ট, ২০১৯ তিনি পার্টির অন্তর্বর্তী প্রধান হিসেবে ফিরে আসেন যখন ছেলে রাহুল গান্ধী পদত্যাগ করেন।

আকবর রোডে ভোটের উৎসব : রাজধানী নয়াদিল্লিসহ দেশের সর্বত্র কংগ্রেস সদর দপ্তরে গতকাল সোমবার সকাল ১০টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। কংগ্রেসের অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতি সোনিয়া গান্ধী গতকাল বেলা ১১টায় দিল্লির ২৪ আকবর রোডে দলের সদর দপ্তরে ভোট দেন। একইসঙ্গে ভোট দেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। এখানেই ভোট দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংসহ মোট ৭৫ জন প্রতিনিধি। আগামীকাল ১৯ অক্টোবর, বুধবার ভোটের ফলাফল ঘোষণা করা হতে পারে।

ভারত জোড়ো স্থগিত : রাহুল গান্ধীসহ অন্তত ৪০ জন কংগ্রেসের প্রতিনিধি যারা এখন ভারত জোড়ো যাত্রায় অংশ নিয়ে কর্ণাটকে রয়েছেন কর্ণাটকের বেলারি জেলায় বিশেষ ভোটকেন্দ্র ভোট দিয়েছেন। নির্বাচন উপলক্ষে গতকাল ভারত জোড়ো যাত্রা স্থগিত রাখা হয়।

কিউআর পরিচয়পত্র : এই প্রথম প্রত্যেক ভোটদাতাকে কিউআর কোডসহ পরিচয়পত্র দেয়া হয়েছে। এই পরিচয়পত্র ছাড়া কেউ ভোট দিতে পারেননি। নির্বাচন কমিটির দাবি, এতে ভোটদান স্বচ্ছ হয়েছে।

গোপন ব্যালটে ভোট : ৯ হাজারের কিছু বেশি প্রতিনিধি গোপন ব্যালটে ঠিক করবেন, দলের সভাপতি হিসেবে তারা কাকে বেছে নেবেন। ৮০ বছর বয়সি মল্লিকার্জুন খাড়গের সঙ্গে লড়াইয়ে আছেন ৬৬ বছরের শশী থারুর। তবে যিনিই জিতুন, দীর্ঘ ২৪ বছর পর তিনিই হবেন নেহরু-গান্ধী পরিবারের বাইরের কেউ। এ নির্বাচনে কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতাদের একটি বড় অংশ খাড়গেকে সমর্থন দিচ্ছেন। তাকে গান্ধী পরিবারের ‘অঘোষিত আনুষ্ঠানিক প্রার্থী’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। অপরদিকে থারুর নিজেকে পরিবর্তনের প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেয়া এক

সাক্ষাৎকারে খাড়গে সোনিয়াকে কংগ্রেসের একজন ‘মূল ব্যক্তি’ বলে বর্ণনা করেছেন। গান্ধীদের নির্দেশনা ও পরামর্শ ছাড়া কংগ্রেস কাজ করতে পারে না বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। নির্বাচিত হলে কংগ্রেসের উদয়পুরের চিন্তন শিবিরে ঘোষিত সাংগঠনিক সংস্কার বাস্তবায়নের প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন খাড়গে। এদিকে প্রতিনিধিদের কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আর ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ ছিল না বলে অভিযোগ করেছেন থারুর। তিনি জানিয়েছেন, নির্বাচনী প্রচারণাকালে বিভিন্ন রাজ্য পরিদর্শনের সময় বেশ কয়েকজন পিসিসি প্রধান ও জ্যেষ্ঠ নেতাদের সাক্ষাৎ পাননি তিনি, কিন্তু ওই নেতারাই আবার খাড়গের পরিদর্শনের সময় তাকে স্বাগত জানিয়ে তার প্রতি সমর্থন জানান।

ফলাফল : ভোট শেষ হওয়ার পর সব ভোট বাক্স ‘সিল’ করে দেয়া হবে। আজ মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে ভোট বাক্সগুলো দিল্লিতে আনা হবে। ২৪ আকবর রোডে কংগ্রেস সদর দপ্তরে ভোট গণনা শুরু হবে আগামীকাল বুধবার। এর আগে সব ভোট বাক্স থেকে ব্যালট পেপার বের করে মিশিয়ে দেয়া হবে, যাতে কে কাকে ভোট দিয়েছেন, তা গোপন থাকে।

কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটি জানিয়েছে, দেশজুড়ে মোট ৩৬টি ভোটকেন্দ্রে ৬৭টি বুথের প্রতিটি বুথে ২০০ জন ভোট দিয়েছেন।

গুডবাই বলার সময় আসেনি : কংগ্রেস কি পারবে নেহরু-গান্ধী প্রভাব বলয় থেকে বের হতে পারবে? রাহুল জানিয়েছিলেন, শুধু নিজেই নন, গান্ধী পরিবারের কেউ সভাপতি পদে দাঁড়াবেন না। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে বেশি সময় ভারতের ক্ষমতায় থাকা দলটির নেতৃত্বে বেশির ভাগ সময়ই গান্ধী পরিবারের কেউ না কেউ ছিলেন। ভারতজুড়ে কংগ্রেসের প্রাদেশিক কমিটির (পিসিসি) ৯ হাজারেরও বেশি প্রতিনিধি সোনিয়া গান্ধীর ‘উত্তরসূরি’ বেছে নিতে ভোট দেন। দেশটির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভোট দেন তারা।

সোনিয়া গান্ধী গতকাল ভোট দেয়ার পর সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই বিষয়টির জন্য আমি দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করে আছি।’ দীর্ঘ দুই দশকের বেশি সময় পর কংগ্রেসের সভাপতি পদে গান্ধী পরিবারের বাইরে কোনো নেতা বসতে চলেছেন।

নেহরু-গান্ধী পরিবার কংগ্রেসের জন্য কতটা অপরিহার্য সে কথাও বলেছেন শশী থারুর। শনিবার একটি সংবাদ সংস্থাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, গান্ধী পরিবার কংগ্রেসের সম্পদ। কংগ্রেস এবং গান্ধী পরিবার এক। গান্ধী পরিবারকে ‘গুডবাই’ বলার মতো বোকামি কোনো সভাপতিই করবেন না বলে দাবি করেন থারুর।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App